দোল পূর্ণিমা ও হোলি (পৌরাণিক কথা ও কাহিনী) (দ্বিতীয় পর্ব )
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৬৯৭৮ জন পড়েছেন।
দোল পূর্ণিমা ও হোলি (পৌরাণিক কথা ও কাহিনী)
(দ্বিতীয় পর্ব ) 
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কোন উৎসব বা সংস্কৃতির সাথে আমরা পরিচিত সেই আদিম কাল থেকেই। এক এক প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাস করে আর সেই অনু্যায়ী অনেক আচার অনুষ্ঠান, নিয়ম কানুন মেনে চলে। কিছু কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুধুমাত্র সেই সব ধর্মের অনুসারীরাই পালন করে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা দেখতে পারে বা ইচ্ছা করলে সেই অনুষ্ঠানের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে। হোলি উৎসব তার মধ্যে একটি। হোলি উৎসবে সাধারণত রঙ বা আবির(এক ধরনের গুড়ো রং) নিয়ে একে অন্যের গাঁয়ে দিয়ে দেয়া হয়। ব্যপারটা অনেকটা রঙ দিয়ে খেলা আর কি।

স্কন্দপুরাণ গ্রন্থের ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ড থেকেও অক্ষত থেকে যায় আর ক্ষমতার অপব্যবহারে হোলিকার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, এই থেকেই হোলি কথাটির উৎপত্তি।

অন্যদিক বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দ করে। এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহাআনন্দে পরিণত হয়। দোলযাত্রা বা হোলি উৎসব সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলি মূলত দুই প্রকার: প্রথমটি দোলযাত্রার পূর্বদিন পালিত বহ্ন্যুৎসব হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া সংক্রান্ত, এবং দ্বিতীয়টি রাধা ও কৃষ্ণের দোললীলা বা ফাগুখেলা কেন্দ্রিক কাহিনী

শ্রী রাধা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে দোল খেলছেন শ্রী কৃষ্ণ

বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সহিত রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।

অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উদযাপনের ভিন্ন ব্যাখ্যা কিংবা এর সঙ্গে সংপৃক্ত লোককথার ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু উদযাপনের রীতি এক ।বাংলায় আমরা বলি ‘দোলযাত্রা’ আর পশ্চিম ও মধ্যভারতে ‘হোলি’,। রঙ উৎসবের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে । শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয় । পরের দিন রঙ খেলা । বাংলাতেও দোলের আগের দিন এইরকম হয় যদিও তার ব্যাপকতা কম।

দোলযাত্রা উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও রয়েছে। এই দিন সকাল থেকেই নারীপুরুষ নির্বিশেষে আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হয়। শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই চলে আসছে। দোলের পূর্বদিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয
বাঙালির হোলি বা দোলযাত্রা
যেহেতু উৎসবটি রং নিয়েই তাই কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে রঙের প্যাকেট একটি উল্লেখযোগ্য উপহার। এই উৎসবের তাৎপর্য একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে ভালো উপায় পছন্দের মানুষকে মিষ্টি মুখ করানো। হিন্দু ধর্মের কোনো কোনো গোত্র এই দিনে বিবাহিত মেয়েকে এবং মেয়ের জামাইকে নতুন কাপড় উপহার দেয়। হোলির আগের দিন শ্রীকৃষ্ণের পূজা করা হয়। তখন শুকনো রং ছিটানো হয়। কেউ কেউ হোলি না খেললেও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অথবা বাড়ির ছাদে উঠে উপভোগ করেন হোলি খেলা। অনেকে বিশ্বাস করে এই রঙ খেলার মাধ্যমে নিজেদের সব অহংকার, ক্রোধ যেনো শেষ হয়ে যায় এবং সকলে মিলেমিশে উপভোগ করে এই হোলি উৎসব বা দোল পূর্ণিমা।

রচনাকাল : ২৬/৩/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 8  Canada : 52  China : 6  Europe : 2  France : 2  Germany : 2  Hungary : 6  India : 360  Ireland : 4  Japan : 2  
Russian Federat : 7  Switzerland : 1  Ukraine : 2  United Kingdom : 2  United States : 286  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 8  Canada : 52  China : 6  Europe : 2  
France : 2  Germany : 2  Hungary : 6  India : 360  
Ireland : 4  Japan : 2  Russian Federat : 7  Switzerland : 1  
Ukraine : 2  United Kingdom : 2  United States : 286  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
দোল পূর্ণিমা ও হোলি (পৌরাণিক কথা ও কাহিনী) (দ্বিতীয় পর্ব ) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৭৩৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী