তৃষিতা
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখিকা : গার্গী সেনগুপ্ত
দেশ : India , শহর : Berhampore, Murshidabad

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , ডিসেম্বর
প্রকাশিত ৫ টি লেখনী ১৫ টি দেশ ব্যাপী ১০২৭ জন পড়েছেন।
#তৃষিতা
#গার্গীসেনগুপ্ত

বিয়ের পর বেশ কবছর ভালোই কেটেছিল তৃষিতা আর অরূপের জীবন। মা বাবার ইচ্ছেতেই বিয়েটা করেছিল অরূপ। ভালোবাসতো প্রিয়াকে, কিন্তু কখনো বলে উঠতে পারেনি তার বাবাকে। কিছুটা ভয় , কিছুটা শ্রদ্ধা তার মুখ বন্ধ রাখে। মন পড়ে থাকতো প্রিয়ার দিকেই, কিন্তু তা বলে সে কখনো তৃষিতার অপমান করেনি। যেটুকু দায়িত্ব পালন করা দরকার সে ভালো স্বামী হিসাবে সেই দায়িত্ব পালনও করেছে। ভুলে গেছে প্রিয়াকে। তৃষিতা জানতো প্রিয়ার কথা।কিন্তু অরুপ কখনো প্রিয়ার অপমান করে নি।
    সমস্যার শুরু হলো তৃষিতা প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে অরূপ তৃষিতাকে কাছে কম পেতে লাগলো। সেভাবে তৃষিতা আর ভালোবাসতেও পারেনা অরূপকে ভেঙেচুরে। ক্লান্ত থাকে বেশির ভাগ সময়। অফিস থেকে ফিরে একা বোধ করে অরূপ। তৃষিতাকে বলেও তো লাভ নেই, কিই বা করবে সে!ফলত অরূপ দূরে দূরে থাকতে শুরু করলো তৃষিতার কাছ থেকে।
    এরইমধ্যে একদিন সন্ধ্যেবেলা একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো অরূপের। অরূপ ফোন ধরেই হেসে উঠলো। এই হাসি কখনোই দেখেনি তৃষিতা। যেন কিছু হারানো জিনিস বহুদিন পরে খুঁজে পেয়েছে সে। কিছু বলার ছিল না তৃষিতার। সত্যি বলতে সে খুশিই হয়েছিল অনেক দিন পর নিজের স্বামীকে খুশি দেখে।
      এর পর থেকে শুরু হলো অরূপ এর দেরি করে বাড়ি ফেরা। প্রায়ই সে বাড়ি ফেরে রাত বারোটা নাগাদ। কখনো তো তার থেকেও বেশি দেরী হয়। তৃষিতা কিছু বলে না। বলার সাহস পায় না।
     আজ চারবছর হতে চললো ঋজু হয়েছে। কিন্তু ঋজু হওয়ার পর থেকে অনেক কিছুই বদলে গেছে অরূপ এবং তৃষিতার জীবনে। কিছুই সম্পর্ক আর নেই দুজনের। অরূপ কখনো বাড়ি ফেরে রাতে, কখনো ফেরে না, ফিরলেও ফোন নিয়ে বসে থাকে আলাদা ঘরে। কিন্তু সে ভালোবাসে  এই বাড়িতে শুধু একজনকে-তার একমাত্র ছেলে ঋজুকে। সে মনে মনে জানে সেদিনের সন্ধের সেই ফোন প্রিয়ার ছিল। আর তারপর থেকেই সে তৃষিতা কে সেভাবে সময় দেয় না, কাছে যায় না। এখন তৃষিতার একটাই পরিচয়  সে ঋজুর মা। কিন্তু অরূপ কখনোই তৃষিতা কে ডিভোর্স ও দিতে চাইনা। কারণ ঋজুর দেখাশোনা। কিন্তু তৃষিতা থাকতে সে প্রিয়াকে বিয়েও করতে পারবে না সে জানে।
