ছেলেটা , সেই সন্ধ্যা বেলায়
আসছি বলে গেল ,
এখনো বাড়ি ফিরলো না।
বয়েস হয়েছে আমার ,
এই বয়সে চিন্তা নিতে আর পারি না।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হল,
বৌমা বলল , মা খেয়ে নাও,
প্রতিদিন খেয়ে নি,
আজ আর খেতে ইচছে হল না।
কে জানি , ছেলেটা খেলো কি না?
আজ যেন একটু বেশি চিন্তা হচ্ছে।
না খেয়ে শুয়ে পরলাম।
কিছুতেই ঘুম আসছে না।
এপাশ ওপাশ করছি।
পাশে শুয়ে নাতনি জড়িয়ে ধরে বলল,
ঠাম্মা চিন্তা করো না ,
বাবা ,ঠিক ফিরবে।
দেখলাম ,বৌমা আজ খুব অস্থির।
বার বার মোবাইলের দিকে দেখছে।
ছেলেটাকে বলেছিলাম , মন দিয়ে পড়াশোনা
করে শিক্ষক হ।
কিন্তু আমার কথা কে শুনে?
ছোটোবেলা থেকেই দমকলের প্রতি বড্ড ঝোঁক।
দমকলের ঐ লাল গাড়ি আর ঘণ্টাটা ওর বডড
ভালো লাগে।
বড় হয়ে সে দমকলে কাজ পেল।
আমারও খুব গর্ব হয় ছেলেকে নিয়ে।
আমার ছেলের কাজ আগুন নেভানো।
কিন্তু আজ বেশি ভয় হচ্ছে।
বুকের ভিতর টা কেমন যেন করছে ,
ছেলের মুখটা বার বার মনে পরছে।
ছেলেটা আমার খুবই সহজ সরল।
ছোটো বেলা থেকেই মাকে ছারা কিছু জানে না।
ছেলের সেই ছোটো বেলার কথা গুলো খুব মনে পরছে।
মনে করতে করতে চোখ দিয়ে জল এসে গেল।
একি?চোখ দিয়ে জল এলো কেন?
চোখের জল ফেলব না।
ছেলেটা কিজানি কি করছে ?
ভোর হয়ে এলো।
বৌমার মোবাইল বেজে উঠল।
আমি চিৎকার করে বলি ,
বৌমা ফোন টা তুলো।
দেখলাম কোনো সাড়া পেলাম না।
আমি আর নাতনি ছুটে গিয়ে দেখি ,
বৌমা জ্ঞান হারিয়েছে।
নাতনি মোবাইল নিয়ে জিঞ্জাসা করলো
কি হয়েছে?
কি বলল কে জানি ?
নাতনি আমার নিশ্চুপ ও নির্বাকহয়ে গেল।
জলের ছিটা দিয়ে বৌমার জ্ঞান ফিরালাম।
বৌমা যেন পাথর হয়ে গেছে।
বুঝতে পারছি না কি হয়েছে ?
সকাল হতে না হতেই আত্মীয়-স্বজনের ভিড়।
কেউ কিছু কেন আমাকে বলছে না?
কিছুপর নাতনি , বৌমাকে বলল
মা চলো বাবা আসছে।
শুনে আমি যাই হোক শান্তি পেলাম।
সারারাতের দুশ্চিন্তা ঘুচলো।
আমাকে সবাই ধরে ধরে দরজার
দিকে নিয়ে গেল।
দেখলাম খুব ভিড়।
এতো ভিড় কিসের?
স্বর্গরথে কাকে নিয়ে আসছে?
আমার খোকা কোথায়?
স্বর্গরথের ভিতরে সাদা ব্যান্ডেজ
করা ঐ মৃত দেহকে দেখিয়ে বললো
ঐতো তোমার খোকা।
কালকের রেল অফিসের লাগা আগুনে
তোমার খোকা দম বন্ধ হয়ে ঝলসে মারা গেছে।
খোকারে এএএ........................
আমার সাতরাজার ধন এক মানিক রে এ ... .........।
কত কষ্ট পেয়েছিস রে বাপ আমার।
বাপের আমার শেষবারের মতো
মুখটাও দেখতে পেলাম না আআআ ......।
ছেলেটা আমার এখনো বাড়ি ফিরল না।
রচনাকাল : ৮/৪/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।