বসন্ত আসিল আজি .....নবরূপে রূপে সাজি
বসন্তের হৃদয় রাঙা মুহূর্ত (তৃতীয় পর্ব)
কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
জরাজীর্ণ শীতের পর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রুপে। বাঙালি প্রাণ যখন বসন্ত বরণ করছে ঠিক তখন সম্ভাবনার এক নতুন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব বাঙালি। এ স্বপ্নকে চেতনায় ধারণ করেই প্রকৃতিতে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্ত অনন্ত সম্ভাবনার ঋতু। প্রেম, বিরহ, মিলন, দ্রোহ-সংগ্রাম, বিজয় আর অনিবার্য নিয়তির পথে নতুন স্বপ্নে পাড়ি দেওয়া এক অধ্যায়ের অনন্য নাম।
বসন্ত মানেই চোখ-ধাঁধানো ফুলের সমাহার। ফাল্গুন এলেই কেবলই উঁকি দেয় সে রাঙা সম্ভাবনার সমস্থ দ্বার। এদিনেই সকলকে স্মরণ করে দেয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সেই ভূবন বিখ্যাত পঙতিদ্বয় ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত।’
বসন্তকে নিয়ে বাঙালির কৌতূহলের শেষ নেই। বসন্তকে নিয়ে আবেগ তাড়িত বাঙালি- কবি- সাহিত্যিকরা লিখেছেন অনন্য অসাধারণ সব গান-কবিতা। বসন্তের গানে মাতোয়ারা বাঙালির কণ্ঠে উঠে বসন্ত বন্দনা-
‘বাতাসে বহিছে প্রেম নয়নে লাগিল নেশা/ কারা যে ডাকিল পিছু বসন্ত এসে গেছে/ মধুর অমৃত গানে জানা গেল সহজে / মরমে এসেছে বাণী বসন্ত এসে গেছে.....!
বসন্ত বন্দনায় মন আনমনে গেয়ে উঠে - ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান...আমার আপনহারা প্রাণ/ আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ....../ তোমার অশোকে কিং সুখে, অলক্ষে রঙ লাগলো আমার অকারণের সুখে..../ পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তোমার রজনী গন্ধায়/ রূপ সাগরের পাড়ের পানি উদাসী মন দায়।’
এছাড়া- ‘রঙ লাগালে বনে বনে, ঢেউ জাগালে সমীরণে, আজ ভুবনের দুয়ার খোলা, দোল দিয়েছে বনের দোলা’- প্রকৃতি আজ খুলে দেবে দখিন দুয়ার। বইবে ফাগুনের মৃদুমন্দ দখিনা হাওয়া।’
নতুন করে জেগে উঠা, নতুন আনন্দে-আশায় রঙিন হয়ে ওঠার আবাহনে সে হাওয়া গাইবে- ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল/ স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল, দ্বার খোল দ্বার খোল।’
এদিকে বসন্তের উন্মাদনায় বাতাসে কোকিলের কুহুতান। মাতাল হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, উতরোল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে, আমের মুকুলে, পল্লব মর্মরে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিচ্ছে শীতের রুক্ষ দিনের অবসান: ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে...।
‘বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফাগুনের ছোঁয়া, আগুনরাঙা বসন্তের মোহময় সুর। হিম-কুয়াশায় ঢাকা শীতের পর রুক্ষ মৃতপ্রায় নিসর্গে উষ্ণতার স্পর্শ দিয়ে জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে এনেছে বসন্ত।
বসন্তের প্রথম সকালে বাংলার চপলা নারীরা যেদিন বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে, কপালে টিপ, হাতে কাঁচের চুড়ি, পায়ে নূপুর, খোঁপায় ফুল জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়বে সেদিন চির যৌবনা বসন্ত প্রকৃতিতে স্পস্ট হয়ে উঠে। বসন্ত পোশাক পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা ছেলেরাও সঙ্গী হবে বসন্তবরণের বিভিন্ন আয়োজনে। দখিনা হাওয়া, মৌমাছির গুঞ্জরণ, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ।
প্রাকৃতিক রূপ-রসে, কোকিলের কুহুতান, আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির মৌতাতে বসন্তের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। বসন্তের রঙিনদোলা, উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি।
কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে/ ডালে ডালে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় রে/ আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।’
অবশ্যই পলাশ-শিমুলের অভাব ঘুচিয়ে দেয় হলুদ গাঁদা। বসন্ত মানেই সুন্দরের আহ্বান, জীবনের জয়গান। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। দখিনা হাওয়ার টানে ধূসর প্রকৃতি জাগবে প্রাণের সাড়ায়।
রচনাকাল : ৬/৩/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।