     তৃষিতা সব বুঝেও চুপ থাকে নিজের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে। মনে মনে ভাবে," আর যাই হোক, আমি নিজের জায়গা কখনোই ছাড়বোনা। আমি অরূপের স্ত্রী। আমি তো জোর করে অরূপকে বিয়ে করিনি, আমার কি দোষ!" মনের রাগকে দমিয়ে সে অনেক চেষ্টা করেছে অরূপকে বোঝানোর। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
            এভাবে দেখতে দেখতে ঋজুর বয়স চার পেরোলো। কাল ঋজুর পঞ্চম জন্মদিন। ঋজু তার বাবাকে আবদার করলো বাইরে কোথাও গিয়ে জন্মদিন পালন করার। একমাত্র ছেলের আবদার  অরূপ কি করে ফেলে!! তার জন্যেই তো সে এই অনিচ্ছুক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে আজ এতদিন।
      পরদিন সকালে তারা পৌঁছলো দীঘার একটা রিসোর্ট এ। কেউ আসবে না আজ এই জন্মদিনে। শুধু অরূপ, তৃষিতা আর ঋজু। সন্ধ্যেবেলা ঘরে কেক কাটা হলে ঋজুকে তৃষিতা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। ঘুম পাড়ানোর সময় তৃষিতা তার কপালে চুমু দিয়ে বললো, "ঘুমো বাবা, আমি তোর পাশেই আছি। কোথাও যাবো না তোকে ছেড়ে।"পাশে বসে সব শুনছিল অরূপ।
          ঋজু ঘুমিয়ে গেলে সে তৃষিতা কে বললো চলো একটু সমুদ্রের ধার থেকে ঘুরে আসি। স্বামীর মুখে এরকম কথা শুনে তৃষিতা চমকে উঠলো। আজ বহুদিন হয়ে গেলো যে তাকে কাছে ডাকেনি, ঠিক ভাবে কথা বলে নি, ভালোবাসেনি সেই অরূপ তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইছে!! আনন্দে ডগমগ হয়ে চুল আঁচড়ে সে চললো অরূপ এর সাথে বীচে ঘুরতে।
           অন্ধকার রাত্রে বীচে কেউ নেই। আকাশে চাঁদ একা অপেক্ষা করছে যেন কারোর। এদিকে অরূপও অপেক্ষা করছে কিছুর। অনিচ্ছা সত্বেও সে আজ হাত ধরে এগিয়ে চলেছে তৃষিতার। আজ হবে সব অপেক্ষার অবসান। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ অরূপ তৃষিতাকে বললো "তুমি কতটা ভালোবাসো আমায়?কি কি করতে পারবে আমার জন্যে? আচ্ছা!খুব রেগে আছো বলো আমার ওপর? জানতে চাওনা আমি কার সাথে মিশি, কার সাথে ব্যস্ত থাকি ফোনে? অফিস থেকে ফেরার পর গভীর রাত অবধি কার বাড়ি থাকি?"
  তৃষিতা অরূপের হাত চেপে ধরে বললো ,"আমি বিশ্বাস করি তোমায়,‍ এতদিন তুমি যাই করো অপমান করোনি আমাকে, কিছুর অভাব হতে দাও নি আমার আর ঋজুর। আজ সেজন্যেই তো তুমি এসছো আমাদের নিয়ে এই সুন্দর জায়গায়।তাই না!"
