অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন।
এসো এসো হে নতুন বছর ২০২১ ! (প্রথম পর্ব )
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অভিশপ্ত বছর ২০২০... হেথা হতে যাও পুরাতন। এমন একটা বছরকে ক্যালেণ্ডার থেকে ইরেজার দিয়ে ঘষে মুছে ফেলতে ইচ্ছে হয়। ভয়, আতঙ্ক, উদ্বেগ, শিহরণ, মনখারাপ, বিচ্ছেদ, শোক, ঘাবড়ে যাওয়ায় ভরপুর এ রকম বছর আগে কখনও আসেনি। তবে খারাপ সময়ও তো শিক্ষা দিয়ে যায়। সেটুকুই দিয়ে গেল ‘অভিশপ্ত বছর ২০২০ সাল’। ছোট ছোট ভাণ্ডে রাখা একটা মস্ত বড় শিক্ষার ভাণ্ডার। তার কতকটা ভুলে যাওয়ার। আর বাকিটা নিয়ে সরাসরি ২০২১-এ ঢুকে পড়া।
তার আগে ঢুকে পড়া যাক অভিধানে। শব্দগুলো নিয়ে। প্যান্ডেমিক, লকডাউন, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, কোয়রান্টিন, আইসোলেশন, আনলক, কোমর্বিডিটি, কন্টেনমেন্ট জোন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ভার্চুয়াল, সেফ হোম আরও কত কী! অন্য কিছু শব্দও গোটা করোনাকালে বাঙালির সুজন হয়েছে। হোমিওপ্যাথি এবং অ্যালোপ্যাথি। আর্সেনিক অ্যালবাম এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। বাঙালির জীবনে এ ভাবে শব্দগুলো একমাত্রায় জড়িয়ে যায়নি কখনও। বাঙালি তার বাংলা প্রতিশব্দ নতুন করে ভাবতে বসেছে।
অতিমারি, সামাজিক দূরত্ব, নিভৃতবাস ইত্যাদি শব্দ বছরভর মুখে মুখে ঘুরেছে। ঘুরছে।
দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে গিয়েছে। এ সব শব্দের ব্যবহার নতুন বছরেও থেকে যাবে। ভোলা যাবে না সমাজযাপনে তাদের অভিঘাত।
বাঙালি কোনও কালেই স্বাস্থ্যসচেতন ছিল না। তারা ভিড়ে মুখচাপা না দিয়েই হাঁচি-কাশিতে অভ্যস্ত। যত্রতত্র থুতু ফেলাতেও কোনও অপরাধবোধ নেই। কিন্তু গোটা ২০২০ কেউ সামান্য হাঁচি-কাশি দিলেই তার দিকে ঘুরঘুর করেছে অবিশ্বাসী চোখ। সে দশা কাটেনি। তবে অতিমারি শিখিয়েছে, হাঁচি-কাশির সময় মুখের সামনে নিদেনপক্ষে হাতটা রাখতে হয়। রাখা উচিত। সর্বত্র থুতু ফেলা যায় না। মুখে মাস্ক রাখা চাই। হাতে সাবান বা স্যানিটাইজার দিতে হয়। বাইরের হাত মুখে দিতে নেই। নতুন বছর তো বটেই, এ সব অভ্যাস আজীবন থাকা উচিত। কিন্তু বাঙালি তাতেই বা কবে তোয়াক্কা করেছে! অনেক মুখই কিন্তু মুখোশহীন বছর শেষের প্রকৃত ছবিতে।
প্রকৃত আর ‘ভার্চুয়াল’ কি সমনামী? অফিসের বৈঠক। প্রেমিক-প্রেমিকার দেখা। বন্ধুত্বের আলিঙ্গন। জন্মদিনের কেক কাটা। প্রধানমন্ত্রীর সভা। রাজনৈতিক কর্মসূচি। পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন। সব, সবই অভিশপ্ত বছরে ভার্চুয়াল। নতুন বছরে এই ‘ভার্চুয়াল’ বরং ‘অ্যাক্চুয়াল’ আসুক। তবে বাঙালি শিখে গিয়েছে, আড়ালের অন্য নাম অনলাইন।
অনলাইনে ক্লাস করা যায়, পরীক্ষা দেওয়া যায়, শিক্ষক পড়াতেও পারেন। এর আগে ইউটিউবে এমন চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যবহারিক ‘জ্ঞান’-এর ভিডিও সেখানে রয়েছে। প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীরা চোখ বুলিয়েছে। কিন্তু বাঙালি আবার সাহচর্য সম্পর্কে খুবই শ্রদ্ধাশীল। অতিমারি দিল সব ঘেঁটে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়ার টোল থেকে প্রাইভেট টিউটর— সকলের দরজা বন্ধ। খোলা শুধু অনলাইন। মাধ্যম হিসাবে খুবই উত্তম। জরুরি তো বটেই। আপৎকালীনও। কিন্তু সকলের কাছে পৌঁছনোর মতো পরিকাঠামো দেশে নেই। তাই গ্রাম থেকে গ্রামান্তর, মূল স্রোত থেকে প্রান্তিক— সকল নাগরিক যদি নতুন বছরে এমন পরিকাঠামোর ভিতরে চলে আসতে পারে, তা হলে ভুলে না-গিয়ে ‘অন’ থাকুক এই চেনাজানা।
রচনাকাল : ২৭/১২/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।