অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন।
এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (তৃতীয় পর্ব )
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
কাজের পরিসরেও বড়সড় বদল এনে দিয়েছে কোভিড-১৯। এক দল লোকের কাজ একেবারে চলে গিয়েছে। এক দলের কাজকর্মের গোটাটাই চলছে বাড়ি থেকে। তৃতীয় একটা দল মধ্যপন্থায়। অফিস দরকার মনে করে ডেকে পাঠায়। আর এক দলের কাজের ধরনটাই পাল্টে গিয়েছে। কলেজ স্ট্রিটের এক বইবিক্রেতা এখন প্লাস্টিক কারখানায় রাত জেগে খেলনা বানান। দিনের বেলা সেই তিনিই দোকানে দোকানে পাঁউরুটি-লাড্ডু-বিস্কুট ফেরি করেন। রোজগার হয়েছে ৩ ভাগের এক ভাগ। বেসরকারি এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। ভিন্রাজ্যে কাজে যাওয়া ‘পরিযায়ী শ্রমিক’দের কাজ হারিয়ে বেঁচে থাকা আর ঘরে ফেরার গল্প আমূল নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে।
একটা দীর্ঘ সময় মানুষ বাড়িতে বন্দি ছিল। একটা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া তার বাইরে বেরনো বারণ। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে তো একেবারেই না। বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু ন্যূনতম প্রয়োজন সেটুকুই কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরে আসা। সেই কেনাকাটার ফাঁকেই বাঙালি বেদম ভিড় বাড়িয়েছে বাজারে। সামাজিক দূরত্বের দফারফা করে ছেড়েছে। কিন্তু বাকি সবই ঘরে বসে।
নির্ধারিত সময়ের বাইরে বেরোলেই পুলিশের ধমক, মার, অন্যের ভ্রূকুটি। তাতেই বাঙালি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল ধীরে ধীরে। গোটা দুনিয়ায় চলতে থাকা নিয়ম-কানুনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে। বিষময় একটা বছর শুধু অদ্ভুত এক আঁধার পথে হাঁটিয়েছে, তা নয়। আলোকবর্তিকাও দেখিয়েছে। গোটা বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটা সেখানেই। পরিবারকে সময় দেওয়া। অন্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া। পুরনোকে ভুলে সেই বাড়ানো হাত ধরেই যাওয়া যাক নূতন বছরে।
হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে...। মানুষ শিখেছে কেমন করে নিজেকে বাঁচতে হয়। অপরকে বাঁচাতে হয়। অভিশপ্ত বছর তোমাকে রেখে দিলাম মনের অচিনপুরে। তারপর তুমি একদিন হবে কালজয়ী। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ তোমাকে স্মৃতির মণিকোঠায় রাখবে। এ বছরে কি পেলাম? আগামী বছরে কি পাব?
এই একটাই জিজ্ঞাসা।
রচনাকাল : ২৭/১২/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।