অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন। এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (তৃতীয় পর্ব )
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৮৫২ জন পড়েছেন।
Lakshman Bhandary
অভিশপ্ত বছর ২০২০...  হেথা হতে যাও পুরাতন।
এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (তৃতীয় পর্ব )
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

মহাসড়ক, রেললাইন ধরে অন্তহীন গন্তব্যের পথে হেঁটে চলেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। পৃথিবীর ব্যস্ততম শহরও যানহীন, জনশূন্য। মল থেকে মিল, সমতল থেকে হিল, কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, মুম্বই থেকে দুবাই— সর্বত্র এক ছবি। লকডাউন, আনলক পেরিয়ে, মাস্ক পরে, হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে প্রায় একটা বছর করোনার সঙ্গে সহ-বাস করার পর ২০২০ সালটাকে মনে হচ্ছে যেন ব্যর্থ প্রথম প্রেমের মতো। ভুলতে চাই। কিন্তু পারছি কই।

সংক্রমণ শুরু হয়েছিল ২০২০-র গোড়া থেকে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে অর্থনীতির উপর করোনার প্রত্যক্ষ প্রভাব শুরু হল ২২ মার্চ থেকে। ওই দিন মধ্যরাত থেকে ভারতবর্ষের মাটিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক উড়ান। ৩ দিন পর থেকে শুরু হয়েছিল ‘সম্পূর্ণ লকডাউন’। কোনও বিশেষণ, কোনও মাপকাঠি বা বর্ণনাতেই সেই লকডাউনের প্রকৃত রূপ বোঝানো সম্ভব নয়। এত টুকরো টুকরো উপাখ্যান, যে সেগুলো যোগ করলে কয়েকটা রামায়ণ-মহাভারত হয়ে যাবে। সুনসান পথঘাট, ঘরবন্দি মানুষ, হাসপাতালে হাসপাতালে লাশের স্তূপ, মৃত্যুর পরেও দেখা করা যাবে না প্রিয়জনের সঙ্গে— এ সব তো ছিলই। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে চিত্রটা রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেটা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার দৃশ্য। হাজারে হাজারে, লাখে লাখে মানুষ হেঁটে, সাইকেলে বাড়ি ফিরছেন। রাস্তায় খাওয়া, পথেই ঘুম, প্রাতঃকৃত্য। পর দিন আবার হাঁটা। কত জন যে বাড়ির পথে মারা গিয়েছিলেন, ভারত সরকারের কাছে নাকি তার হিসেবও নেই!

এই চিত্রই বুঝিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় অর্থনীতির অসংগঠিত চেহারা। অসংগঠিত ক্ষেত্রই যে ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড, সেই কঙ্কালসার সত্যিটা সে দিন ছাইচাপা আগুন থেকে হঠাৎ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল। হিসেব বলছে, প্রায় ৮ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক তথা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক কাজ হারিয়েছিলেন লকডাউনে। লকডাউন জারি রেখেও ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছিল জুনের শেষে। তার আগে টানা ৬৮ দিন চলেছিল লকডাউন। পরিংসখ্যান বলছে, ৮ ডিসেম্বর কৃষকদের ডাকা ভারত বন্‌ধে ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। তার আগে ২৬ নভেম্বর শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দেশজোড়া ধর্মঘটে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। কোনও ক্ষেত্রেই ‘সর্বাত্মক বন্‌ধ’ হয়নি। অনেক রাজ্যে, অনেক শহরে তেমন প্রভাবও পড়েনি। তাতেই এত বিপুল ক্ষতি! ৬৮ দিনের লকডাউনে অর্থনীতির ক্ষত কতটা গভীর হতে পারে, এর থেকেই অনুমেয়।

পরিসংখ্যান কী বলছে? একটি সমীক্ষা বলছে, লকডাউনেকাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ৮৩.১ শতাংশ মানুষ কাজ ফিরে পাননি। খাদ্যসঙ্কটে পড়েছেন ৮০.৮ শতাংশ মানুষ। ঘরে ফিরতে পারেননি ৪৭.৮ শতাংশ, অসুস্থ হয়েছেন ১৫.১ শতাংশ। সমস্যা এড়াতে পেরেছেন মাত্র ২.৪ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক।

পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা দেশবাসী স্বচক্ষে দেখেছিলেন। কিন্তু কার্যত আমজনতার অলক্ষ্যে লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল পর্যটন এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র। ঘটনাচক্রে, পর্যটন ক্ষেত্রে অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হোটেল, রেস্তরাঁ শিল্প। 

জুন মাস পর্যন্ত একটি পরিসংখ্যানবলেছিল, অংসগঠিত শ্রমিক এবং স্ব-রোজগার বাদ দিয়ে এই শিল্পে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ। অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে বহু সংস্থা। দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান পরিবহণ ‘অ্যাভিয়াঙ্কা হোল্ডিংস’, ব্রিটেনের ‘ফ্লাইবি’, আলাস্কার সবচেয়ে বড় সংস্থা ‘রাভনেয়ার’, সেন্ট লুইসের ‘ট্রান্স স্টেট এয়ারলাইন্স’, সুইডেনের ‘ব্রা’ ছাড়াও ‘ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া’, ‘মিয়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো বহু বিমান পরিবহণ সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে করোনাকালে। 

ভারতীয় সংস্থা ‘ডেকান চার্টার্স’ কোভিডের সময় অপারেশন বন্ধ করে এখনও পর্যন্ত তা শুরু করতে করেনি। জনশ্রুতি, দেউলিয়া হওয়ার পথে এই সংস্থাও। এ ছাড়া উৎপাদন থেকে পরিষেবা, খুচরো বিপণী শৃঙ্খল থেকে ছোট দোকানদার, ট্রেনের হকার থেকে ফুটপাতের ব্যবসায়ী— কোনও ক্ষেত্রই করোনার ছোবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ব্যক্তিগত ভাবে এক জন ভারতবাসী বা বিশ্ববাসীকেও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি কোভিডের কারণে আর্থিক সমস্যায় পড়েননি।


রচনাকাল : ৩১/১২/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 1  Europe : 2  France : 2  Germany : 2  India : 47  Ireland : 2  Romania : 1  Russian Federat : 8  Saudi Arabia : 1  
Tunisia : 1  Ukraine : 2  United States : 67  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 1  Europe : 2  France : 2  
Germany : 2  India : 47  Ireland : 2  Romania : 1  
Russian Federat : 8  Saudi Arabia : 1  Tunisia : 1  Ukraine : 2  
United States : 67  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন। এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (তৃতীয় পর্ব ) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৭১৩
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী