বিশ্ব ঘুম দিবস-2021 (ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে)
তথ্যসংগ্রহ কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
১৯ মার্চ, আজ ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে বা বিশ্ব ঘুম দিবস। সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ২০০৮ সাল থেকে‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিন’ বিশ্ব নিদ্রা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার এ দিনটি পালন করা হয়। এ দিনটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সুস্থ্যতার জন্য সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা এবং নিদ্রাহীনতা ও এর চিকিৎসা, নিবারণ, শিক্ষা জনসমক্ষে তুলে ধরা।
বিশ্ব ঘুম দিবস মূলত ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিনের অর্থায়নে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ইভেন্ট। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘নিয়মিত ঘুম: স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’।
গবেষণায় জানা যায়, কম পক্ষে বিশ্বের ১০০ মিলিয়ন মানুষের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। এর মধ্যে আমেরিকান ২২ মিলিয়ন মানুষ নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। গবেষণায় আরো জানা যায়, ছুটির দিনে দুই ঘণ্টা বেশি ঘুমালে দেহঘড়ি ৪৫ মিনিট বিলম্বিত করে। এর ফলে ছুটির দিনের আগের রাতে ঘুম কম হয়, এতে পরের দিনের কাজে পরিশ্রান্ত মনে হয়, শরীর ও মন কাজের উপযোগী থাকে না।
নিদ্রাহীনতার ফলে স্বাস্থ্যহানির হুমকিতে আছে বিশ্বের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ মানুষ! এ কারণে প্রতি রাতেই আট ঘণ্টা করে ঘুমানোর পরামর্শ দেন গবেষকরা। ছুটির দিন শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়ার জন্য ছয় থেকে আট মিনিট রোদে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। কারণ সূর্যের আলো দেহঘড়ি ঠিক রাখে। কম মাত্রার ভিটামিন ‘ডি’ এর কারণে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার ও অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস হচ্ছে এমন একটি রোগ, যার ফলে মানুষের হাড়ের ওজন ও ঘনত্ব কমে যায়। হাড়ের আকার বাড়ে কিন্তু এর মধ্যে বহু ছিদ্র সৃষ্টি হয়। এর ভঙ্গুরতাও বাড়ে।
গবেষণায় বলা হয়েছে ঘুমের নানা ইতিবাচক দিকের কথা। প্রতিদিন ঘুম ভালো হলে তার প্রভাব পরবর্তী জীবনে দারুণ পড়তে পারে। টেক্সাসের বেয়লর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড কগনিশন ল্যাবরেটরি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, মধ্যবয়সে ভালো ঘুম ভবিষ্যতের মানসিক প্রশান্তির জন্য দারুণ এক পুঁজি হিসেবে কাজ করে। মধ্যবয়স বলতে ত্রিশোর্ধ্ব সময়কে বোঝানো হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেন, ভালো ঘুমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির বেশ নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, মানসিক দুর্বলতাও তৈরি হয়। তাই শেষ বয়সে অনেকেরই অনিদ্রা সমস্যা দেখা দেয়। মধ্যবয়সে একজন মানুষ নিয়ম মেনে ঘুমালে তার সুফল বৃদ্ধ বয়সেও পেতে পারেন।
ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটির সদস্যরা প্রত্যেকেই ঘুম নিয়ে গবেষণা করেন। ঘুমের ওষুধ ও ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চালাচ্ছেন এরা। মানুষের শরীরে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করার জন্যই এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করা শুরু করেন তারা।
বেলা ১২টা বেজে আরও কিছুক্ষণ হলো। এতক্ষণে ঘুম থেকে বেশিরভাগ মানুষই উঠে গেছে। যারা এখনও ওঠেনি, তাদের ঘুমটা খুবএকটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সঠিক ঘুম শরীরের জন্য জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম দেহ ও মনকে চাঙ্গা রাখে; পরবর্তী দিনের কাজ করতে দেহকে প্রস্তুত করে।
তবে বয়সভেদে ঘুমের মাত্রার কিন্তু তারতম্য রয়েছে। সাধারণত শিশুদের একটু বেশি ঘুমাতে হয় প্রবীণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায়। বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন কোন মানুষের কতটুকু ঘুমানো জরুরি; এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শপত্র কী বলছে দেখে নেয়া যাক-
* ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের রাতে অন্তত ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঠিকঠাক ঘুমাতে পারলেও ওরা নিজেকে চালিয়ে নিতে পারে।
* ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের। তবে কারও কারও নিয়মিত ৭ ঘণ্টা ঘুমালেও চলতে পারে।
* মনে রাখা ভালো, বয়ঃসন্ধিকালে অনেকেরই প্রায় ১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ১১ ঘণ্টার চেয়ে বেশি ঘুমালে তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
* ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে কারও কারও নিয়মিত ৬ ঘণ্টা ঘুমেও সব ঠিকঠাক থাকতে পারে।
* ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের জন্য ঘুমানো প্রয়োজন ৭-৮ ঘণ্টা।
শিকাগোর লয়োলা ইউনিভার্সিটির লিডিয়া ডনকারলোস বলেন, ছুটির দিনে ঘুম পুষিয়ে নেওয়ার চিন্তা অনেকেই করেন। কিন্তু আসলে ‘বকেয়া ঘুম কখনোই পুষিয়ে নেয়া যায় না’।
রচনাকাল : ১৯/৩/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।