(পিউলের জন্য)
হাঁটা
রোজই লোকটাকে ও দেখতে পেত।ও টোটোয় উঠত।ওর ট্রেন ধরার তাড়া। তাড়া নিশ্চয়ই লোকটারও থাকবে।কিন্তু লোকটা পুরো রাস্তাটা হেঁটেই ফিরতো।ও পরে জেনেছিল লোকটা যে মিল থেকে বেরোতো সেখানে ভালো পোস্টে কাজ করে।তাছাড়া তার বাড়িও মোটেই কাছে নয়,অনেকটা দুরে।তবু কেন লোকটা অতটা পথ পায়ে হেঁটে ফিরতো তাও পায়ে অত সমস্যা নিয়ে জানার একটা কৌতুহল ওর থেকেই গিয়েছিল। সামনা সামনি যখন দেখেছিল বুঝেছিল বয়সও কম নয়। সরকারি কোনো জায়গায় থাকলে তদ্দিনে অবসর নিয়ে নিত সে।কথা বলতে গেলেও তার হাঁফ ধরে। কথায় কথায় মাথা ঘুরে যায়।তবু টোটো নিতে তার আপত্তি।এদিকে ওই রুটে অন্য কিছু চলেও না।ওর ইতিমধ্যে ট্রান্সফার হয়ে যায় অন্যত্র।লোকটার বিষয়টা মাথা থেকে একদম আউট হয়ে যায়।
অনেকদিন পর বাকি টাকা পয়সারই কোনো হিসেব-টিসেবের কারণে সেই রুটে গিয়ে ওর কোনো একটা টোটোয় চোখে পড়ে সেই লোকটার ছবি।যে টোটো চালাচ্ছিল তার সাথে লোকটার মুখের মিল ছিল বেশ।ও কৌতুহল বশতঃ জিজ্ঞেস করে ফেলে লোকটার সম্বন্ধে।টোটোওয়ালা জবাব দেয়,লোকটা ওর বাবা।কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত উত্তরে ওর কৌতুহল মেটে না। টোটোওয়ালা কি ওর মনের কথা শুনে ফেলে?কেননা ও বলতেই থাকে,’আমায় ইউনিয়ন থেকে টোটো চালাতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে বাবা অনেক প্রতিবাদ করেছিল…’
যাক এবার কোলাজগুলো তবু ও জুড়তে পারছিল।খালি একটা কাজ তবু বাকি থেকে যাওয়ায় ওর আক্ষেপ তবু রয়ে যায়। টোটোওয়ালার বাবাকে একটা প্রণাম। সেটা তো আর সম্ভব নয়।সেই বৃদ্ধ গত হয়েছে তাও মাস ছয়েক হল।
রচনাকাল : ১৫/৩/২০২১
© কিশলয় এবং প্রতীক মিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।