পুরাণের গল্প কথা ও কাহিনী (ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ)
তথ্যসংগ্রহ সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
হিন্দু ধর্মে ব্রহ্মা একটি বিখ্যাত নাম। তিনি সৃষ্টিকর্তা, সৃজন করেন। তিক্ত হলেও সত্য, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে জানা যায় ব্রহ্মা তার নিজ কন্যার সাথে অজাচারে লিপ্ত হয়েছিলেন।
বৃহদারণ্যক উপনিষদে প্রজাপতি তার শরীর হতে এক নারীকে উৎপন্ন করে তার সাথে মিলনের মাধ্যমে সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করেছিলেন-
“(কিন্তু) তিনি আনন্দ পাইলেন না; সেইজন্য কেহ একা থাকিয়া আনন্দ পায় না। তিনি দ্বিতীয় (সঙ্গী লাভ করিতে) চাহিলেন। স্ত্রী ও পুরুষ আলিঙ্গিত হইলে যে পরিমাণ হয়, তিনি ততখানিই ছিলেন। তিনি নিজের দেহকে দুইভাগে ভাগ করিলেন। এইভাবে পতি ও পত্নী হইল।এই জন্য যাজ্ঞবল্ক্য বলিয়াছেন- ‘প্রত্যেকে নিজে অর্ধবিদলের মত’ ; এই জন্য শূন্য স্থান স্ত্রী দ্বারা পূর্ণ হয়। তিনি সেই পত্নীতে মিথুনভাবে উপগত হইয়াছিলেন। তাহার ফলে মানুষের উৎপত্তি হইল।“(বৃহদারণ্যক উপনিষদ
“সেই স্ত্রী এইপ্রকার চিন্তা করিল- ‘আমাকে আপনা হইতে উৎপন্ন করিয়া ইনি কিভাবে আমাতে উপগত হইতেছেন? আমি অদৃশ্য হই।‘ সে গাভী হইল; অন্যজন (প্রজাপতি) বৃষ হইয়া তাহাতেই উপগত হইলেন; এইরূপে গরু উৎপন্ন হইল। একজন অশ্বা হইল, অপরজন অশ্ব হইলেন; একজন গর্দভী, অপরজন গর্দভ হইলেন।তিনি তাহাতে উপগত হইলেন। একজন অজা, অন্যজন অজ হইলেন। এইরূপে ছাগ ও মেষ উৎপন্ন হইল। পিপীলিকা পর্যন্ত যতপ্রকার মিথুন আছে, সেই সবই তিনি এইভাবে সৃষ্টি করিয়াছেন।“
পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণে প্রজাপতি তার কন্যা উষার সাথে মিলিত হতে চেয়েছিলেন-
“প্রজাপতি তার নিজকন্যা উষাকে অধিকার করতে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। তিনি তার বীজ হারিয়ে ফেলেছিলেন; সেটা পৃথিবীতে পড়ে গিয়েছিল; তিনি সেটাকে শক্তি দিলেন, (এই ভেবে): ‘আমার এটা যেন নষ্ট না হয়’। তিনি এটাকে সঠিকভাবে স্থাপন করলেন এবং এর থেকে গবাদি পশু তৈরি হল।
শতপথব্রাহ্মণেও প্রজাপতি তার কন্যা আকাশ অথবা উষার সাথে সহবাস করেছিলেন-
“১. প্রজাপতি তার কন্যা আকাশ অথবা উষার প্রতি কামার্ত হয়েছিলেন। ‘আমি কি তার সাথে মিলিত হব’ এই ভেবে তিনি তার সাথে মিলিত হলেন। ২. দেবতাদের চোখে এটা অবশ্যই পাপ ছিল। ‘নিজের মেয়ে, আমাদের বোনের প্রতি এমন আচরণ যে করে (সে পাপ করে)’, তারা ভাবলেন। ৩.তারপর দেবতারা পশুদের অধিপতি (রুদ্রকে) বললেন, “নিজের মেয়ের সাথে, আমাদের বোনের সাথে যে এমন আচরণ করে সে নিশ্চয় পাপ করে । বিদ্ধ কর তাকে রুদ্র, লক্ষ্য স্থির করে তাকে বিদ্ধ কর। তার অর্ধেক বীজ মাটিতে পড়েছিল…”
রচনাকাল : ২৮/২/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।