বিশ্ব নারী দিবসের কবিতা(দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আজ বিশ্ব নারী দিবস। নারীরা ফুলের মত সাজিয়ে তুলেছে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত । তাই আজ তাদের সম্মান জানিয়ে- ভালোবেসে উদযাপন করার একটি দিন। তবে একটি দিন কেবল প্রতীকী। নারীর অবদানকে উদযাপনের দিন সবসময় তবু প্রতি বছর ৮ইমার্চ দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে। এর পিছনে রয়েছে নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন মার্কিন সুতাকারখানার নারী শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবী ছিল সমান অধিকারের। মজুরি বৈষম্য,কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, অমানবিক কাজের পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেসেদিন পথে নেমেছিল তারা। ১৯০৮ সালে এই আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রথম নারী সমাবেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জার্মান নেত্রী ক্লারা জেটকিন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নারী সমাবেশে ১৭ টি দেশের ১০০ জন নারীপ্রতিনিধিদের সামনে ক্লারা প্রস্তাব করেছিলেন যেন প্রতিবছর ৮ই মার্চ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম অধিকারের দাবিতে ৮ই মার্চ দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ক্রমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সমাজতন্ত্রীরা এগিয়ে আসেন এই দিনটি পালনের সহায়ক দেশ হিসেবে।
আজকের দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় পারিবারিক, সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে বৈষম্যহীনভাবে নারীর মর্যাদা অনুভব করতে। ১৮৫৭ সালে শুরু হওয়া আন্দলোনের প্রতিশ্রুতিতে মূলত উঠে এসেছিল কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকারের কথা। এখনকার নারীরা সেই গতিকে নিয়ে পৌঁছে গেছে চাঁদে। কঠিনথেকে কঠিনতম পরিস্থিতিতে বিচক্ষণতার প্রমান দিয়ে চলেছে তারা প্রতিনিয়ত। শত প্রতিকূলতার বাঁধ ভেঙে হেসেছে বিজয়ীর হাসি। ভারতীয় ইতিহাসে জন্ম নিয়েছেন এমনঅগণিত মহীয়সীরা। ভারতের হোল্কার রাজ্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা মালহার রাও হোল্কা-র পুত্রবধূ থেকে রানী হয়ে ছিলেন অহল্যা বাঈ হোল্কার। দরিদ্র কৃষিজীবীর কন্যা থেকে ব্রিটিশ শাসকদের সামনে রুখে দাঁড়ানো ইতিহাসের লোকমাতা রানী রাসমণির সাহসী ইতিকথার সাক্ষী রয়েছে আমাদের কলকতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র দলকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিত্তুর চেনাম্মা।
ভারতের প্রথম মহিলা সভাপতি হিসেবে ইউনাইটেড নেশন জেনারেল এসেমব্লিতে পদাধিকারী ছিলেন বিজয়া লক্ষ্মী পন্ডিত। আনন্দি গোপাল জোশি ছিলেন প্রথম মহিলা ডাক্তার এবং প্রথম মহিলা যিনি ইউনাইটেড স্টেট্ থেকে মেডিকেল ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ভারতের প্রথম এবং এখনো অব্দি একমাত্র মহিলা প্রধান মন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ভারতীয় ইতিহাসে আকাশ জয়ের প্রথম মহিলা পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন প্রেম মাথুর। ভারতের আধুনিক চিত্রকর্মের প্রথম মহিলা রূপকার ছিলেন অমৃতা শের-গিল যাকে ভারতেরফ্রিডা কাহলো নামেও জানা যায়। অসীমা চ্যাটার্জি ছিলেন ভারতের অন্যতম মহিলা বিজ্ঞানী, যিনি ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ভারত এবং এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু আরতি সাহা যিনি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। প্রথম গজল সম্রাজ্ঞী ছিলেন বেগম আখতার যিনি নিজের রচনা আর কম্পোজিশনে সমৃদ্ধ করেছেন ভারতীয় সংগীত ভান্ডারকে। শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী নারী ব্যক্তিত্ব ভারতের প্রথম মহাকাশচারী প্রয়াত কল্পনা চাওলা। এমন নানা মহীয়সীর হীরকগাথা ছড়িয়ে আছে ভারতের ইতিহাসে যাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হয় আজকের নারীরা । আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা সেই সব নারীদের, যাদের দেখানো পথ দিয়ে আমরা আজকে এগিয়ে চলেছি|
বিশ্ব নারী দিবসের কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
সারা বিশ্বের কল্যাণকর যাহা কিছু মহীয়ান,
পুরুষের সাথে সাথে আছে নারীদের অবদান।
করিছে সংগ্রাম দেশহিতে অস্ত্র ধরি নিজহাতে,
সমান তালে যুঝিছে নারী পুরুষের সাথে সাথে।
গৃহকোণে বন্দী নয় তারা উঠিছে হিমালয় চূড়ে,
নারী জয়গান দিকে দিকে আজি সারা বিশ্বজুড়ে।
উঠিছে ভূধরে ভাসিছে সাগরে শূণ্যে উড়িছে বিমান,
করিছে সংগ্রাম শত্রুর সাথে নারীরা দাগিছে কামান।
শোর্যে বীর্যে জ্ঞান গরিমায় সর্বথা নারীর জয়,
জাগিছে অভয়াশক্তি মায়েরা নাহি ভয় নাহি ভয়।
এসোমা কল্যাণী জগত্জননী তুমি মা কল্যাণময়ী,
তুমি মা শক্তি মায়ের জাতি হও মাগো বিশ্বজয়ী।
কবিতার পাতায় কবি আমি গাই রমণীর জয়গান,
বিশ্ব নারী দিবসে জানাই তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান।
রচনাকাল : ১৪/৩/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।