নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা ও পৌরাণিক তথ্য (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নীলপুজো বা নীলষষ্ঠী হল বাংলার হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব, যা মূলত মহাদেব শিব ও দুর্গার বিয়ে নামে পরিচিত। এয়ো স্ত্রীয়েরা নিজের সন্তানের মঙ্গল কামনায় নীরোগ সুস্থ জীবন কামনা করে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে ৷ সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এই নীল ষষ্ঠী হঠাৎ করেই শুরু হয় না ৷ এর নেপথ্যে রয়েছে এক গল্পও ৷ যা পুরাকাল থেকে জনপ্রিয় ঘরে ঘরে ৷ তা কী সেই গল্প?
পুরাকালে এক বামুন আর বামুনী ছিল। যারা অতি ভক্তি করে সমস্ত বার-ব্রত পালন করতো, কিন্তু তবুও তাদের ছেলে মেয়ে হয়েও বেশিদিন বাঁচত না । একদিন কাশীতে গঙ্গায় দুজনে স্নান করে উঠে ঘাটের ওপর বসে মনের দুঃখে দুজনে কাঁদতে লাগল। তাই দেখে মা ষষ্ঠী বুড়ি বামনীর বেশ ধরে এসে তাদের জিজ্ঞেস করেন, “তোরা কাঁদছিস কেন?”
বামুনী তার দুঃখের কথা জানালে মা ষষ্ঠী জিজ্ঞাসা করলেন, “তোরা কি নীল ষষ্ঠী করেছিস?” বামনী বলল, “সে কি মা? কই ও ব্রত তো আমরা জানি না।” তখন মা ষষ্ঠী বললেন, “সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস করে শিব পুজো করবে, তারপর সংক্রান্তির আগের দিন, সমস্ত দিন উপোষ করে সন্ধে নাগাদ নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিয়ে, মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে তবে জল খাবে। ঐ দিনকে ষষ্ঠীর দিন বলে।
যারা নীলষষ্ঠী করে তাদের ছেলে মেয়ে কখনও অল্প বয়সে মরে না।” এই কথা বলে মা ষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
তারপর বামুন-বামনী দেশে ফিরে গিয়ে খুব ভাল করে নীল ষষ্ঠীর পুজো আরম্ভ করল। এরপর তাদের যতগুলো ছেলেমেয়ে হল,সবাই দিব্যি বেঁচে রইল। এভাবেই শুরু হল নীল ষষ্ঠী ৷
রচনাকাল : ১২/৪/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।