পুরাণের গল্প কথা ও কাহিনী (তৃতীয় পরিচ্ছেদ)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
যুগে যুগে পাল্টেছে মহা ঋষিদের নাম | সপ্তর্ষি কোনও নির্দিষ্ট ঋষিগণ ছিলেন না | এটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল একটা অলঙ্কার বা পদের নাম | এক এক সময়ে এক এক ঋষি আসীন হয়েছেন বা সেই পদের গুরুভার সমালেছেন |
যাই হোক, হিন্দু পুরাণে ঋষি গৌতম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য নাম | তাঁকে বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা | অর্থাত্ তিনি মন্ত্রের উত্স | মন্ত্রের স্রষ্টা | গোদাবরী নদীর নামও নাকি তাঁর নামেই | রঘুগণ ঋষির পুত্র গৌতম ছিলেন প্রাচীন ঋষি অঙ্গীরার বংশধর | গৌতমের পুত্ররা বামদেব, শতানন্দ, নোধা-ও পরবর্তীকালে হয়েছিলেন মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি | ঋষি গৌতমের নামেই প্রবর্তিত হয় গৌতম গোত্র |
তবে এসব বাদে ঋষি গৌতমের নাম পরিচিত তাঁর স্ত্রীর জন্য | এই প্রসঙ্গে বলি, সেই ঋষিপত্নীকে নিয়ে আগেই এই সাইটে বলেছি, তিনি আর কেউ নন, অহল্যা | হিন্দু ধর্মের আদর্শ স্ত্রী, তথা সতীসাধ্বীদের মধ্যে অন্যতমা |
অহল্যার রূপে মুগ্ধ ছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র | একদিন, ঋষি গৌতম গিয়েছিলেন নদীতে স্নান করতে | সেই সুযোগে তাঁর তপোবনে হানা দেন ইন্দ্র | ঋষি গৌতমের ছদ্মবেশে | অহল্যার সঙ্গে লিপ্ত হন যৌনতায় | অবগাহন সমাপনে ফিরে আসেন ঋষি গৌতম | দেখেন, তাঁর সমরূপী এক পুরুষের সঙ্গে সঙ্গমাবদ্ধ সহধর্মিণী !
যোগবলে ঋষি গৌতম বুঝতে পারলেন দেবরাজ ইন্দ্রের চাতুরী | ক্রোধান্ধ হয়ে তিনি অভিসম্পাত দিলেন ইন্দ্র-অহল্যা দুজনকেই | ঋষি গৌতমের শাপে কামুক ইন্দ্রের সর্বদেহ আবৃত হল স্ত্রী যোনিতে | তিনি হলেন সহস্রযোনি | অহল্যা পরিণত হলেন পাষাণে |
তাঁর অভিশাপেই দেবরাজ ইন্দ্রের সর্বাঙ্গ ভরে গিয়েছিল স্ত্রী-যোনিতে তাঁকে কোথাও কোথাও সপ্তর্ষির মধ্যে অন্তর্গত করা হয়েছে |
পরে ক্রোশ প্রশমিত হলে ঋষি গৌতম লাঘব করেন অভিসম্পাতের বোঝা | ইন্দ্রের দেহের সহস্রযোনি পরিবর্তিত হয় চোখে | তিনি হন সহ্স্রাক্ষ | তাঁর সেই রূপই নাকি পরিবর্তিত হয় পুরুষ ময়ুরের পেখমে | যে পেখম নাকি ময়ূরীকে আকৃষ্ট করার প্রধান অস্ত্র ময়ূরের কাছে |
আর স্ত্রী অহল্যার জন্য স্বামী গৌতম বিধান দেন, বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্রের পাদস্পর্শে শাপমোচন ঘটবে | সেটাই হয়েছিল | রঘুনন্দনের স্পর্শে নারীত্ব ফিরে পেয়েছিলেন পাষাণী অহল্যা | অবশ্য তার আগে এক যুগ ব্যাপী পাষাণ হয়ে থাকতে হয়েছে | সত্য যুগে পাষাণে রূপান্তরিত হয়েছিলেন তিনি | মানবী রূপ ফিরে এসেছিল ত্রেতা যুগে |
কিন্তু কামান্ধ ইন্দ্র তো নয় দোষী | অর্ধাঙ্গিনী অহল্যাকে কেন শাপ দিয়েছিলেন ঋষি গৌতম ? দিয়েছিলেন, কারণ তাঁর যুক্তি ছিল, ছদ্মবেশে রূপ পাল্টানো যায় ঠিকই | কিন্তু দুজন পুরুষের তাঁর প্রেয়সীকে আদর করার ভঙ্গি কোনওদিন এক হবে না | তাই তিনি স্ত্রী অহল্যাকে শঠতামুক্ত ভাবতে পারেননি |
তবে স্বামীর অভিসম্পাতে আখেরে লাভ হয়েছিল অহল্যারই | এক যুগ ধরে নির্যাতনের পুরস্কার স্বরূপ তিনি আজ হিন্দু ধর্মের পঞ্চসতীর এক জন।
রচনাকাল : ১/২/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।