         তৃষিতার কথা শুনে খুব জোরে হেসে অরূপ বলে উঠলো, "খুব বিশ্বাস আমার ওপর তোমার বলো?? ""তাহলে চলো সমুদ্রের আরো গভীরে আমার হাত ধরে"।কোনো আপত্তি না করে, সমুদ্রকে ভীষণ ভয় পাওয়া মেয়েটা এগিয়ে চললো অরূপের হাত ধরে সমুদ্রের গভীরে। যখন অনেকটা ভেতরে চলে এসেছে দুজনে তৃষিতা ভয়ে ভয়ে বললো, এবার আমার খুব ভয় লাগছে রূপ, অনেক পরীক্ষা হয়েছে আমার ভালোবাসার, চলো ঘরে ফিরে যায়, ঋজু একা ঘুমোচ্ছে। অরূপ একটা ক্রুর হাসি হেসে এক ধাক্কা মেরে ঠেলে ফেলে দিল তৃষিতাকে সমুদ্রের গভীরে। আর চেঁচিয়ে বলে উঠলো, 
"অনেক সহ্য করেছি আমি!! এবার বাঁচবো আমি আমার মতো, বাঁধবো আমি ঘর প্রিয়ার সাথেই, ঘুরে এসো তুমি স্বর্গ থেকে,
ঋজু শুধু আমার।"
        অন্ধকারের সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে  মিশে গেলো অরূপের আওয়াজ। আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ভেসে গেলো তৃষিতা। কেউ জানলো না কি হলো সেই রাতে সমুদ্রের ধারে।
           রিসর্টের ঘরে ফিরে ঘুমন্ত ঋজুকে কোলে তুলে নিয়ে অরূপ পাড়ি দিল নিজের শহর। মনে ভয় একটা থাকলো বটে। মনে ভয় থাকলো,  মৃতদেহ ভেসে উঠলে তদন্ত তো হবেই।

দীঘা থেকে বাড়ি ফেরা আজ দুদিন হয়ে গেলো। যা ভেবেছিল অরূপ তেমন কিছুই হয় নি। খবরের কাগজে কোনো খবর ছাপে নি, রিসোর্ট থেকে কোনো ফোন ও আসেনি, কেউ কোনো খোঁজ খবর নিতে যাতে না পারে তার জন্য অরূপ ফোন সুইচ অফ করেই রেখেছে, দুদিন অফিস ও যায় নি।
যেমন ভয় পেয়েছিল তেমন কিছুই না হওয়ায় অরূপএকটু একটু করে শান্তি বোধ করতে শুরু করেছে। কিন্তু আজ দুদিন ধরে তার কাঁধে খুব ব্যথা। হয়তো ঋজুকে কোলে  তুলতে গিয়ে লেগে গেছে। সব সময় একটা অসুবিধাবোধ হয় তার। কিন্তু এই টুকটাক অসুবিধা কিছুই না তার কাছে। কদিন পরে সব শান্ত হলে সে প্রিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে।
       পরের দিন সকালে অরূপ ঋজু কে ব্রেকফাস্ট করতে ডাকে। টেবিলে ঋজু এলে কনফ্লাকস বাটিতে দিতে দিতে অরূপ ঋজু কে বলে, বাবু আজ দুদিন হয়ে গেলো, তুই মাকে দেখিস নি। মায়ের জন্য মন কেমন করে না?"অরূপের কথায় ছোটো ঋজু খি খি করে হেসে উঠে বলে, "বাবা, মায়ের জন্য মন খারাপ করবে কেনো?? মা তো এখানেই আছে। রাত্রে তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। শুধু একটা জিনিষই খুব অবাক লাগে আমার, মা তোমার কাঁধে চেপে কেনো বসে থাকেসবসময়? আর মিচকি মিচকি হাসে আমার দিকে তাকিয়ে। অসুবিধা হয় না বুঝি তোমার?"
      ঋজুর এই কথা শোনার পর অরূপের মুখ থেকে আর কোনো কথা বেরোয় না। তৃষিতার অতৃপ্ত আত্মা তাকে কথা বলতে দেয় না। হাসতে হাসতে বলে, অরূপ,এবার তোমার পরীক্ষা, দেখি তুমি কত ভালোবাসো আমায়, আমি ঘাড় মটকাবো, তুমি কিছু বলবে না, বেশ??
                  সমাপ্ত


রচনাকাল : ৩০/১২/২০২০
© কিশলয় এবং গার্গী সেনগুপ্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 3  France : 1  Germany : 3  Hungary : 1  India : 94  Ireland : 2  Romania : 1  Russian Federat : 11  Sweden : 87  
Ukraine : 4  United States : 100  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 3  France : 1  Germany : 3  
Hungary : 1  India : 94  Ireland : 2  Romania : 1  
Russian Federat : 11  Sweden : 87  Ukraine : 4  United States : 100  
© কিশলয় এবং গার্গী সেনগুপ্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
তৃষিতা by Gargi Sengupta is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৪৩৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী