কমলাদেবী বৃদ্ধাশ্রমের মন খারাপ করে এক কোণে বসে আছেন।
আজ দোল পূর্ণিমা, ওনার একমাত্র নাতির আজ জন্মদিন ।
আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে ওনার নাতির সাথে ওনার দেখা।
তখন নাতির বয়স পাঁচ বছর ।
প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় কমলাদেবীর বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো হত ।
নাতিটা বড্ড সিন্নি খেতে ভালোবাসতো আর কমলাদেবীর হাতের পায়েস ।
কর্মসূত্রে কমলাদেবীর একমাত্র ছেলেকে বিদেশ যাত্রা করতে হয় ।
তাই কমলাদেবী স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম।
আজ কুড়িটা বছর তাদের সাথে কোন সাক্ষাৎ নাই কমলাদেবীর ।
প্রতিবছর আজকের দিনে কমলাদেবীর মনটা খুব খারাপ থাকে ।
আজ তার অন্যথা হলো না ।
কমলাদেবী বৃদ্ধাশ্রমের এক কোণে বসে নাতির কথা ভাবছেন ।
ভাবছেন কত বড় নাতিটা হলো কে জানে ?
যদি কোনদিন ওনার নাতি বৃদ্ধাশ্রমের আসে তাহলে কি ওনাকে চিনতে পারবে ?
এইসব ভেবে মন খারাপ করছেন ।
প্রতিবছরের মতো এবারও পায়েস রান্না করেছেন নাতির জন্য ।
কমলাদেবীর মন খারাপ থেকে অন্যান্য সদস্যদেরও মন ভালো নেই ।
এমন সময় কিছু কম বয়সী ছেলেমেয়েরা আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
বৃদ্ধাদের সাথে হোলি খেলবে আর সময় কাটাবে বলে ।
কমলাদেবীকে সবাই ডাকতে আসে হোলি খেলবার জন্য।
কিন্তু কিছুতেই রাজি হলেন না।
একটা ছেলে এসে কমলাদেবীর পায়ে আবির দিয়ে বলল "হ্যাপি হোলি"।
ছেলেটার স্পর্শে কমলাদেবীর ভেতরটা হো হো করে উঠলো।
কমলাদেবী বলে উঠলেন "কে ভাই তুমি"?
ছেলেটা কিছু না বলে কমলাদেবীকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দিল ।
কমলাদেবীর এ যেন অন্য বসন্ত।
সারাদিন হইচই, নাচ-গান ,ফটো তোলা, খাওয়া-দাওয়া আরো কত কি।
কমলাদেবীর মনটা আনন্দে ভরে উঠলো ।
ওই ছেলেটা কমলাদেবীকে "ঠাম্মা আমার পায়েস কই" বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।
কমলাদেবী তার নাতিকে অকপটে চিনতে পারলেন।
নিজের হাতে পায়েস খাওয়ালেন ওনার নাতি কে।
ওনার নাতি ওনাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো তাদের সাথে বিদেশে ।
কিন্তু কমলাদেবী রাজি হলেন না এই বয়সে দেশ ছাড়তে ।
ওনার নাতি প্রতিশ্রুতি দিলো ওনার সাথে প্রতি বছর আজকের দিনে দেখা করতে আসবে ।
রচনাকাল : ১০/৪/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।