শীতের খুব সকালে আমাদের বারান্দায় প্রায় রোজই দু-একফালি রোদ এসে পড়তো।
আমরা ভাই-বোন মিলে সকাল থেকে উঠেই রোদের জন্য ছোটাছুটি শুরু করতাম। সেদিন সে এক অন্য শীতের ভোর। আমরা উনুনের পাশে মায়ের কোল ঘেঁষে দুহাত ভরে উষ্ণতা কুড়োতাম মাকে জড়িয়ে ধরে। মা খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে নিতো। আমরা পরে উঠতাম।
মায়ের চুল থেকে ঝরে পরতো টুপটাপ করে পৌষের ভোর। যেদিন রোদ উঠতনা, সেদিন মা'র শাড়ির আঁচল জুড়ে রোদ ফুটে থাকতো। আমরা সেই রোদ মেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠতাম। মা'র সারা শরীর জুড়ে নতুন ফসলের সুবাস ছড়িয়ে থাকতো। ধানের গোলা, তুলসীতলা জুড়ে মায়ের স্নিগ্ধ হাসি আঙ্গুল ছুঁয়ে মাধবীলতার মত ফুটে উঠতো আল্পনা হয়ে। বাড়ীর উঠোন, মায়ের সুনিপুন হাতের কারুকার্যে সেজে উঠতো নিকানো মাটির গন্ধে। মা বলত, যেদিন আমি থাকবো না এখানে শুয়ে দেখিস,ঠিক আমার শরীরের গন্ধ পাবি। খুব কষ্ট করে এই বাড়ি, এই উঠোন, এই সংসার গড়ে তুলেছি বাবা। আমরা দুচোখ ভরে সকালের আলো মেখে নিতাম।
এখনো পৌষের ভোর এসে দরজায় উঁকি মারে। বারান্দাজুড়ে রোদ খেলা করে... শুধু আমরা আর মায়ের আঁচলে কুয়াশার মতো জড়িয়ে থাকিনা। আসলে আমরা যত বড়ো হই ধীরে ধীরে মায়ের আঁচল ততটাই যেনো ছোট হয়ে আসে। হয়তো বা আমরা যত বড় হই,ততই মায়ের আঁচল থেকে দূরে সরে সরে আসি।
এখন আর সেভাবে আমায় শীত করেনা। করলেও মায়ের আঁচলে আমরা আর রোদ কুড়োতে যাইনা।।
রচনাকাল : ১১/৩/২০২১
© কিশলয় এবং সেখ মজাফ্ফর হোসেন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।