বসন্ত আসিল আজি .....নবরূপে রূপে সাজি
বসন্তের হৃদয় রাঙা মুহূর্ত (চতুর্থ পর্ব)
কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ঝরা পাতার দিন শেষে গাছের শাখায় শাখায় উঁকি দেবে আজ কচি পাতা। প্রকৃতি সাজবে নতুনরূপে। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা পলাশ, শিমূল, কাঞ্চন, পারিজাত, মাধবী, কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া জেগে উঠবে অলৌকিক স্পর্শে।
প্রকৃতিতে নৈসর্গিক প্রাণ ও রূপের আগমনে গুঞ্জন তুলবে ভ্রমর। গাছে-গাছে ছড়িয়ে পড়বে পলাশ আর শিমূলের রূপের আগুন। আজ কেবলই শুরু, পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে কুহু কুহু ডাকে হৃদয় উচাটন করে তুলবে বসন্তের দূত কোকিল। আকুল ব্যাকুল করে তুলবে বিরহী অন্তর।
নিসর্গের বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি হয়ে উঠবে বাঙ্ঘময়। বসন্ত কেবল একটি ঋতুই নয়। আমাদের নতুন করে জেগে উঠার, বেঁচে থাকার প্রেরণাও বটে।
সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ-ব্যর্থতা ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওবার দুর্নিবার প্রচেষ্টার বার্তা আমরা বসন্তে পেয়ে থাকি। বসন্ত এলেই বনের নিভৃত কোণে, মেঠোপথের ধারে কারও দেখার অপেক্ষা না করেই ফোটে কত নাম না-জানা ফুল।
আমাদের কবিতায় সংগীতে সুর মাধুরীতে বসন্ত ঋতু ভিন্ন ভাবেই ধরা দিয়েছে। ঋতুরাজ বসন্তের রুপ মাধুরী আর মানুষের জীবনে বসন্তের প্রভাব নিয়ে অসংখ্য গান রচিত হয়েছে। যা অন্য কোন ঋতুর ভাগ্যে এমনটা জোটেনি।
বসন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আন্দোলিত করে গেছে। তিনি বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গান-কবিতা। তার অমর সৃষ্টি-‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’
বাউল হৃদয় গেয়ে উঠে-‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে/ ময়ূরের মতো নাচেরে।’
প্রেমের ঋতু বসন্তে প্রেমিক মন আনমনে গেয়ে উঠবে- ‘শোন গো দখিনা হাওয়া/প্রেম করেছি আমি...।‘
বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বিশেষত কবিতা ও গানে ফাল্গুন আর বসন্তের রূপ চিত্রিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে নানা অনুষঙ্গে- অনুপ্রাস, উপমা, উৎপ্রেক্ষায়।
কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তের আগমনীতে গেয়েছেন- ‘বসন্ত এলো এলো এলো রে, পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে মুহু মুহু কুহু কুহু তানে।’ বাংলার ঘরে ঘরে উচ্চারিত একটি বাউল গান- ‘নারী হয় লজ্জাতে লাল, ফাল্গুনে লাল শিমূল বন, এ কোন রঙে রঙিন হলো বাউল মন... মন রে...’।
ভাটিবাংলার গান-‘বসন্ত বাতাসে...সই গো/ বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...।’
উদাসী মনে বসন্ত প্রেমের বার্তা নিয়ে আসে–‘কে তুমি বাঁশরিয়া মধু ভরা বসন্তে... বাঁশির সুরে পাগল করেছো।’
কিশোরী আনমনা প্রেমিকা তাঁর কাঙ্খিত হলুদ গাঁদা ফুলের অপেক্ষায় থেকে প্রেমিকের উদ্দেশ্যে গায়তে থাকে ‘হলুদ গাঁদার ফুল রাঙা ফুল এনে দে এনে দে নইলে বাঁধবো না, বাঁধবো না চুল।’
আমাদের জীবনে বসন্তের আগমনী বার্তায় দ্রোহ বিপ্লব আর যেকোন অপশক্তির বিরুদ্বে সোচ্ছার হওয়ার বার্তা দেয়। বসন্ত আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপর রং ছড়ায়।
রচনাকাল : ৭/৩/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।