নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (সমাপ্তি পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫১০২৩ জন পড়েছেন।
Lakshman Bhandary
নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (সমাপ্তি পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
 
সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নীলসন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা পূজার সময়ে নীলকে সুসজ্জিত করে গীতিবাদ্য সহযোগে বাড়ি বাড়ি ঘোরান এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। নীলের গানকে বলা হয় অষ্টক গান।

আবার নীল ষষ্ঠীর দিনে সন্তানবতী হিন্দু নারীরা সারাদিন উপবাস রেখে সন্তানের আয়ু বৃদ্ধির কামনায় ‘নীল ষষ্ঠী’র ব্রত করে। নীলপূজার পর সন্ধ্যাবেলায় শিবমন্দিরে বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে জলগ্রহণ করে।প্রচলিত ধারণা হল- নীলের ব্রত নিষ্ঠামতো পালন করলে কোনওদিন সন্তানের অমঙ্গল হয় না।

এমন প্রচলিত ধারণা সৃষ্টির পিছনে উপাখ্যান বা কাহিনিও রয়েছে ৷ সেই উপাখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে – বহু কাল আগে এক ব্রাহ্মণ আর এক ব্রাহ্মণীর বড় দুঃখ কারণ তাঁদের সন্তান ভাগ্য খুব খারাপ। তাদের ছেলেমেয়ে জন্মালেই মারা যাচ্ছিল। ফলে নানা ব্রত উপবাস করলেও কোনও ফল হচ্ছিল না৷ তাই মনের দুঃখে তারা ঠিক করে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে একেবারে কাশীবাসী হয়ে যাবে।

সেই মতো নানা তীর্থ ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে কাশীতে এসে গঙ্গার ঘাটে বসে তাঁরা দু’জনে বিলাপ করছিলেন, তখন মা ষষ্ঠী বৃদ্ধার ছদ্মবেশে এসে তাঁদের কাছে জানতে চায় তাদের দুঃখ কিসের কাঁদছেন কেন? তখন ওই ব্রাহ্মণী তাদের দুঃখের কথা জানায়, সন্তান হলেও তারা মারা গিয়েছে। অনেক ব্রত পুজো ইত্যাদি করেও কিছু লাভ হয়নি৷ সব শুনে বৃদ্ধা তদারে জানান, শুধু বার-ব্রত করলেই হবে না।তাদের অহঙ্কারের জন্য এমন দশা। ভগবানে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং মন দিয়ে ভগবানকে ডাকতে হবে।

একথা শুনে ব্রাহ্মণী ওই বৃদ্ধার পায়ে পড়ে গিয়ে জানতে চান তিনি কে? তখন বৃদ্ধা জানান তিনিই মা ষষ্ঠী৷ আর মা ষষ্ঠী তখন বিধান দেন – চৈত্র মাসে সন্ন্যাস করতে এবং সেই সঙ্গে শিবপুজো করতে। সংক্রান্তির আগের দিন উপবাস করে নীলাবতীর পুজো করে নীলকন্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বালাতে বলেন। এরপর মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে জল খাওয়ার নির্দেশ দেন। এই সব কথা বলেই তিনি অদৃশ্য হয়ে যান।আর তারফলে শুরু হয় নীল ষষ্ঠী পুজো।


 
এদিকে নীল বা শিবের সাথে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়। ভিন্ন কাহিনি অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিবজায়া সতী পুনরায় সুন্দরী কন্যারূপে নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূত হন। রাজা তাঁকে নিজ কন্যারূপে লালন-পালন করে শিবের সাথে বিয়ে দেন। বাসর ঘরে নীলাবতী শিবকে মোহিত করেন এবং পরে মক্ষিপারূপ ধরে ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন; রাজা-রাণীও শোকে প্রাণবিসর্জন দেন। নীলপূজা শিব ও নীলাবতীরই বিবাহ-অনুষ্ঠানের স্মারক।

নিম বা বেল কাঠ থেকে নীলের মূর্তি তৈরি হয়। চৈত্রসংক্রান্তির বেশ আগেই নীলকে মণ্ডপ থেকে নীচে নামানো হয়। নীলপূজার আগের দিন অধিবাস; অধিক রাত্রে হয় হাজরা পূজা অর্থাৎ বিয়ে উপলক্ষে সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ করা। হাজরা পূজায় শিবের চেলা বা ভূত-প্রেতের দেবতাকে পোড়া শোল মাছের ভোগ দেওয়া হয়। পরদিন নীলপূজার সময় নীলকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে নতুন লালশালু কাপড় পরিয়ে অন্ততপক্ষে সাতটি বাড়িতে নীলকে ঘোরানো হয়।

নীলসন্ন্যাসীরা একইরকম লাল কাপড় পরে পাগড়ি মাথায়, গলায় রুদ্রাক্ষমালা ও হাতে ত্রিশূল নিয়ে নীলকে সঙ্গে করে এই মিছিল করেন। এদের দলপতিকে বলা হয় বালা। সাথে থাকে ঢাক-ঢোল, বাঁশী বাজনদারের দল এবং কাল্পনিক শিব-দুর্গার সাজে সঙেরা। গৃহস্থ মহিলারা উঠানে আল্পনা দিয়ে নীলকে আহ্বান করে বরাসনে বসিয়ে তাঁর মাথায় তেলসিঁদুর পরিয়ে দেন।


 
এরপর নীলের গান শুরু হয়৷ এই সব গানে থাকে সংসারী হর-পার্বতীর কথা, শিবের কৃষিকাজ, গৌরীর শাঁখা পরা প্রভৃতি এবং ভিখারি শিবের সঙ্গে অন্নপূর্ণা শিবানীর দ্বান্দ্বিক সহাবস্থানের কাহিনি। গানের প্রথম অংশ দলপতি বালারা এবং পরবর্তী অংশ অন্য নীলসন্ন্যাসীরা গেয়ে থাকেন।গানের শেষে গৃহস্থরা সন্ন্যাসীদের চাল-পয়সা, ফল প্রভৃতি ভিক্ষাস্বরূপ দেয়।

রচনাকাল : ১৩/৪/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 5  Germany : 3  India : 207  Ireland : 4  Russian Federat : 5  Ukraine : 2  United States : 162  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 5  Germany : 3  India : 207  
Ireland : 4  Russian Federat : 5  Ukraine : 2  United States : 162  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (সমাপ্তি পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৪৬২৭৩
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী