প্রিয় বাবু,
আজ বছর পাঁচেক পর তোকে চিঠি লিখছি।
জানি তোর কাছে এই চিঠি পৌঁছাবে না ।
তোকে আজ দেখলাম তোর বরের সাথে,
বেশ মানিয়েছে তোকে তোর নতুন মানুষের সাথে।
লাল শাড়ি, লাল টিপ, মাথাভর্তি সিঁদুর ।
বেশ মানিয়েছে আমার সেই কল্পনা র তুই টাকে ।
মনে আছে, পূজোতে বলতাম লাল শাড়ি পড়বি তুই ,
তুই পছন্দ করতিস নীল ।
কোনমতেই লাল শাড়ি পড়তিস না ।
তোর সেই রাক্ষসের নখ গুলো কি এখনো আছে?
কিছু বললেই রেগে গিয়ে নখ দিয়ে
আঁচড় কাটতিস কেমন আমার গালে ।
এখন কি নতুন মানুষটার গালে আঁচড় কাটিস ?
এখন কি তুই বকবকি আছিস?
বকবক করে আমার কান ঝালাপালা করতিস ।
দেখে মনে হলো তুই অনেক শান্ত হয়েগেছিস।
এখন তুই দিব্যি নতুন মানুষটার সাথে সংসারী হয়ে উঠেছিস ।
এখনো কি তোর হঠাৎ হঠাৎ ফুচকা খাবার ঝোঁক আছে?
আমাকে সন্ধ্যে হলেই বলতিস চল ফুচকা খাবো কলেজ মোড়ে ।
এখন কি নতুন মানুষটার কাছে ফুচকা খাবার ঝোঁক করিস ?
মনে আছে তোর,
কলেজে, গাছের তলায় বসে থাকতাম আমি তোর অপেক্ষায় ।
আর তুই পিছন দিকে পা টিপে টিপে পিঠের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তিস ।
এখন বুঝি নতুন মানুষটার পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়িস ?
এখনো কি তোর মাথার ব্যামোটা আছে?
কলেজ শেষে প্রতিদিন তোর মাথা ধরত ,
আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম।
এখন বুঝি নতুন মানুষটা হাত বুলিয়ে দেয় আমার মত ?
এখনো কি আগের মত বেলা 10 টায় ঘুম থেকে উঠিস?
সকালে টিউশনি থাকলে ফোন করে করে তোর ঘুম ভাঙা তাম মনে আছে?
এখন কি নতুন মানুষটা সকাল হবার আগেই বুঝি তোকে ডেকে দেয় ?
মনে আছে ,তোকে ভালোবেসে বলতাম বাবু আর তুই আমাকে বলতিস সোনু ।
এখন বুঝি নতুন মানুষটাকে সোনু বলে ডাকিস ?
এখনো কি তুই গভীর রাত পর্যন্ত অনলাইনে থাকিস?
আমি তোকে বকা দিতাম, কত তুই রাগ করতিস ।
এখন কি অনলাইনে থাকার জন্য নতুন মানুষটা বকা দেয়?
না, সময় পাস না অনলাইনে থাকতে?
মনে আছে, তোর ওই রাক্ষসী একটা নখএকদিন ভেঙে দিয়েছিলাম ।
সে কি তোর কান্না,
আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিলি পাঁচদিন ।
জানিস সেই পাঁচটা দিন তোকে ছাড়া
আমার থাকাটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল ।
আমি সে দিন কিছু খাইনি, রাতে ঘুমায়নি ।
কিন্তু দেখ আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর তোকে ছাড়া বেশ আছি ।
দিব্যি খাচ্ছি , দিব্যি ঘুমাচ্ছি।
আজ বছর পাঁচেক পর তোর সাথে আবার দেখা ।
অতীতটা সামনে চলে এলো ।
আমরা সমবয়সী ছিলাম, একই ক্লাসে পড়তাম ।
আমাদের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হল ।
আর তোর বিয়ে ঠিক হল , এক সরকারি চাকরি ওয়ালা ভদ্রলোকের সাথে ।
তখনও আমি ছাত্র ছিলাম ।
বেকার ছিলাম বলে , তুই তোর বাবাকে আমাদের ভালবাসার কথা বলতে পারিস নি ।
মনে আছে? তোর সাথে শেষ দেখা?
সন্ধ্যাবেলায় কলেজের সামনে আমরা মুখোমুখি ।
তোর হাতে তোর বিয়ের কার্ড ।
আমাকে কার্ড টা ধরিয়ে বললি
পারিস তো আমার বিয়েতে আসিস,
আর আমাকে ভুলে যাস, দেখবি আমার থেকেও তুই ভালো মেয়ে পাবি ।
আমি নির্বাক হয়ে তোর হাত থেকে কার্ডটা নিলাম ।
জানিস, সেই দিন সারারাত মাকে জড়িয়ে কান্না করেছিলাম । মা আমাকে কাছ ছাড়া করেনি।
যদি আমি কিচ্ছু করি।
কতদিন যে খাইনি, আর কত রাত যে ঘুমায় নি, তা ঠিক ছিল না ।
আস্তে আস্তে পাঁচটা বছর কেটে গেল ।
হঠাৎ তোর সাথে আবার দেখা।
কষ্টটা যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল।
এখন আমি সরকারি চাকরি করি ।
বাড়িতে আমার ও বিয়ের কথা চলছে ।
আমি যে কাউকে চাই না। আমি যে তোর সাথে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম ।
আমার জন্য কয়েকটা বছর তো অপেক্ষা করতে পারতিস ।
একবার আমাদের ভালোবাসার কথা
তোর বাবাকে বলতে তো পারতিস।
যাইহোক সেসব কথা ভেবে লাভ নেই ।
দেখে মনে হলো তুই বেশ সুখেই আছিস।
তোর সুখে আমি সুখী ।
ইতি,
তোর সোনু
রচনাকাল : ৮/৪/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।