অধরা গন্তব্য
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : দেবজিৎ কুণ্ডু
দেশ : India ,

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২১ , এপ্রিল
প্রকাশিত ৯ টি লেখনী ২১ টি দেশ ব্যাপী ২৬৪৮ জন পড়েছেন।
মোবাইলের দৌলতে নতুন অজানা বন্ধু আজ কাছের হয়েছে, আজ দূরকে অনেক নিকট করেছে, কিন্তু পুরানো দিনগুলোর স্মৃতি মলিন করে দিয়েছে।কালকের পর হঠাৎই আজ এলো  মেলো করে পুরানো দিনের কিছু কথা আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিলো...কি বলতে চাইছি,কিছু বোঝা গেল না তো? ভাবছেন এ আবার কি? সেই জটায়ু ভাষায় “চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ আর রুমালের মা"। তাহলে খুলেই বলা যাক সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাটি।

একে ইয়ার এন্ডিং তার উপর লক ডাউনে জমে থাকা বিলগুলো চেকিং করে এন্টি করতে করতে বেশ অনেকটাই দেরী হয়ে গেছিল ; তাই অফিসের কাজ শেষ করে কাল যখন বিবাদি বাগ প্রায় ফাঁকা মিনি বাস স্ট্যান্ড পৌছলাম তখন দেখলাম একটাই বাস দাঁড়িয়ে আছে! যদিও বাসটার কন্ট্রাক্টর বলল, সিঁথির মোর অবধি যাবে, তারপর নয় হেঁটে অথবা অটোতে করে আমাকে ডানলপ পৌছতে হবে । কিন্তু তাও কাল বিলম্ব না করে বাসে উঠে পড়লাম।বাসের ভেতরটা আধা অন্ধকার, আমারই মতো অফিস ফেরতা দু একজন ইতি উতি বসে আছে। আমিও কানে ইয়ার ফোনটা গুঁজে  একটা জানলার ধারে পছন্দ মতো একটা ফাঁকা সিটে বসলাম।কিশোর কুমারের গান,আধো অন্ধকার,তার সাথে সারাদিনের অফিসের ক্লান্তিতে চোখটা বুজে এসেছিল| হঠাৎ চটক ভাঙলো কাঁধে আচমকা এক মৃদু হাতের ছোঁয়ায়...কে যেনো আমার নাম ধরে ডাকছে। 

অপরিচিত একজন আমার নাম ধরে ডাকায় একটু অবাকই হই। হারিয়ে যাওয়া মুখটা, চমকে দিয়ে বলে "বন্ধু কি খবর বল? কতোদিন দেখা হয় নি।" খানিক পরে ঠাওর করতে পারি, এতো আমাদের কলেজের সেই ফেমাস শুভ। শুভাশিষ দত্ত , ছোটখাট চেহারার ছেলেটি কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখি করে আসছে । প্রথম প্রথম বিষয়টা গোপনেই রেখে দিলেও পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে বিষয়টা প্রকাশ পায় , সবার সামনে আসে আর তারপর তো শুভ সোদপুরের একজন নামকরা কবিও হয়েছিল শুনেছিলাম। লোকাল কাগজ , ম্যাগাজিন গুলোতে তখন নিয়ম মাফিক তার কবিতা ছাপত , লোকাল কবি সম্মেলনেও দু একবার গেছে কিন্তু এতে নাকি তার মন একটুও ভরেনি , খিদেটা রয়েই গেছে । এগুলো তো ছোট ছোট পত্রিকা , বড় বড় ম্যাগাজিনে লেখা ছাপানোটাই আসল , কিন্তু প্রশ্ন হল তাদের কাছে কিভাবে পৌঁছাবে সে । এক সামান্য মধ্যবিত্ত সংসার তার। বাবা মারা যাওয়ার পর , পরিবারের দায়িত্ব তার ওপর এসে পড়েছে । এতে লেখালেখির দিকটায় বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছে এটা বলতে বাকি থাকেনা । সারাদিন বাগরি মার্কেটে দোকানের দায়িত্ব সেরে রাতে লেখার খাতায় দু কলম লিখতে তার মন একটুও চায় না। দিন দিন চোখের সামনে স্বপ্নগুলো জল হয়ে যেতে দেখা ছাড়া তার কিছুই করার নেই। 

অন্ধকারেও বেশ বুজতে পারলাম দু ফোঁটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লে সেগুলো চশমাটা মোছার অছিলায়, শুভ এই ভেবে হয়ত মুছে নিল যে , সবার সব স্বপ্ন জীবনে পূরণ হয় না। ভাবলে অবাক হতে হয়, যে একটা মানুষের বাইরের চেহারাটা বদলের সাথে সাথে সময় কেমন তাকে ভেতর থেকেও বদলে দেয়।তাকে কতটা অন্তঃসার শূন্য করে দেয়। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি দুরন্ত গতিতে বাস ছুটে চলেছে। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরও যেনো অতীতের স্মৃতির মতো পিছন দিকে ছুটে চলেছে আর অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। আর কিছু সময় পর আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবো। কিন্তু শুভকে দেখার পর থেকে মনে একটাই প্রশ্ন থেকে যায় সত্যিই কি আমরা সবাই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি ! শূণ্যতা নিয়ে নতুন নতুন ভাবনা অহর্নিশি সঙ্গী হয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের সাথে। যখন সকালে ধাক্কাধাক্কি করে পাবলিক বাসে উঠি তখনো সেই ভাবনা, আবার অভিজাত এলাকায় অভিজাত মানুষদের যখন হেঁটে যেতে দেখি তখনো সেই একই ভাবনা। বেশিরভাগ মানুষ নিজের অজান্তেই নিজেদের চারপাশে শূণ্যতা তৈরি করে ফেলে! এই ধ্রুব সত্যটা কি মানুষ সচেতন মনে খেয়াল করে! জীবনের স্বপ্ন পূরনের গন্তব্যটা অধরাই থেকে যায়।
রচনাকাল : ১০/৪/২০২১
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 1  Germany : 3  Hungary : 1  India : 74  Ireland : 5  Israel : 1  Russian Federat : 6  Saudi Arabia : 4  Ukraine : 3  
United States : 94  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 1  Germany : 3  Hungary : 1  
India : 74  Ireland : 5  Israel : 1  Russian Federat : 6  
Saudi Arabia : 4  Ukraine : 3  United States : 94  
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অধরা গন্তব্য by Debjit Kundu is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪১১৭৬
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী