সোনালী স্মৃতি
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : পূর্বালী চক্রবর্তী
দেশ : India , শহর : বারুইপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ৯৪ টি লেখনী ৩৫ টি দেশ ব্যাপী ৪৪৪৭২ জন পড়েছেন।
Purbali Chakrabarty

সে এক অদ্ভুত শান্ত, স্নিগ্ধ, শ্যামলিমা আর সরলতা দিয়ে ঘেরা পরিবেশ । সেখানে না ছিল বেশী যানবাহনের ঝঞ্ঝাট, না ছিল আধুনিকতার হাতছানি। তবে সেখানে নিশ্চয় ছিল পাখিদের কলকাকলি, ছিল মানুষের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক আর ছিল কচিকাঁচাদের হইচই। তখন  নিজেদের যানবাহন বলতে বেশি দেখা যেত সাইকেল, যা গ্রামের কাঁচা পাকা রাস্তা, পুকুরের ধার, ধানের ক্ষেত সবকিছুকে অতিক্রম করে  বেশীরভাগ সময়ই দৌড়তো কারোর জীবিকা নির্বাহের কারণে।  যানবাহনের মধ্যে আর ছিল অটো রিক্সা ই ভরসা।

মাঠে গৃহপালিত পশুরা যেমন গরু, ছাগল , কুকুর দের ছিল অবাধ বিচরণ।
গ্রামের পুকুরে হাঁস গুলো মনের সুখে ঘুরে বেড়াতো। গৃহস্থের ঘরে ঘরে বেড়াল গুলো ঘুরে বেড়াতো মাছ আর দুধের জন্য।মা ষষ্ঠীর বাহন বলে কথা! 

তখন চারদিকে শুধুই ছিল গাছ আর গাছ।পথের ধারে , মাঠের ধারে,পুকুর পাড়ে লম্বা লম্বা সব আম, কাঁঠাল ,সুপারি , নারকেল, খেজুর, তাল আরও কত কি..।তাছাড়া পেয়ারা , কলা গাছ, ফুলের গাছ এসব তো ছিলই। আর ছিল অনেক নাম না জানা বাহারি গাছ, পথের ধারে দেখা যেত তাদের ।

তখন গ্রামের ঘরগুলি বেশীরভাগ ই ছিল মাটির বা পাকা দেওয়াল  এবং মাথায় টালির চাল। তখন না ছিল এতো নিত্য নতুন ঝড়, না ছিল এতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়।এই সব ছোট্ট কাঁচা ঘরেই মানুষ দিব্য বাস করত বছরের পর বছর। প্রকৃতি দেবী তখন মনে হয় সুপ্রসন্ন ও সন্তুষ্ট ছিলেন গ্রামের পরিবেশে।

বর্ষাকালে জমত হাঁটুজল ।মাটির রাস্তা কাদা হয়ে যেত।পুকুর গুলো ভরে যেত জলে ।  তখন চারদিকে শোনা যেত ব্যাঙের ডাক। পুকুরের ধারে কত নতুন নতুন সাপের আনাগোনা লেগেই থাকত।প্রকৃতি  হতো আরও সবুজ।প্রকৃতি নতুন ভাবে সেজে উঠতো সেই সময়। 

গ্রীষ্মকালে  তেষ্টা মেটাত ডাবের জল। তৃষ্ণার্ত ও ক্লান্ত পথিক  অনেকসময় আশ্রয় নিত গাছের তলায় বা কোনো অপরিচিত গৃহস্থের বাড়ি। গৃহস্থও খুশি মনে অতিথির সেবা করত।এটাই বাংলার সংস্কৃতি। তখনকার দিনে বাঙালিরা  মনে   করতো
 "অতিথি নারায়ণ" । 

গ্রীষ্মের দুপুরে ফেরিওয়ালা রা যেত হাঁক দিয়ে।চতুর্দিকে তক্ষকের ডাক শোনা যেত গ্রীষ্মকালে। সন্ধ্যেবেলায় চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যেত।  গ্রামের মাঠে সারাদিনই বাচ্চা থেকে বড়ো সবার ছিল অবাধ প্রবেশ।

তখন সকালবেলায় ছোট বাচ্চারা বাড়ির দাদু, দিদা ,মা ,বাবা,আত্মীয় বা কোনো পাড়ার গুরুজনদের সাথে স্কুলে যেত। আর একটু বড় হলে তারা নিজেরাই বন্ধুদের হাত ধরে একসাথে যেত স্কুলে।

তখনকার সন্ধ্যেবেলায় প্রায়ই লোডশেডিং হতো। আর তা ছিল বেশ অনেক টা সময়ের জন্যই।তাই সেই অবসরেই বাড়ির বড়ো থেকে বাচ্চা সবাই মিলে চলতো আড্ডা ও গল্পো।

