আমার মামা বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম।সেখানে আমার চার মামা,দুই মামি,দুই দাদা বৌদি ও পাঁচ ভাই এবং ভাইপোর সাথে সারাদিন খুব মজা করলাম। তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে বসে হইচই করে খাওয়া-দাওয়া করলাম। এই ভাবেই চার দিন কেটে গেল। একের পর এক আত্মীয় নিজেদের বাড়ি ফিরে গেল রইলাম শুধু আমি। পঞ্চম দিন সকালে মামার মেয়ের বাড়িতে এক আত্মীয়া মারা যায় । সেই খবর শুনে মামা বলল দেবু তুই তোর ভাইকে নিয়ে থাকতে পারবি? তাহলে আমারা ওই মৃত মানুষটাকে দেখতে যাব। তবে আজকে আর ফিরতে পারব না বলে মনে হয়। আমি মামাকে বললাম তোমরা যাও আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না তাছাড়া একটাই তো রাত ঠিক হাসি,ঠাট্টা করে কাটিয়ে দিতে পারব। এই বলে দুপুর দুটোর বাসে মামা-মামি চলে গেল। সন্ধ্যার সময় ওই বাড়ির দুই মামা ও দাদা-বৌদিদের সাথে রাত নয়টা পযর্ন্ত নানারকম গল্প,হাসি,তামাসা করে কাটালাম। ছোট মামা বলল আমি কি শুতে আসব তোর কাছে ?
আমি একটু হেসে বললাম না না আমাদের ঠিক হয়েগেছে কে কে এই বাড়িটা পাহারা দেব। যে যাই আসুক না কেন ঠিক তাকে মজা দেখিয়ে দেব এই কথা শুনে তারা সবাই হাসতে হাসতে চলে গেল। তারপর একে একে হাজির হল ওই বাড়ির মামার ছেলে অভি ও দাদার ছেলে আশিস এবং এই বাড়ির মামার ছেলে সুব্রত। তারপর বিছানায় শুয়ে শুরু হলো একের পর এক নানারকম গল্প বেশ মজাও লাগছিল শুনতে ঠিক তখনই অভি বলতে শুরু করল তাদের পাশের বাড়ির এক ব্যক্তির কথা। সেই ব্যক্তি কয়েক বছর আগে গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায়। অভি বলল আমি কয়েক বার তাকে দেখেছি তার চেহারাটা দেখতে খুবই ভয়ঙ্কর তার পরনে কিছুই নেই সে আবার মানুষের গলা নকলও করতে পারে । অভি আবারও বলল আমি একদিন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছি ঠিক তখনই কেউ যেন একটা বাচ্চা ছেলের মতো গলা করে আমাকে ডাকলো আমি পিছনে তাকাতেই সেই ব্যক্তি কে আবছা যেন দেখতে পেলাম। এবং তার হাসিটা আজও আমার চোখে ভাসে, এই কথা শুনতে শুনতে বাইরে থেকে কেমন যেন একটা শব্দ আমাদের কানে ভেসে এলো। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কথা বলা বন্ধ করলাম, তারপর অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলাম কিন্তুু আর কোনো শব্দ শোনা গেল না। আমি বললাম দেখ ঘরের ভিতরে শুয়ে পড়াই ভালো কারণ আমার মনটা কেমন যেন অস্থির লাগছে, এই কথা শুনেই অভি চিৎকার করে সেই মৃত ব্যক্তিটির নাম ধরে বলতে লাগল আয় চলে আয় তোকে আজ দেখে নেব, আমরা চারজন আছি। যদি তোর ক্ষমতা থাকে তাহলে দেরি না করে চলে আয় আমাদের কাছে। আমরা চারজন মিলে তোকে আজ উচিত শিক্ষা দেব, তুই আমাকে অনেক বার ভয় দেখিয়েছিস কিন্তুু আমি তোকে কিছুই করতে পারিনি। অভির এই কথা শুনে ভাই আর ভাইপো দুজনেই চিৎকার করে ওই একই কথা বলতে লাগলো। আমি অনেক বার থামাবার চেষ্টা করলাম কিন্তুু কে কার কথা শোনে। হঠাৎ আমার চোখে পড়লো পূর্ব দিকের ওই লেবু গাছটার পাশে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।
রাতটা ছিল পূর্ণিমা তাই চাঁদের আলোয় তাকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল, ঠিক অভি যেমনটি বলছিলো একদম হুবুহু সেই রকমই। তার পরনে কিছুই ছিল না। সে এক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে তার চোখ থেকে যেন আগুন বেড়িয়ে আসছে, সে দেখতে একেবারেই কুৎসিত। তাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল সে এক দৌড়ে এসে আমাদের চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। হঠাৎ কেমন যেন মুখে একটা শব্দ করতে করতে আমাদের দিকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসতে লাগল। দেখে শুনে আমরা তো একেবারেই চুপ হয়ে গেলাম,তারপর আমি আর ভাইপো কোনো শব্দ না করেই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছি ঠিক তখনই সুব্রত বলল দাদা ঘরে ঢুকে পড়লেই কি সমাধান হয়ে যাবে ও কি ঘরের দড়জা ভেঙে ঢুকতে পারবে না। এই কথা শুনে আমার গলার স্বর যেন একেবারে বন্ধই হয়ে গেল এই কথা শুনে ভাইপো তো কেঁদে ফেলল। ফিসফিস করে আমি বললাম সুব্রত ভাই চিৎকার করে লোক জড়ো কর, না হলে আর বাঁচতে পারবনা যে। সুব্রত চোখ বার করে বলল একদম চুপ, এই ভুলটা করলে হবে না তাহলে বিপদ আরো বাড়বে, আমি বললাম তাহলে কি করব? তখন সুব্রত বলল ঠাকুরের নাম কর।
আমি আবারও বললাম আমার গলা দিয়ে যে কথা বের হচ্ছে না। তখন ও বলল মনে মনে বল তাহলেই হবে। তারপর কিছুক্ষণ ঠাকুরের নাম করার পর সেই ব্যক্তি একটু পিছিয়ে দক্ষিণ দিকে মাঠের শেষে শ্মশানের দিকে রকেটের মতো দৌড়ে চলে গেল তার চলে যাওয়া দেখে আমাদের শরীরে যেন প্রাণ ফিরে এলো। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তাই এক কলসি জল খেয়েও আমাদের যেন আশা মিটল না। কিছুক্ষণের মধ্যে ভোর হয়ে এলো মামা ও দাদার গলার আওয়াজ শুনে আমাদের গলার স্বর বের হলো, আমরা সবাই একসঙ্গে বেঁচে থাকার আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। তবে মনের গভীরে একটা বিষয় বারবার আমাকে ভাবিয়ে তুলছিলো। ওটা কে ছিল? কিভাবে এত দ্রুত দৌড়ে গেল বা দিনের বেলায় সে কোথায় থাকে?
রচনাকাল : ১১/৩/২০২১
© কিশলয় এবং দীনবন্ধু দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।