গোলাপের অনুভূতি
গল্প
কলমে। অনাদি মুখার্জি
লাল গোলাপ হলো নাকি সৌন্দর্য ও প্রেমের প্রতিক ! বহু গল্পের মধ্যেই নাকি বার বার ঘুরে ফিরে আসে সেই রক্ত গোলাপে কথা ! সময়ের সাথে সাথে প্রেমের ধরন বদলে গেলেও কিন্তু প্রেম নিবেদনের ভাষা হিসাবে লাল গোলাপের আবেদন চিরন্তন ! তাই তো আজ শুভ সেই লাল গোলাপ কিনে তার প্রিয় সাথি রিয়া হাতে দিয়ে তার মনের কথা বলবে ! রিয়ার সাথে তার অনেক দিনের সম্পর্ক ,সেই সম্পর্ক আসতে আসতে কত গভীরের চলে গেছে তবুও তারা দুই জনে মুখে কিছু বলেনি ! লাল গোলাপ যদি ভালোবাসা প্রতিক হয় তবে এই লাল গোলাপ দিয়ে রিয়ার মনের কথা জানতে হবে ,তার সাথে দেখা করে শুভ তার ভালোবাসার কথা জানাবে ! প্রেম হলো এমন একটা জিনিস যা চোখের ভাষায় মনের অনুভূতি গুলো বুঝে নিতে হয় এই সব অনুভূতি গুলো মুখে বলা যায় না ! সত্যিই তাদের ভালোবাসা ছিল এক অন্য ধরনের কিন্তু কি ভাবে সেই ভালোবাসা তাদের কে জড়িয়ে ফেললো এক অন্য অনুভূতি ছোঁয়ায় ! আজ খুব মনে পড়ে সেই দিনের কথা !
শুভ তখন কলেজের পড়ে ,একদিন কলেজের লাইব্রেরি তে বই আনতে গিয়েছিল শুভ ,সেই খানে রিয়ার সাথে তার দেখা ! প্রথমে রিয়ার বলে উঠলো আপনি কি এই কলেজের নতুন ? রিয়ার মুখে এই কথা শুনে শুভ বললো কি যে বলেন আমি নতুন কেন ? আপনি মনে হয় নতুন ! রিয়া বলে উঠলো না আমি নতুন নয় কিন্তু আপনাকে তো আগে দেখেনি ! শুভ বললো দেখবেন কি করে চোখে তো চশমা লাগিয়ে থাকলে ! রিয়া তখন তার চোখের চশমা খুলে বললো কিন্তু আমি আপনাকে চিনি আপনি তো সোমার দাদা তাই না ! শুভ অবাক হয়ে বললো আপনি সোমার বনধু ! হুম রিয়া বলে তার হাতে একটা বই দিয়ে বললো এই বইটা জন্যই আপনি লাইব্রেরী তে এসেছেন তাই না ! কি আশ্চর্য এই বইটা জন্য আমার আসা কি করে জানলেন শুভ জানতে চাইলো তখন ,রিয়া হেসে বললো আমি সব কিছুই বুঝতে পারি বলে রিয়া চলে গেলো ! তারপর থেকে তারা কলেজের দেখা হলে কথা হতো ,টিফিনের ফাঁকে একসাথে ফুচকা খেতো বা কখনো মাঠে বসে গল্প করে সময় কাটাতো ! একসময় শুভর কলেজের শিক্ষা শেষ করে সেই একটা ভালো কোম্পানি তে চাকরি পেলো ! সেই খানেও রিয়া কে দেখতে পেয়ে বলে আরে তুমি রিয়া ! রিয়া বলে হুম এই কোম্পানি তো আমার বাবার ,তাই আমি আছি বুঝেছো ! একদিন শুভর মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ হলো ,শুভর তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাজে গেল তখন ডাক্তার বললো তোমার মায়ের হার্টের অবস্থা ভালো নেই এখুনি অপারেশন দরকার ! এই অপারেশন করতে প্রায় লাখ টাকা লাগবে ! সেই সময় রিয়া তার কাছেই ছিল সব শুনে রিয়া বললো বেশি চিন্তা করো না আমি আছি যা টাকা লাগবে আমি দেব ! শুভর মায়ের অপারেশন হবার পরেও রিয়া সব সময় তার মায়ের দেখাশোনা করতে লাগলো ! শুভর মা ভালো হয়ে উঠলো এই সব দেখে একদিন শুভ রিয়াকে বললো সত্যিই তুমি যা করেছো তা কল্পনা করা যায় না ,তোমার টাকা টা কি ভাবে শোধ করবো তা ভাবছি ! রিয়া তখন তার মুখে উপর হাত টা চেপে ধরে বললো এই সব থাক না ! আমার খুব ভালো লেগেছে তোমাকে তাই তোমার কষ্ট দেখে আমি করলাম সব ! তখন শুভ রিয়ার হাত টা টেনে নিজের হাতের ওপর রেখে বললো তোমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া টা আমার ভুল ছিল না কারন আমি ও তোমাকে খুবই ভালোবাসি ! তাই দেখো বিধাতা মানুষ কে কিছু সমস্যায় ফেলে দেয় আর যে মানুষ টা তার পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করে দেয় আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমি জানি তুমি ও আমাকে সেই রকম ভাবে ভালোবাসো কিন্তু আমরা কেউ কাউকে বুঝতে দিইনি ! আমার জীবনের তোমার ভালোবাসা কতটা তা আজ বুঝলাম ভাবেনি কোনোদিন তোমার কাছে এত ভালোবাসা পাবো ! আজ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই যা কোনোদিন তোমাকে বলতে পারেনি ! যেদিন তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি সেই দিন মনের মধ্যেই একটা অনুভূতি পেয়েছি আজ তোমাকে বলে দিতে চাই ! রিয়ার তখন শুভর হাত খানি ছেড়ে বললো তোমার মুখ থেকে এই কথা গুলো শুনে আমার মন খুব আনন্দ হচছে কিন্তু এই ভাবে শুনতে চাই না ! আমার ইচছে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এনে দিয়ে আমাকে বলো শুভ কে বলে রিয়া চলে গেলো ! রিয়ার মুখে এই কথা শোনার পর ভাবলো আজ রোজ ডে ভালো দিন তাই সেই মনের আনন্দে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এনে রিয়ার হাতে দিয়ে বলবে আমি তোমাকে ভালোবাসি রিয়া !
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভ বাজার থেকে এসে রিয়া দিকে তাকিয়ে বললো দেখো তোমার জন্য কি এনেছি ! রিয়ার হাতে লাল গোলাপ দিয়ে বললো হ্যাপি রোজ ডে ,
রিয়া এক হাতে লাল গোলাপ নিয়ে অন্য হাতে শুভর হাত ধরে রইলো তার চোখে উপর চোখ রেখে ! একে অন্যের মাঝে হারিয়ে গেলো ! অনেক ক্ষণ পর বললো রিয়া সত্যিই গোলাপ ফুলের কি গুণ আমার অনুভূতি গুলো এই ফুলের মাঝে আছে , তখন শুভ এক হাতে গোলাপ নিয়ে অন্য হাত দিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো তুমি তো আমার গোলাপ তাই তো আমার সব অনুভূতি আজ প্রকাশ পেলো তোমার কাছে ! রিয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে !
রচনাকাল : ২৬/২/২০২১
© কিশলয় এবং অনাদি মুখার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।