পুরাণের কথা ও কাহিনী (অষ্টম পরিচ্ছেদ)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
মহাভারতের নারী চরিত্র বলতে প্রথমেই দ্রৌপদীর নাম আসে৷দ্রৌপদী মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও মহাভারতে অনেক নারীই আছেন যাঁদের সাহসীকতার কথা আলাদা করে বলার মতো৷এঁদের মধ্যে অন্যতম নারী হলেন হলেন সত্যবতী৷
সত্যবতী চেদীরাজ উপরিচর বসু এবং শাপগ্রস্তা মৎস্যরূপিণী অপ্সরা অদ্রিকার কন্যা। সত্যবতীর গায়ে তীব্র মাছের গন্ধ থাকায় তাঁর আরেক নাম ‘মৎস্যগন্ধা’৷ এজন্য কেউ তার কাছে আসতে চাইত না। তাই পালকপিতা রাজা দেশ-এর নির্দেশে তিনি যমুনার বুকে নৌকা চালানো আর জেলেনীর কাজ করতে থাকেন।
একদিন ঋষি পরাশর সত্যবতীর নৌকায় উঠে তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। তিনি সত্যবতীর সঙ্গে মিলন প্রার্থনা করেন। লজ্জিতা সত্যবতী বলেন যে তিনি কুমারী। তাঁর কৌমার্য নষ্ট হলে সমাজ তাঁকে ত্যাগ করবে। তখন পরাশর সত্যবতীকে বলেন তার পুত্রলাভ হলেই তিনি আবার কুমারী হয়ে যাবেন। প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি সত্যবতী৷ তিনি বলেন, নদীবক্ষে প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাদের মিলিত হতে দেখে ফেলবে সবাই। তাছাড়া তিনি জেলেনি বলে তার দেহে মৎস্যের দুর্গন্ধ। কামার্ত পরাশর তখন নিজেদের চারদিকে কুয়াশার আবরণ সৃষ্টি করেন ও তার শরীরের দুর্গন্ধকে মৃগনাভির সৌরভে রূপান্তরিত করেন৷ যেজন্য তিনি ‘যোজনগন্ধা’ ও ‘গন্ধবতী’ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন: শনিবার ভুলেও এইগুলো কাউকে উপহার হিসেবে দেবেন না
পরাশরের জন্য নিজের দেহে সুগন্ধ ফিরে পাওয়ায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন সত্যবতী। নদী বক্ষে তারা মিলিত হলে সত্যবতীর গর্ভে ব্যাসদেবের জন্ম হয়। পরবর্তীতে রাজা শান্তনু তার সৌন্দর্য ও গায়ের সৌরভে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েন এবং দাশরাজের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেন৷
দাশ বলেন যদি তার কন্যার সন্তানেরা রাজা হন তবেই তিনি কন্যাদান করবেন। এজন্য শান্তনুর জ্যেষ্ঠপুত্র ভীষ্ম রাজা হননি। সত্যবতী শান্তনুর মাধ্যমে চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্যের জন্ম দেন৷ কিছুদিন পর সত্যবতী জানতে পারেন তাঁর ছেলেদের স্বল্প আয়ু৷
সত্যবতীর দুই পুত্রই বিবাহের পর কোনও উত্তরাধিকারী না-রেখেই মারা যান। কিন্তু বংশের উত্তরাধিকার না থাকলে তো সিংহাসন চিরদিনের জন্য ফাঁকা পরে থাকবে৷ উদ্বিগ্ন সত্যবতী তখন তার প্রথম পুত্র ব্যাসকে ডেকে পাঠান৷ তাঁকে নির্দেশ দেন ভ্রাতৃবধূদের গর্ভবতী করার জন্য৷ যার ফলে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্ম হয়, যারা কৌরব ও পাণ্ডবদের পিতা। সত্যবতীর এই সাহসীকতা মহাভারতে নজির হয়ে আছে৷ পান্ডুর মৃত্যুর পর ব্যাসের আশ্রমে তপস্যারত অবস্থায় মারা যান সত্যবতী।
রচনাকাল : ১৯/৩/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।