আবীর ও রেখা স্কুলের বন্ধু।যদিও আবীর শুধুমাত্র এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে আরও কিছুটা দৃঢ় করতে চেয়েছে অনেকবার।সে রেখাকে খুব ভালোবাসে। একথা অনেকবারই বলেছে রেখাকে।রেখার মতামত জানতেও চেষ্টা করেছে অনেকবার। আসলে রেখার যে অমত আছে তাও না তবে , সে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চায়না কোনসময়েই । আবীর যতবারই কথাটা বলে ,রেখা ততো বার ই কথাটা এড়িয়ে যায়। কিন্তু মনে মনে সেও আবীরকে খুব ভালোবাসে। আবীর মাঝে মধ্যে ভাবে রেখা তাকে পছন্দ করে, আবার কখনো মনে হয় পছন্দ করে না। দিনের পর দিন একই কথা বলতে বলতে হাল ছেড়ে দেয় সে।একটা সময় আবীর ভাবতে শুরু করে যে রেখা তাকে পছন্দ করে না । যাই হোক এভাবেই কাটলো বেশ কয়েকবছর। এখন তারা কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। আবীর বরাবরই মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট ছিল ।ক্লাস ছুটি করতো না।কিন্তু ইদানিং অনেকদিন ধরেই সে আর কলেজে আসছে না ।রেখা এখন আবীরের অনুপস্থিতি খুব অনুভব করে।সে বোধহয় এতদিনে বুঝতে পেরেছে যে তাকে আবিরের মতো ভালোবাসতে কেউ পারবে না এ জীবনে। আবীর এর কোনো খবর না পেয়ে তার খুব চিন্তা হতে লাগলো। তাই একদিন সে ঠিকানা জোগাড় করে আবিরের বাড়ি গেলো। সেখানে গিয়ে তার বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো । আবীর আর নেই।কোনো এক অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সে মারা গেছে । জাস্ট কিছুক্ষণ আগেই নাকি সে মারা গেছে।আবিরের মা কাঁদতে কাঁদতে বললো ছেলের ভালোবাসাই নাকি রেখাকে এখানে নিয়ে এসেছে শেষ বারের মত দেখা হবার আশায়।রেখা সহ্য করতে পারছে না কথাগুলো। আশেপাশের লোকজনের কত কথা কিছুই যেনো তার কানে ঢুকছে না।চোখের সামনে শুধুই ভাসছে আবিরের নানান ছবি,তাদের এতদিনের নানান মুহূর্তগুলো। সে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলতে চাইলো 'আবির আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বিশ্বাস করো।'
কিন্তু হায়!এ যে নিস্ফল ক্রন্দন । তার এই না বলা কথাগুলো যে আর কোনোদিন ও বলা হবে না আবীরকে। আবীরের মতন করে তাকে কেউ কি আর এভাবে ভালোবাসতে পারবে? আবীরের দিদি বললো 'রেখা সেই যখন এলে, কদিন আগে কেনো এলে না তুমি... অন্তত শেষ বারের মতন ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে দেখে যেতে পারতো ভাই। ও যে তোমাকে বড্ডো বেশি ভালোবেসে ছিল গো।'
রেখা নিশ্চুপ , নিশ্বব্দ।দু চোখে অশ্রুধারা কিছুতেই যে বাধ মানছে না।
এই ভাবেই শেষ হলো এক অসমাপ্ত ভালোবাসার কাহিনী।
কিছু কিছু বোকা ও বেহাসাবী মানুষেরা এখনও হয়ত তার প্রিয় মানুষটির সম্মতি পাবার আশায় এভাবেই নিজের জীবনের কত মূল্যবান সময় বৃথাই কাটিয়ে দিতে পারে নির্দ্বিধায় ।যদিও এই যন্ত্রনির্ভর সমাজে এইসব আবেগ, অনুভূতিগুলো বড়ই বেমানান,
হয়তো কোনো মূল্যই নেই ।
রচনাকাল : ১৯/২/২০২১
© কিশলয় এবং পূর্বালী চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।