অচিনপুরের রুদ্র প্রতাপ নামে এক রাজা ছিলেন । রাজা ছিলেন ভীষণ রাগী ও প্রচণ্ড শক্তিশালী।তিনি প্রতিদিন দুটো করে হরিণ শিকার করে ভক্ষণ করতেন। একদিন জঙ্গলে একটি মা হরিণকে তার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ঘাস খেতে বেরিয়েছে,ঠিক তখনই রাজাও শিকারের এসেছেন ওই জঙ্গলে। রাজা সঙ্গে সঙ্গেই বন্দুক দিয়ে গুলি করবে, ঠিক তখনই মন্ত্রী বললেন থামুন রাজা মশাই এটা আপনি কি করছেন। রাজা বললেন কেন?তখন মন্ত্রী বললেন আচ্ছা রাজা মশাই আপনি যে হরিণটিকে হত্যা করতে চাইছেন, তার যে একটা ছোট বাচ্চা রয়েছে তার কি হবে? বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে এখনো তার মায়ের দুধ পান করে। তবে আপনি যদি ওর মাকে হত্যা করেন তাহলে বাচ্চাটি কি খেয়ে বাঁচবে? বলুন তো রাজা মশাই? এই কথা শুনে রাজা প্রচণ্ড রেগে বললেন - তাহলে আমার শিকার কে হবে, আপনি? না আপনার পরিবার ? তার থেকে এটাই ভালো হবে আপনি চুপ থাকুন। এই বলে রাজা এক গুলিতেই মা হরিণটিকে হত্যা করে ফেলল। তারপর রাজা সেটাকে বাড়িতে নিয়ে ভক্ষণ করেন। অন্য দিকে মন্ত্রী মনের দুঃখে সেই বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে এসেও বাঁচাতে না পেরে, তিনি গভীর কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিছু দিন পর রাজা সভায় জিজ্ঞাসা করেন কি ব্যাপার মন্ত্রী মশাই সভায় আসছেন না কেন ? তখন সভার সদস্যরা বললেন সেই বাচ্চা হরিণটির কথা। এই দুঃখের কথা শুনে রাজা একটুকুও কষ্ট অনুভব করলেন না। কিছুদিন পর রাজার মহলে মা দূর্গার পূজোর সময় ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনাটা, অষ্টমীর দিন ছাগল বলির সময়, যখন ছাগলটাকে বলি দিচ্ছে, তখন রাজা দেখতে পেলেন ছাগল নয়, তার নিজের পুত্রকে বলি দেওয়া হচ্ছে। এই দেখে রাজা প্রচণ্ড চিৎকার করে জ্ঞান হারালেন। কিছুক্ষণ পর রাজার জ্ঞান ফিরে এলে তিনি আর সময় নষ্ট না করে, তিনি মন্ত্রীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। এবং পরে রাজা আদেশ দেন এই গ্রামে যেন জীব হত্যা না হয় , আর এই কথা যদি কেউ অমান্য করে তাহলে তাকে মৃত্যু দেওয়া হবে।
কয়েক মাস পরে রাজা রাজ্যভার তার পুত্রের হাতে তুলে দিয়ে, তিনি সন্ন্যাস নিয়ে বনে চলে যান। আর যাবার আগে বলে যানঃ
"জীব হত্যা মহাপাপ এই পাপে ক্ষমা নেই"।
রচনাকাল : ১০/৩/২০২১
© কিশলয় এবং দীনবন্ধু দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।