তখন মোবাইল ফোন ছিলনা।টেলিফোন ছিল মাত্র কয়েক জনের বাড়িতে। আর ছিল এস .টি. ডি  বুথ।এগুলোই ছিল মানুষের দূরদূরান্তের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের ভরসা।

তখন টিভি ছিলনা অনেক ঘরেই। যাদের ঘরে ছিল সেখানেই বসত আড্ডার আসর। ঘরে ঘরে সকাল সন্ধ্যে বাজত রেডিও, টেপ রেকর্ডার। আর ছিল সকালের খবরের কাগজ,  যা সবাই মিলে বসে পড়া ও আলোচনা করাই ছিল রেওয়াজ।

তখন ছাত্র ছাত্রী রা  অনেকসময় মাস্টার মশাই দের আর বাড়ির বড়দের  কাছে বকা বা পিটুনি  না খাবার  জন্য জোড়ে জোড়ে পড়া মুখস্থ করত।  তাদের কাছে শিক্ষক- শিক্ষিকারা  আর বাড়ির গুরুজন রা ছিল সর্বদা প্রণম্য ও সম্মানিত।

তখন  বাড়ির সামনের , রাস্তার ধারে কিংবা পাড়ার দোকানের বসার জায়গায় চলতো প্রতিবেশী দের সঙ্গে আড্ডা। গ্রামের মাঠে খেলা হলে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে থাকত তার অনেক দর্শক।

 মধ্যবিত্ত ঘরের কোনো বিশেষ পূজা পার্বণ, জন্মদিন, বা কোনো অনুষ্ঠানে রান্না  ও যাবতীয় জোগাড় করতো বাড়ির সদস্যরা এবং প্রতিবেশিরা সকলে মিলে। পাড়ার যে কোনো অনুষ্ঠান ছিল প্রতিবেশী দের সকলেরই অনুষ্ঠান।কেউ চাকরি বা ভালো রেজাল্ট করলে মিষ্টি বিলানো হতো পাড়ায়।তখন ছেলেমেয়েরা ছিল  শুধুই বাড়ির না, পাড়ারও।সবাই সবার উন্নতির জন্য চেষ্টা করতো ।কেউ ছিল না  অপরের প্রট প্রতি ঈর্ষাপ্রবন।

তখনকার দিনে অসুবিধাও অনেক ছিল। বড়ো স্কুল কলেজ ছিলনা, ছিলনা কাছাকাছি বড়ো চিকিৎসা কেন্দ্র, ছিল না যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম।মানুষের হাতে বেশি অর্থ ছিলনা। সাচ্ছন্দ্য ছিল না। কিন্তু  এমনই অনেক কিছু ছিল  যা বোধ হয় আধুনিক সমাজ অপেক্ষা  অনেকাংশে ঢের বেশি কিছু।

তখন শান্তি ছিল, আনন্দ ছিল, বেঁচে থাকার , লড়াই করার ,জীবনকে উপভোগ করার ইচ্ছা ছিল মানুষের মধ্যে। তাই এই দিনগুলো কখনোও ভোলার নয়।ভোলার নয় গ্রামবাংলার এই রূপ। সারাজীবন আমার মনে গেঁথে থাকবে এই স্মৃতিগুলি। এ ছিল আমার সোনালী ছেলেবেলা , ছিল সোনার গ্রাম বাংলা।
© পূর্বালি চক্রবর্তী
(কিশলয় এবং পূর্বালি চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত)  










রচনাকাল : ২০/২/২০২১
© কিশলয় এবং পূর্বালী চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 1  China : 6  France : 3  Germany : 1  Hungary : 1  India : 104  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 7  Sweden : 18  
Ukraine : 5  United Kingdom : 1  United States : 158  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 1  China : 6  France : 3  
Germany : 1  Hungary : 1  India : 104  Russian Federat : 5  
Saudi Arabia : 7  Sweden : 18  Ukraine : 5  United Kingdom : 1  
United States : 158  
লেখিকা পরিচিতি -
                          পূর্বালী চক্রবর্তী ১০ই জুন দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চার প্রতি বিশেষ আগ্রহী।তিনি নবীন লেখিকা রূপে ২০২০সালে প্রথম কিশলয় ই পত্রিকাতে আত্মপ্রকাশ করেন।বর্তমানে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালিখি করেন।এখনো পর্যন্ত তিনি  কিছু গল্প,কবিতা এবং প্রবন্ধ লিখেছেন । 
                          
© কিশলয় এবং পূর্বালী চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সোনালী স্মৃতি by Purbali Chakrabarty is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৭৪৯০২
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী