অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন। এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (চতুর্থ পর্ব )
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৬৫৯৭ জন পড়েছেন।
Lakshman Bhandary
অভিশপ্ত বছর ২০২০...  হেথা হতে যাও পুরাতন।
এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (চতুর্থ পর্ব )
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভারতীয় অর্থনীতি অবশ্য করোনার আগে থেকেই ধুঁকছিল। জিডিপি ঋণাত্মক বা সঙ্কোচন অর্থাৎ মন্দা না হলেও নিম্নগতিতে ছিল। বেকারত্বের হার নেমে গিয়েছিল ৪৫ বছরের সর্বনিম্ন হারে। ধুঁকছিল উৎপাদন ক্ষেত্র। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন ‘ঝিমুনি’। করোনা এসে মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে। যেন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কয়েক হাজার ফুট নীচের গিরিখাতে। মৃত্যু হয়নি। প্রাণটা কোনওরকমে ছিল। মাস তিনেক প্রায় সংজ্ঞাহীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে পাহাড়ি চড়াই-উতরাই বেয়ে উপরে উঠে আসার চেষ্টা। তবে আবার কবে আগের অবস্থা ফিরে আসবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতেও ভয় পাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

এই ধরনের বিপর্যয় এবং তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোকে চারটি ইংরেজি বর্ণ দিয়ে ভাগ করেন অর্থনীতিবিদরা— ভি (V), ইউ (U), ডব্লিউ (W) এবং এল (L)। অক্ষরগুলির আকৃতি দেখেই অর্থনীতির উত্থান-পতন বোঝা যায়। ভি-এর ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরে পতন এবং একই গতিতে উত্থান। ইউ-এর অর্থ দ্রুত পতনের পর দীর্ঘদিন সেই অবস্থায় থাকা এবং দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী। ডব্লিউ অর্থাৎ গ্রাফ একই ভাবে বারবার ওঠানামা এবং এল-এর ক্ষেত্রে দ্রুত পতন এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। ২০২০-র ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভারত এবং গোটা বিশ্বের অর্থনীতির এই উত্থান-পতনকে ‘ভি’-এর আকারের বলে ব্যাখ্যা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ভারত-সহ বেশ কিছু দেশে বৃদ্ধির গ্রাফ কিন্তু ডব্লিউ-এর আকারও হতে পারে। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার ফের বড়সড় নিম্নগতি আসতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেশি। কারণ, করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই ছিল অর্থনীতির ঝিমুনি।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতির ওঠাপড়া আগেভাগে আঁচ করতে পারে শেয়ার বাজার। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যখন ব্রিটেন, ফ্রান্স একের পর এক দেশ লকডাউন ঘোষণা করছিল, শেয়ারবাজারে ধস নামতে শুরু করেছিল তখন থেকেই। সারা বিশ্বের সূচকের গড় পতন ছিল ২০ শতাংশের মতো। ভারতের ক্ষেত্রে তা ছিল ৩৫ শতাংশেরও বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বকালীন পতন হয়েছিল অপরিশোধিত তেলের দামে। লকডাউনের এক একটা দিন লগ্নিকারীদের পুঁজি যেন হাওয়ায় উবে যাচ্ছিল।

তবে শেয়ার বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিতান্ত সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা ভারতবাসীই লকডাউনের শেষে আবার বাজারমুখী। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। মানুষের হাতে টাকা আসতে শুরু করেছে। ভিড় বাড়ছে শপিং মল, দোকানে। চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে উৎপাদন। অতএব অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী। এপ্রিল-জুন প্রথম ত্রৈমাসিকে যেখানে জিডিপি সঙ্কুচিত হয়েছিল মাইনাস ২৩.৯ শতাংশ। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সেই সঙ্কোচন অনেকটাই কমেছে (মাইনাস ৭.৫%)। পরের ত্রৈমাসিকে এই হার আরও ভাল জায়গায় থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, যা আশা করা গিয়েছিল, তার চেয়েও দ্রুতগতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২০-২১অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি সঙ্কোচনের হার বা মন্দা হতে পারে ৯.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের পর এই পূর্বাভাস কমিয়ে করেছে মাইনাস ৭.৫। সেনসেক্স-নিফটিও কোভিডের আগের জায়গায় তো ফিরেছেই, তার চেয়ে অনেক উপরে উঠে প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে।

তবে কি কোভিডের ধাক্কা শুধু ২০২০-র কয়েকটা মাসেই সীমাবদ্ধ? কোভিডোত্তর যুগে প্রবেশ করে গিয়েছি আমরা? অন্তত অর্থনীতির দিক থেকে? অর্থনীতিবিদরা কিন্তু এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তাঁদের মতে, অর্থনীতিতে কোভিডের এই ক্ষত কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর। সেখান থেকে সহজে পরিত্রাণের উপায় নেই। জেল থেকে ছাড়া পেলে যেমন মুক্তির প্রকৃত স্বাদ বা তাৎপর্য বোঝা যায়, তেমনই দীর্ঘ লকডাউনের পর তাৎক্ষণিক কিছু চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে কিছুটা গতি এসেছে বটে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী মেয়াদে সেটা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ।
 
আমরা চাইলেও ইতিহাস ভুলতে পারবে না ‘অর্থহীন’ ২০২০। যখনই অর্থনীতিতে ধাক্কা আসবে, তুলনা আসবে এই বছরের। শেয়ার মার্কেটে কয়েক দিনে কার কত টাকা উবে গিয়েছিল, রাতারাতি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোন শিল্পে লোকসানের বহর কত বেড়েছিল— সব উঠে আসবে আলোচনায়। ইতিহাস ভুলতে পারবে না, রাজপথে পরিযায়ীর পদযাত্রা, রেললাইনে ঘুমিয়ে থাকা শ্রমিকদের পিষে দিয়ে মালগাড়ি চলে যাওয়া। সরকার হিসেব রাখুক না রাখুক, ইতিহাসবিদের কলম এড়াতে পারবে না কয়েকশো কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে বাড়ির কাছে এসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া সেই ছেলেটার কথা।

এখন যেমন ১৯২৯-এর ‘মহামন্দা’ কিংবা ২০০৮-’০৯-এর ‘রিসেশন’-এর সঙ্গে তুলনা হচ্ছে কোভিডের, ভবিষ্যতে বড় কোনও আর্থিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি এলেই তুলনায় চলে আসবে এই ‘সংক্রমিত’-২০২০’ সালের কথা। চাইব না, আবার ফিরে আসুক এমন কোনও ক্ষত। নবারুণ ভট্টাচার্যের মতো হয়তো কেউ লিখবেন, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’, এই বিষ-জীবাণুর উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না, এই কর্মহীনতা আমার দেশ না, এই অর্থহীনতা আমার দেশ না। তবু অর্থনীতিতে, পরিসংখ্যান— এ সবের আলোচনায় বার বার ফিরে আসবে ২০২০।

রচনাকাল : ৩১/১২/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 4  France : 2  Germany : 1  India : 54  Romania : 1  Russian Federat : 5  Ukraine : 1  United States : 75  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 4  France : 2  Germany : 1  
India : 54  Romania : 1  Russian Federat : 5  Ukraine : 1  
United States : 75  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন। এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (চতুর্থ পর্ব ) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩২৫৮
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী