নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (চতুর্থ পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৯০৮ জন পড়েছেন।
Lakshman Bhandary
নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (চতুর্থ পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সন্তানদের মঙ্গল কামনার জন্য ব্রত ও উপবাস পালনের দিন আজ। আজ নীল ষষ্ঠী। সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপুজো অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল নীল ষষ্ঠীর পুজো। বাংলার তারিখ, ৩০ চৈত্র ১৪২৭। এখানে জানুন নীল পুজোর নিয়ম।

নীল ব্রত পালনের নিয়ম:
নীলষষ্ঠীর সারাদিন উপবাস করেন মায়েরা। সন্ধেবেলা শিবের জলাভিষেকের রীতি প্রচলিত আছে। এর পর বেলপাতা, ফুল ও ফল অর্পণ করতে হয়। আকন্দ ও অপরাজিতার মালা পরিয়ে সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য মোমবাতি জ্বালতে হয়। পুজোর পর উপবাস ভঙ্গ করা উচিত। 

নীলষষ্ঠীর সঙ্গে প্রচলিত লোককথা:
মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। অনেকে মনে করেন শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিবাহ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এদিন। প্রচলিত রয়েছে, দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগ করেন সতী। এর পর পুনরায় নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূত হন তিনি। মনে করা হয় রাজা তাঁকে কন্যার মতো বড় করে ফের মহাদেবের সঙ্গে বিয়ে দেন নীলাবতীর। বাসরঘরে নীলাবতী শিবকে মোহিত করেন। পরে মক্ষিকারূপ ধারণ ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুশোকে রাজা-রাণীও প্রাণ ত্যাগ করেন। অনেকের ধারণা শিব ও নীলাবতীর বিয়ে উপলক্ষে নীলপুজো অপর একটি প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, বহু কাল আগে এক ব্রাহ্মণ পরিবার বাস করত। কিন্তু তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই মারা যেত অথবা খুব বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারত না সেই সন্তান।

সন্তান শোকে আহত ওই ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী তীর্থে বেড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। নানান তীর্থ স্থান ঘুরতে ঘুরতে একদিন সরযূ নদীর তীরে এসে পৌঁছন তাঁরা। ব্রাহ্মণ সরযূ নদীতে ডুবে জীবন শেষ করার কথা বলেন ব্রাহ্মণীকে। বলেন,  ‘এই জলে ডুবেই আমাদের জীবন শেষ করি চলো। বংশ রক্ষার জন্য যখন একটি সন্তানও বেঁচে নেই, তখন আমরা বেঁচে থেকে কী করব? ’ 

ঠিক এমন সময় এক বৃদ্ধার রূপ ধরে সেখানে আবির্ভূত হন ষষ্ঠী। ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণীর উদ্দেশে বলেন, ‘বাছারা, তোমরা আর বেশি দূরে যেও না, না-হলে ডুবে মরবে।’ 

সেই বৃদ্ধাকে তখন নিজেদের সব দুঃখের কথা খুলে বলেন তাঁরা। সব শুনে ষষ্ঠী বলেন, ‘দোষ তো তোমাদেরই। সদ্যজাতের কান্না শুনে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তোমরা সব সময় আমাকে বলতে, বাবা! আপদ গেলেই বাঁচি। কিন্তু কখনও বলেছ কি, ষষ্ঠীর দাস বেঁচে থাক? সেই পাপেরই ফল ভোগ করছ তোমরা।’
 
ব্রাহ্মণী তখন সেই বৃদ্ধার পা ধরে বললেন, ‘কে তুমি, বল মা।’ বৃদ্ধা বললেন, ‘আমিই মা ষষ্ঠী। শোন, এই চৈত্র মাসে সন্ন্যাস করবি এবং সেই সঙ্গে শিবপুজো। সংক্রান্তির আগের দিন উপবাস করে নীলাবতীর পুজো করে নীলকন্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিবি। আর তারপর আমাকে প্রণাম করে জল খাবি। এই বলে নীল ষষ্ঠী।’ এর পরই সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান ষষ্ঠী।

এরপর ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী নিজের গ্রামে ফিরে যান। নীলের দিন ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করেন তাঁরা। কিছু দিন পর ষষ্ঠী দেবীর আশীর্বাদে ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নেয় তাঁদের ঘরে। নীল ষষ্ঠী ব্রতর মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর সকলে এই ব্রত পালন করতে শুরু করেন।

• নীলষষ্ঠীর কিছু বিশনীলের গানকে অষ্টক বলা হয়।
• নবদ্বীপের গাজন উৎসবের একটি অংশ হিসেবে বাসন্তী পুজোর দশমীর ভোরে শিবের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
• নিম বা বেল কাঠ দিয়ে নীলের মূর্তি তৈরি করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির আগেই নীলকে মণ্ডপ থেকে নামানো হয়। নীলপুজোর আগের দিন অধিবাস, অধিক রাত্রে হাজরা পুজো আয়োজিত হয়। হাজরা পুজো অর্থাৎ বিয়ে উপলক্ষে সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। হাজরা পুজোয় শিবের গণ বা ভূত-প্রেতদের পোড়া শোলের মাছ ভোগ দেওয়া হয়। পরদিন নীলপুজোর সময় নীলকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে নতুন লালশালুর কাপড় পরিয়ে কমপক্ষে সাতটি বাড়িতে ঘোরানো হয়।


রচনাকাল : ১৩/৪/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  Europe : 1  France : 1  Germany : 2  India : 44  Romania : 1  Russian Federat : 6  Taiwan : 1  Ukraine : 4  United States : 58  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  Europe : 1  France : 1  Germany : 2  
India : 44  Romania : 1  Russian Federat : 6  Taiwan : 1  
Ukraine : 4  United States : 58  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (চতুর্থ পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৭৬৯
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী