রাধা
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখক : দীনবন্ধু দাস
দেশ : India ,

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২১ , ফেব্রুয়ারী
প্রকাশিত ১৯ টি লেখনী ২০ টি দেশ ব্যাপী ৪৭৬৭ জন পড়েছেন।
মধুপুর নামে এক গ্রামে, বাস করতো একটি ছোটো মেয়ে রাধা ও তার মা বাবা। তার বাবা চাষবাস করতেন এবং মা সংসারের সব কাজকর্ম সামলাতেন এই ভাবেই তাদের জীবন অতিবাহিত হতে লাগল। রাধার মুখখানি ছিল খুব সুন্দর। রাধা ছিল তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তাই  সংসারে অর্থাভাব থাকলেও রাধাকে নিয়ে তারা খুব আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলেন। রাধাও আস্তে আস্তে বড়ো হতে লাগল। রাধার বাবা তখন তাকে তাদের গ্রামের এক ইস্কুলে ভর্তি করে দিলেন। রাধা পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল, সে নিয়মিত স্কুলে যেত। স্কুলের শিক্ষক - শিক্ষিকারা তাকে খুব ভালো বাসতেন। এই ভাবেই তাদের আনন্দের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে লাগল । হঠাৎ একদিন তার বাবা মাঠে কাজ করে বাড়ি ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনায় মারা যান, ফলে তাদের সংসারে নেমে আসে এক শোকের ছায়া। এই সময় রাধার বয়স ১৪- ১৫ বছর। রাধার মা তখন সংসারের অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে পাশের গ্রামে এক বাড়িতে কাজ নেন। এদিকে রাধাও পরের শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য টাকা লাগবে না হলে সে আর ভর্তি হতে পারবে না। কিন্তুু রাধার মা কাজ করে যে টাকা রোজগার করে তা দিয়ে তাদের সংসারই ঠিক মতো চলতো না তা আবার রাধার ভর্তি হওয়ার টাকা, এতো টাকা কোথায় পাবে তার মা। রাধার স্কুলের ফি দেওয়া তার মায়ের পক্ষে একেবারেই  সম্ভব হলো না। অভাবের তাড়নায় তাকে শেষ পযর্ন্ত পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হলো। প্রথম প্রথম মনে মনে রাধা খুব কষ্ট  পেলেও শেষ পযর্ন্ত সব কিছু ভাগ্যের দোহাই দিয়ে মেনে নিল।এই দিকে আশ্বিন মাসে দূর্গা পূজোও এসে গেল। রাধাদের পাড়াতেও একটা দূর্গা ঠাকুর আসে এবং খুব আনন্দের সাথে চারদিন ধরে পূজো চলে। তার মা অনেক কষ্ট করেও তার জন্য একটা জামাও কিনে দিতে পারল না , এই দুঃখে তার মা কাঁদতে লাগল  ঘরের ভিতরে। কিন্তুু  রাধা ছিল খুবই বুদ্ধিমতি সে হাসি মুখে তার মায়ের চোখের জল মুছিয়ে বলল মা কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন, এ বছর হয়নি তো কি হয়েছে  সামনের বছর হবে  এতে দুঃখ কিসের মা। আমার নতুন জামা না হওয়ার যে দুঃখ তার থেকেও অনেক দুঃখ হয়  তোমার চোখের জল দেখলে এটা আমি কখনই সহ্য করতে পারিনা মা। তুমি এবার একটু হাসো, তোমার মুখের একটু হাসি দেখলে আমি যেন স্বর্গ সুখ ফিরে পাই এই অভাবের সংসারে। এই ভাবেই কেটে গেল দূর্গা পূজো। তারপর কয়েকদিন পর এলো দীপাবলি কালী পূজো, এবারে তার মা অনেক কষ্টে একখানা জামা কিনে আনল রাধার জন্য। একটু কম দামি হলেও সেই জামা পেয়ে রাধা কি খুশিই না হলো। কালী পূজোর দিন রাধা সেই জামাটা পড়ে  তার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরোলো। সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরে এসে তার মা কে  দেখতে না পেয়ে রাধা কয়েক বার মা- মা বলে ডাকল কিন্তুু তার মায়ের কোন সাড়া পেল না, তাই সে ঘরের বাইরে গিয়ে মায়ের আসার অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে আছে।  ধীরে ধীরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এলো কিন্তুু তার মা ফিরে এলো না । রাধা তখন তার মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে পথে বেরিয়ে পরলো, তার মা যে বাড়িতে কাজ করতো সেই বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল। যখন রাধা গ্রামের শেষ প্রান্তে পৌছালো তখনও সে মায়ের দেখা পেল না। রাধা মনে মনে ভাবল আর তো চলেই এসেছি এই বড়ো আম বাগানটা পেরিয়ে গেলেই মা যে গ্রামে কাজ করে সেই গ্রামটা । একটু দ্রুত হাঁটলেই গভীর রাত নামার আগেই পৌঁছে যাব। তাই সময় নষ্ট না করে রাধা তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগল নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে। যখন সে আম বাগানের মাঝামাঝি গেল তখন রাধার গ্রামের দুষ্টু   জমিদারের দুষ্টু ছেলে  ও তার কয়েকজন বন্ধু কে সঙ্গে নিয়ে রাধাকে অনুসরণ করে। আর এই বনের মধ্যে এসে রাধার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।