আমি কোনো লেখক বা কবি নই, তবে লেখার চেষ্টা'টা করতাম ছোট থেকেই। এখন আর লেখা লিখি হয়না বললেই চলে, যদিও বা লিখি তাও বলতে গেলে সবটাই ওই ইংরেজি তে। (" বাংলা টা ঠিক আসেনা " এমন টা নয় কিন্তু )
আজ পয়লা বৈশাখ সন ১৪২৮ , অনেকেই সাল বলে থাকে কিন্তু সন টাই সঠিক। আজকের দিনটা জানতেও কিছু বাঙালি আছে যারা জানতে চায়, "আজ যেন কত তারিখ ?"।
লেখা লিখি'টা ছোট থেকে শুরু করলেও আজ আর ছোট নেই। মস্ত না হলেও ,বড়ো হয়ে গেছি। আর এই বড়ো হবার সাথে সাথেই হারিয়ে ফেলেছি ছোট বেলার অভ্যাস বা কর্মকাণ্ড , বাইরে থাকার কারনে অনেক কিছু থেকেই বিরত থাকতে হয় বাধ্য হয়ে।
বাঙালিয়ানা ভাব টা মনে কোথাও যেন একটা রয়েই যায় তাই তো এই বিশেষ দিন গুলো এলে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।
কত মজা হতো একটা নতুন জামা হবে , অনেক রকমের রান্না হবে , সাথে একটু পায়েস মিস্টি র জন্য দই বা রসগোল্লা।।। আঃ কি মজাটাই না হত।
"আম পাকে বৈশাখ এ" - তাই এই সময়টায় কাঁচা আমেই চালাতে হতো। কাঁচা আম থেঁতো করে তাতে একটু লঙ্কা গুঁড়ো আর লবন মিশিয়ে কলা পাতায় " corneto " করে খাবার অনুভূতি টাই আলাদা রকমের।
"নগরকীর্তন " - কিছু ব্রাম্ভণ ও বোষ্টম মিলে একটি দল তৈরী করে খোল , খুনঝুনি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গান গাইতে বের হতো , আমরাও কচি কাঁচা রা বেরিয়ে পড়তাম দল ভারী করতে।
"লিচু চোর " - না , বাবুদের তালপুকুরে নয় , বাবুদের বাগানে লিচু পারতে যেতাম (না বলেই অবশ্য , সেটা কে চুরি বলাই যায় )। এক দুবার ছুট ও লাগাতে হয়েছে পড়ি কি মরি করে।
"কালবৈশাখী " - এখন হলেও সেইভাবে আর মানুষ বুঝতে পারেনা , সকলের'ই পাকা বাড়ি। আমি দেখেছি মাটির বাড়ি আর মাথার উপর এ টিন এর চাল এর কি ঝুঁকি এই কালবৈশাখী'র দিনে। আর কিছু অসীম সাহসী মাসিমা , পিসিমা , কাকু কাকিমা --- যারা এই ঝড় এ গাছের পাতা ডাল কুড়িয়ে আনতে যেত উনানের জ্বালানি কাঠ করবে বলে।
আর এখন ,
এখন সবাই ইংরেজি তে গোনে বারোমাস ,
বাংলা গোনা লাটে উঠেছে , হচ্ছে সর্বনাশ।
হরির লুটের বাতাসা এখন অনলাইন এ মেলে
নববর্ষেও , " হ্যাপি নিউ ইয়ার" লেখে।
বাংলা গেছে ভুলে।
পাবো কোথায় ? মায়ের হাতের সুস্বাধু সেই রান্না ,
স্বাদ পেতে তাই ছুটে যাই "ভজহরি মান্না"।
রুই চিংড়ি ভর্তা ভাতে
আমরা যারা খাই
ব্যাঙ্গ করে লোকে বলে
মেছো-বাঙালি খাঁটি বাঙালি
জাতিতে সবাই।
অবশেষে ,
এসেছে বৈশাখ দ্বারে , ফিরিয়ে দিওনা তারে।
ভুলে গিয়ে মান- অভিমান কাছে টেনে নাও সবারে।।
সকল'কে জানাই শুভ নববর্ষের প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
........................ অঞ্জন ব্যানার্জী
রচনাকাল : ১৫/৪/২০২১
© কিশলয় এবং অঞ্জন ব্যানার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।