আজ আমি আমার জন্ম ভিটে সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। প্রত্যেক মানুষেরই তাদের নিজেদের ঘর বাড়ি তথা বাসস্থান এবং শৈশবকাল এর সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক আবেগ এবং স্মৃতি।আমারও এই বাড়ির প্রতিটি ইট, কাঠ, দেওয়াল সর্বোপরি মানুষজনের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক আবেগ, অনেক স্মৃতি ।আমাদের বাড়ির নাম
লাঙ্গলবেড়িয়া চক্রবর্তী বাড়ি যা শুধুমাত্র বাড়ির সদস্যদের কাছেই নয় , পার্শ্ববর্তী এলাকায় এবং গ্রামের মানুষজনের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত। এই বাড়িটি আসলে এক বনেদি জমিদার বাড়ি।সময়ের সাথে সাথে জমিদারির প্রভাব না থাকলেও এখনও বেঁচে আছে এই বাড়ির আচার,নীতি নিয়ম এবং সংস্কার।যদিও আমার সাথে এই বাড়ির পরিচয় কয়েকটি বছরের তবুও প্রতি মুহূর্তে বাঁধা পড়ে আছি এই বাড়ির মায়ার বাঁধনে। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এখনও স্বেচ্ছায় নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে চান এই মায়ার বাঁধনে।
এই বাড়ির নীয়ম কানুন বা সংস্কার তৈরি করেছিলেন আমাদের বংশের পূর্বপুরুষরা এবং ক্রমে সে দায়িত্ব সময়ের সাথে সাথেই পালন করে চলেছেন তাদের যোগ্য উত্তর সূরিরা তথা আমাদের গুরুজনেরা।
চক্রবর্তী বাড়ির কথা বলতে হলে প্রথমেই যে কথা বলতে হয় তা হলো এই বাড়ির বহু পুরনো কালের শ্যামা পূজা।পরবর্তী কালে আরও একটি পূজা শুরু হয়েছে, সেটি হলো দুর্গাপূজা।
এই বাড়ির আরও কয়েক টি উল্লেখ্য বিষয় হলো সুপ্রশস্ত ঠাকুর দালান এবং ঠাকুর ঘর।
ঠাকুর দালানে শ্যামা পূজা, দুর্গা পূজা সহ বহু লোক সমাগমের পূজা গুলি অনুষ্ঠিত হয়।এই বিশেষ পূজা গুলি শুধুমাত্র পূজার্চনা ই নয়, এগুলি আমাদের বাড়ির আনন্দের রসদ।
আমাদের দুর্গাপূজা বা কালীপূজার সময় অভিনব একটি পদ্ধতি পালন করে থাকি সকলে।প্রাণী হত্যার বদলে এখানে ক্ষীরের পাঁঠা বলি দেওয়া হয়।
বহু লোকের আগমন ঘটে পূজার সময়গুলিতে।আত্মীয়স্বজন, গ্রাম বাসী এবং শুভাকাঙ্খী দর্শনার্থীদের মেল বন্ধনে ভরে ওঠে আনন্দ যজ্ঞ। এছাড়াও ঠাকুর ঘরে বিরাজ করেন আমাদের কূল দেবতা শ্রীধর।সেখানে দেব দেবী দের নিত্য সেবা হয়। প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে সত্য নারায়ণের সিরুনি দিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ তো আছেই।
চক্রবর্তী বাড়ির আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই বাড়ির মোটা থামের দেওয়ালের ঘর, বাড়ির পিছনের দিকে খিড়কির পুকুর এবং সর্বোপরি উল্লেখ্য ভারী কাঠের প্রশস্ত ও বড়ো প্রবেশের দরজা যাকে আমরা "দেউরী" বলে থাকি।
বর্তমানে নানান কারণে অসুবিধা ও বিপর্যয়ের কারণে এই বাড়ির অনেক টা অংশ ই ক্ষতি গ্রস্থ ও কিছু অংশ নব রূপে নির্মিত। তাই আমার বর্ণনার সাথে বর্তমান বাড়ির সম্পূর্ণ সাদৃশ্য অনেক অংশেই নেই । তবুও এখনো বেঁচে আছে পুরনো দিনের অনেক নিদর্শন । শৈশবকাল থেকে দেখা চিত্র টাই আমি লেখার মাধ্যমে বর্ণনা করার চেষ্টা করলাম। সবশেষে এটাই বলার বাড়ির গঠন দিনে দিনে যাই হোক না কেন এই বাড়ির আবেগ ও স্মৃতি চিরকালই আমার মনের মণিকোঠায় সদা জাজ্বল্যমান থাকবে।
রচনাকাল : ২৪/১/২০২১
© কিশলয় এবং পূর্বালী চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।