এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ .... আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন আলোকে (প্রথম পর্ব)
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আজ পয়লা বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। চৈত্র মাস ধরে চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র সেলই জানান দেয় বর্ষশেষের কথা। চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিনই পয়লা বৈশাখ। এই দিনেই সূর্য মীন রাশি থেকে বেরিয়ে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। নানান ভাবে পালিত হয় এই দিনটি।
পয়লা বৈশাখের দিন বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে। বড়দের প্রণাম করে শুরু হয় দিন। নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরতে যান অনেকে। ধুতি-পঞ্জাবী এবং শাড়ি নববর্ষের ঐতিহ্যের সঙ্গ জড়িত।
বাংলা নববর্ষ পালনের সূত্রপাত ঠিক কে করেছিলেন তা বলা খুবই কঠিন। কেউ কেউ বলেন, বকেয়া খাজনা আদায়ের জন্য বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলি খান পয়লা বৈশাখে ‘পুণ্যাহ’ প্রথা চালু করেছিলেন। সে দিন মুর্শিদাবাদে জমিদারদের ঢল নামত। জমা পড়ত খাজনা, নবাব দিতেন খেলাত বা শিরোপা। সেই শুরু নতুন বছরের হিসেব রাখা বা হালখাতার। সঙ্গে কিছু জমাও। যাতে বছরভর চলে বিকিকিনি। আগেকার দিনে পুরোটা লাল কাপড়ে মোড়া বিশেষ ধরনের খাতাতে রাখা হত হিসেবপত্র। সকালে মন্দিরে পুজো দিয়ে সেই খাতা বিগ্রহের পায়ে ছোঁয়ানো হত। বিকেলে দোকানে দোকানে হালখাতার অনুষ্ঠান।
কেউ কেউ বলেন, কবি ঈশ্বর গুপ্তই নাকি প্রথম ঘটা করে বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা করেছিলেন। কবি-সাংবাদিক ঈশ্বর গুপ্ত ছিলেন সে যুগের বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর সম্পাদক। তিনি বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক বার ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর একটি বিশেষ সংখ্যাই প্রকাশ করে ফেললেন এবং সেই উপলক্ষে আয়োজন করলেন এক মহা ভোজসভা। শহরের তাবড় তাবড় ‘বাবু’ নিমন্ত্রিত হলেন সেখানে। হয়তো এটাই বাঙালির নববর্ষ পালনের সূত্রপাত।
যাই হোক, সমারোহ করে হোক বা না হোক, বাংলায় নববর্ষ পালনের একটা রীতি যে ছিল তা জানা যায় যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির লেখা থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘কয়েক বৎসর হইতে পূর্ববঙ্গে ও কলিকাতায় কেহ কেহ পয়লা বৈশাখ নববর্ষোৎসব করিতেছে। পয়লা বৈশাখ বণিকেরা নতুন খাতা করে। তাহারা ক্রেতাদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়া ধার আদায় করে। ইহার সহিত সমাজের কোনও সম্পর্ক নাই।’
কৃষিভিত্তিক বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে বৈশাখ মাসের নববর্ষ উৎসবের কোনও যোগ নেই। তার কারণ হলো, ফসল ওঠবার আগে গ্রামবাংলার মানুষের হাতে উৎসব করবার মতো পয়সা কোথায়? শহরের বণিক ও ব্যবসাদার গোষ্ঠীই বাংলা-নববর্ষ উৎসবের হোতা। এই কথার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় কলকাতার পুরোনো বাড়িগুলোর আজকের নববর্ষ পালনের উৎসবের চেহারা দেখে।
জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর থেকে বাবুদের নববর্ষ পালন উৎসবে ভাটা পড়তে থাকে। কেবল হিন্দু ব্যবসায়ী পরিবারগুলির মধ্যে হালখাতা উপলক্ষ করে পুজোপাঠের অংশটুকুই বজায় থাকে মাত্র। কলকাতার আজকের বাবুরা আর রাত জেগে মজলিশ করেন না। বাড়িতে বড় জোর একটু ভালো খাওয়াদাওয়া। তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে বাবুদের নববর্ষ!
রচনাকাল : ১৫/৪/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।