রাধা অনেক অনুরোধ করেও তাকে মুক্তি দিল না, রাধা নিজেকে বাঁচাবার অনেক চেষ্টা করলো কিন্তুু পারলো না। তারা সবাই মিলে রাধাকে চিল, শকূনের মতো ছিড়ে খেয়েও তাদের আশা মিটলো না। শেষ পযর্ন্ত রাধা কে হত্যা করে, বাগানের সব থেকে বড়ো আমগাছটার তলায় পুঁতে দিল। এদিকে গভীর রাতে রাধার মা, জমিদারের সব কাজ শেষ করে, বাড়ি ফিরে এসে রাধা কে না দেখতে পেয়ে প্রচুর কাঁদতে শুরু করলো। এবং গ্রামের মানুষ অনেক খুঁজেও রাধার দেখা পেল না । অন্য দিকে  রাধার মা কেঁদে পাগল হয়ে যাচ্ছে, গ্রামের মানুষ তাকে অনেক বুঝিয়েও তার  কান্না থামাতে পারলো না। এই ভাবেই কয়েক দিন কেটে গেল। তখন তার মা  মনের গভীর কষ্টে ঘরের মধ্যেই ঢুকে থাকলো, নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে। তার চোখে ঘুম হারিয়ে গেল। সে মুখে  শুধু বলতে থাকলো - রাধা রাধা রাধা কোথায় চলে গেলি আমায় ছেড়ে , আয় মা ফিরে আয় আমার কাছে । আমি যে একেবারেই একা হয়ে গেলাম মা। তুই যদি ফিরে না আসিস তাহলে আমি কিন্তুু সত্যি সত্যিই একদিন পাগল হয়ে যাবো।আস্তে আস্তে রাত বাড়তে থাকল, রাত যখন গভীর তখন রাধা আসলো তার মায়ের কাছে, জল ভরা চোখে রাধার মা বলল কোথায় ছিলিস তুই? তোর কি এই অভাগী মায়ের কথা একেবারের জন্যও মনে পড়েনি? এই বলে সে যখন রাধাকে জড়িয়ে ধরবে এমন সময় রাধা দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। চমকে গিয়ে রাধার মা বলল কি রে তুই ওখানে গেলি কেন? আয় আমার কাছে আয়। তখন রাধা বলল মা আমি আর বেঁচে নেই । একথা শোনা মাত্রই রাধার মা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। এবং জিজ্ঞাসা করলো কিভাবে এমন হলো? রাধা তখন সব কথা খুলে বলল তার মাকে। রাধা আরও বলল, যে আমার শরীর আছে, বাগানের সব থেকে বড়ো আমগাছটার  নীচে পোঁতা আছে। আমার মৃত্যুর অপরাধীদের শাস্তি চাই মা। তখন তার মা বলল প্রমাণ কিভাবে করব মা। রাধা তখন বলল ধস্তাধস্তির সময় জমিদারের ছেলের জামায় থাকা সোনার বোতাম আমি  ছিঁড়ে নিয়েছিলাম। সেটা এখনো আমার হাতের মুঠোর মধ্যে রয়েছে। তুমি সবাই কে একথা বলো এবং থানায় গিয়ে পুলিশের কাছেও একথা বলো। একথা শুনে পুলিশ কর্তা এসে রাধার দেহ উদ্ধার করে। এবং রাধার কথা মতো সোনার বোতাম তার হাতের মুঠোর মধ্যেই ছিল। সেটা দেখেই প্রমাণ হলো জমিদারের ছেলেই আসল দোষী। আদালতে তার  মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত শুনানি হল।তারপর রাধা তার মাকে বলল - এবার আমি শান্তি পেলাম মা। এবার আমার যাবার সময় হয়ে গেছে মা। একথা শুনে রাধার মা আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো। ভেঙে  মাকে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য, রাধা বলল মা, আমি যদি আবার এই পৃথিবীতে আসি তাহলে তোমার মেয়ে হয়েই জন্ম নেব। এবার আমি যাই , এবং আমি চাই তুমি আমাকে হাসিমুখে বিদায় দাও। এই বলে রাধা,না ফেরার দেশে চলে গেল।।।।।।
রচনাকাল : ১০/৩/২০২১
© কিশলয় এবং দীনবন্ধু দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  Europe : 1  France : 1  Germany : 3  Hungary : 1  India : 57  Ireland : 3  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 4  
Sweden : 1  Ukraine : 3  United States : 104  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  Europe : 1  France : 1  
Germany : 3  Hungary : 1  India : 57  Ireland : 3  
Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 4  Sweden : 1  Ukraine : 3  
United States : 104  
লেখক পরিচিতি -
                          দীনবন্ধু দাস পূর্ব বর্ধমান জেলার রামপুর গ্রামে ১০ই মে মাসে জন্মগ্রহণ করেন।

বর্তমানে উনি বাংলায় স্নাতক বিভাগে পাঠরত। উনি ওনার ঠাকুরদা 'শ্রী হারাধন দাস' এর কাছে সাহিত্যচর্চার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। 

এসবের পাশাপাশি বাগান তৈরি করা এবং গান-আঁকার প্রতি তার শখ আছে। 
                          
© কিশলয় এবং দীনবন্ধু দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
রাধা by Dinabandhu DAS is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৬৮০
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী