ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির
আনুমানিক পঠন সময় : ১০ মিনিট

লেখক : রূপক ঘোষ
দেশ : ভারতবর্ষ , শহর : কলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৫০ টি লেখনী ৩১ টি দেশ ব্যাপী ১১২৬৮ জন পড়েছেন।
Rupak Ghosh
~ ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির ~
রূপক ঘোষ 

    যুধিষ্ঠির কে নিশ্চয় চেন না তোমরা- আর চিনবেই বা কি করে? এই যুধিষ্ঠির তো মহাভারতের পাণ্ডব বংশের কেউ নয়? এই যুধিষ্ঠিরের বাড়ি হল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম। আমার এই গল্পটা যুধিষ্ঠির কে ঘিরেই। আউশগ্রামের একই স্কুলে আমি আর যুধিষ্ঠির দশম শ্রেণীতে পড়ি। যুধিষ্ঠির কিন্তু আর পাঁচটা ছেলের মত নয়, অসম্ভব মিথ্যেবাদী ও দুষ্টু প্রকৃতির। যদিও কেন জানি না আমাকে যুধিষ্ঠির অসম্ভব ভালবাসতো। এখন আমি যদি দু-একটা ঘটনার উল্লেখ করি তাহলেই যুধিষ্ঠির কে তোমরা প্রকৃত চিনতে পারবে।

    বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের স্কুলে দু-একজন ছাত্রের বই, খাতা, টিফিন বক্স ইত্যাদি মাঝে-মধ্যেই চুরি যাচ্ছিল। আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কে এই কাজটা করছে। তবে এটা যে এই স্কুলেরই কোন বদমাইশ ছাত্রের কাজ সে ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ ছিল না। তক্কে-তক্কে আছি, যে ভাবেই হোক চোরকে ধরতে হবে। এর ঠিক দুদিন পর, হঠাত্‍ দেখি যুধিষ্ঠির হাঁফাতে হাঁফাতে আমাদের দিকে আসছে। ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করতে বলল-
“এইমাত্র দেখে এলাম সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র তমাল আমাদেরই অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অনিলের টিফিন বক্স চুরি করে নিজের ব্যাগে রাখছে। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে তোমাদের জানাতে এলাম। এখনই যদি ওর ব্যাগটা সার্চ করা যায় তাহলেই বামাল সমেত চোরকে ধরা যাবে।”
আমি তো অবাক! আমি তমালকে যতদূর জানি ও খুবই ভাল স্বভাবের ও ভদ্র ছেলে, সে করবে এই কাজ! আমার মন কিছুতেই মানতে চাইছিল না কারণ আমি যুধিষ্ঠির কে খুব ভালো করেই চিনি, অসম্ভব মিথ্যেবাদী সে। তবুও আমরা কয়েকজন ছাত্র যুধিষ্ঠিরের কথা মত দল বেঁধে হেডস্যারের ঘরে গিয়ে যুধিষ্ঠির যে কথাগুলো বলেছিল সেটার বিবরণ দিলাম। আমাদের হেডস্যার রতনবাবু খুব রাশভারী মানুষ। সকলেই ওনাকে খুব ভয় পান। তিনি আমাদের সব কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তমালদের ক্লাসে উপস্থিত হলেন। আমরাও ওনার পিছু নিলাম। কৌতুহল তো ছিলই, উপরন্তু একটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল আমার মনে।
স্যার ক্লাসে ঢুকেই বললেন-“ তোমরা নিশ্চয় জানো বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ক্লাস থেকে বই, খাতা, ইত্যাদি চুরি যাচ্ছে। আজকেও অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রের টিফিন বক্স চুরি গেছে। তোমরা এক্ষুনি তোমাদের প্রত্যেকের ব্যাগ খুলে আমায় দেখাও।” 
সবাই স্যারের কথামতো যে যার ব্যাগ খুলে স্যারকে দেখাতে লাগল। এরই মধ্যে হঠাত্‍ যুধিষ্ঠির তমালের ব্যাগ খুলে একটা টিফিন বক্স বার করে চিত্‍কার করে উঠল- 
“স্যার-স্যার, এই দেখুন অনিলের টিফিন বক্স। অনিল নিজেই জানে না ওর ব্যাগ থেকে কখন টিফিন বক্স চুরি গেছে! ওকে জিজ্ঞেস করে দেখুন এটা ওরই টিফিন বক্স কিনা?”
“অনিল এটা কি তোমার টিফিন বক্স? দেখে বল।” 
“হ্যাঁ স্যার, এটা আমারই টিফিন বক্স কিন্তু আমি জানি না কে এটা কখন চুরি করেছে। আমি নিজে কাউকে চুরি করতে দেখিনি।”
হেডস্যার রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। তমালকে বললেন – 
“কালই তুমি তোমার বাবাকে আমার সাথে দেখা করতে বলবে। এইরকম ছাত্রকে আমাদের স্কুলে রাখা যাবে না।”
“স্যার, বিশ্বাস করুন, এই টিফিন বক্স আমি চুরি করিনি। কেউ শত্রুতা করে বা মজা করে আমার ব্যাগে রেখে দিয়েছে। আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি না।” 
“আমার মুখের উপর কথা? বেরিয়ে যাও ক্লাস ছেড়ে।”
ক্লাসের সব ছাত্রদের সামনে চোর অপবাদে তমালের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল সে।

    আমার মনে কিন্তু একটা খটকা রয়েই গেল। আমি কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিলাম না। আমি স্কুল ছুটির পর যুধিষ্ঠিরকে চেপে ধরলাম। 
“তুই যে মিথ্যা বলছিস এটা জলের মত পরিষ্কার। তুই দশম শ্রেণীর ছাত্র হয়ে কি জন্য অষ্টম শ্রেণীর ঘরে গিয়েছিলিস বল? আর সেই সময় তুই যখন দেখলি তমাল চুরি করছে, তখনই তুই চিত্‍কার করে অন্য ছাত্রদের ডাকলি না কেন?”
বার বার চেপে ধরাতে শেষ পর্যন্ত আমার কাছে যুধিষ্ঠির ওর অপরাধের কথা স্বীকার করল। বলল- তমাল একদিন সবার সামনে ওকে অপমান করেছিল তাই ও তার বদলা নেবার জন্যই এই অপবাদ দিয়েছে। যদিও আমি এই কথা আর কাউকে জানতে দিই নি, কারণ তাহলে হেডস্যার যুধিষ্ঠিরকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিতই। কোনও ছাত্রেরই যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেটাই আমি চেয়েছিলাম। যাইহোক, আমরা দু-তিনজন ছাত্র হেডস্যারকে অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে তমালের বাড়িতে কাউকে না জানাতে অনুরোধ করলাম। শাস্তির হাত থেকে বেঁচে গেল তমাল। এইরকম কতবার যে মিথ্যে রটিয়েছে যুধিষ্ঠির তার ইয়ত্তা নেই। সব এখানে বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। তাই আমি শুধু আর একটা ঘটনার উল্লেখ করেই আমার মূল কাহিনীতে আবার ফিরে যাব। 

    আমাদের পাড়ার মাধাই মোড়লের ছেলে জগাই কলকাতার জুটমিলে কাজ করত। জগাই মাসে একবার থেকে দুবার বাড়িতে আসত। একদিন পাড়ায় কি ভাবে জানি রটে গেল জুটমিলের মেসিনে কাজ করতে গিয়ে জগাইয়ের একটা হাত কাটা গেছে। জগাই গুরুতর আহত অবস্থায় কলকাতার কোন এক হাসপাতালে ভর্তি। খবর শুনেই জগাইদের বাড়িতে হুলস্থূল পড়ে গেল। জগাইয়ের বাবা দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কলকাতা ছুটলেন ছেলের খবর নিতে। যে সময়ের ঘটনা বলছি সেই সময় এখনকার মত মোবাইল ফোনের চল ছিল না। কাজেই হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরেও জগাইয়ের খোঁজ মেলে না। পরের দিন কি ভাবে জানি জানা গেল এরকম কোন ঘটনাই ঘটে নি। শুধুমাত্র মোড়লকে জব্দ করার জন্যই কেউ এই মিথ্যে রটিয়েছে। আমি নিশ্চিত  এটাও যুধিষ্ঠিরের কাজ। কারণ এই মাধাই মোড়ল মানুষটা মোটেও ভাল না। দু-চার দিন আগেই মোড়লের সাথে যুধিষ্ঠিরের তর্কাতর্কি হয়েছিল। কাজেই দুয়ে-দুয়ে চার করতে বেশি সময় আমার লাগে নি, তবে প্রমানাভাবে কিছু বলতে পারি নি। 

    এইভাবেই চলছিল- হঠাত্‍ খবর পেলাম যুধিষ্ঠির কি ভাবে যেন নিজের বাড়িতে  অজ্ঞান হয়ে গেছে! পড়িমড়ি করে যুধিষ্ঠিরের বাড়ি পৌঁছে দেখি বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। পাড়ার যতীন ডাক্তার যুধিষ্ঠিরকে পরীক্ষা করছে। নাড়ির গতি অতি ক্ষীণ, বাঁচার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। এরপর দুদিন ধরে চলল যমে-মানুষে টানাটানি, কিছুতেই জ্ঞান আর ফেরে না। যতীন ডাক্তার একপ্রকার জবাব দিয়ে চলে গেলেন। আমি কিন্তু মন থেকে বিশ্বাস হারাই নি, ঠায় যুধিষ্ঠিরের কাছে বসে আছি আর ভগবান কে একমনে ডাকছি। হঠাত্‍ দেখি যুধিষ্ঠিরের চোখের পাতা সামান্য নড়ে উঠল। আমি চিত্‍কার করে উঠলাম। বাড়ির সকলেই দৌড়ে এল যুধিষ্ঠিরের কাছে। এবার যুধিষ্ঠির ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইল, যেন কিছুই হয় নি তার! যুধিষ্ঠির বাড়িতে এত লোকজন দেখে খুব অবাক হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল- 
“বাড়িতে এত লোকজন কেন? আর সকলে এত কান্নাকাটিই বা করছে কেন?” 
আমি যুধিষ্ঠিরকে সব ঘটনা খুলে বললাম। সব শুনে ও মিচকি হাসল, তারপর জোর করে আমায় ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। 
আমি বললাম-“ একি কান্ড করছিস তুই? আমি তো মাথামুন্ডু কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।”
যুধিষ্ঠির বলল-“ আমি সব বুঝিয়ে বলছি তোকে। বিশ্বাস করা বা না করা তোর ব্যাপার। তবে এটা ঠিক আজ আমি তোকে যেটা বলব সেটা সম্পুর্ণ সত্যি এর মধ্যে কোনও মিথ্যা নেই। সেদিন রাতে  আমি বিছানায় ঘুমিয়ে আছি, হঠাত্‍ দেখি আমার ঘর আলোয় আলোয় ভরে গেছে। অবাক হয়ে আমি তাকাতেই দেখি যমরাজ আমার ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। যমরাজ বলল তুই মর্ত্যে বহু মিথ্যে কথা বলেছিস, বহু লোককে বিপদে ফেলেছিস তাই তোকে নরকবাস করতে হবে। আমি কিছুতেই যাব না, যমরাজ ও ছাড়বে না। একপ্রস্থ ধস্তাধস্তি হবার পর যমরাজ প্রায় জোর করে আমায় নরকে নিয়ে গেল। ও! সে কি বিভত্‍স দৃশ্য! দেখলে শিউরে উঠতে হবে! কাউকে গরম তেলে ভাজা হচ্ছে, কাউকে বেত দিয়ে মারা হচ্ছে, আবার কাউকে গরম শিক দিয়ে খোঁচা দেওয়া হচ্ছে! নরক দেখার পর যমরাজ আমায় বলল, তুমি কি শাস্তি চাও বল। আমি যমরাজের পা জড়িয়ে হাউ-হাউ করে কেঁদে উঠলাম। বললাম- হে যমরাজ আপনি আমায় একবার দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে নিয়ে চলুন। আমি তার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইব। যদি তিনি আমায় ক্ষমা না করেন তাহলে আপনি আমায় যে শাস্তি দেবেন তাই আমি মাথা পেতে নেব। যমরাজ কি চিন্তা করলেন জানি না উনি আমায় দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে নিয়ে গেলেন। বললেন হে প্রভু এই সেই  ছেলেটি যে মর্ত্যে অনেক পাপ কাজ করেছে। মিথ্যা কথা বলে অন্যদের অসুবিধা করেছে। তাই আমি আপনার আদেশ মত ওকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওই বালক অনেক কান্নাকাটি করে আপনার সঙ্গে একবার দেখা করার অনুমতি চাইল। হে প্রভু! তাই আমি ওকে আপনার কাছে এনেছি। আমি এই সুযোগে দেবরাজ ইন্দ্রের পা জড়িয়ে ধরে বললাম হে প্রভু! আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেবার আগে কিছু বলার সুযোগ দিন। দেবরাজ ইন্দ্র রাজি হলেন। আমি বলতে শুরু করলাম- শুনেছি ছোটবেলায় আমার একটা গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় আমায় বাঁচাবার জন্য হাসপাতালে নাকি আমায় বেশ কয়েক বোতল রক্ত দিতে হয়েছিল। প্রভু, আমার মনে হয় ওই রক্তের বোতলগুলোর মধ্যে কোন না কোন বোতলে চোরের কিংবা কোন মিথ্যেবাদী মানুষের শরীরের রক্ত ছিল। ওই রক্ত আমার শরীরে ঢুকেছে বলেই.......
দেবরাজ ইন্দ্র সব শুনে হেসে ফেললেন।এরপর দেবরাজ ইন্দ্র আমায় বললেন তোর উপর থেকে শাস্তি আমি তুলে নিতে পারি তবে একটা শর্তে। আমি বললাম হে প্রভু! আপনি আদেশ করুন কি করতে হবে আমাকে, আমি আপনার সব শর্ত মেনে নেব। দেবরাজ ইন্দ্র বললেন তুই ভেবে-চিন্তে বলছিস তো? আমি বললাম হ্যাঁ প্রভু। বেশ তবে শোন শর্ত। আজ থেকে মর্ত্যে ফিরে গিয়ে আর কোনদিন মিথ্যে কথা বলতে পারবি না, কোনও কিছু চুরি করবি না, সবার উপকার করার চেষ্টা করতে হবে, কোনও অন্যায় হচ্ছে দেখলে রুখে দাঁড়াতে হবে। এর অন্যথা হলে, সেইদিনই তোর মৃত্যু হবে। আমি সানন্দে রাজি হলাম। এবার ভয়ে ভয়ে দেবরাজ ইন্দ্র্কে বললাম হে প্রভু! আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে একবার স্বর্গ দেখার অনুমতি দিন। ছোটবেলা থেকেই স্বর্গ দেখার বড় সাধ ছিল মনে। দেবরাজ হেসে উঠে নিজেই সঙ্গে করে আমায় স্বর্গ দেখাতে নিয়ে গেলেন। কি সুন্দর স্বর্গোদ্যান! চারিদিকে সোনার গাছে নানারকম ফুল, ফল ধরে আছে। বাগানের মধ্যে কুলকুল শব্দে ঝর্ণা বয়ে চলেছে, নীল সরোবরে সোনার পদ্ম ফুটে আছে, বাগানের মধ্যেই হরিণ, ময়ূর আরও কত নাম না জানা পশু-পাখি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাগানের আর একদিকে দেবতারা সোনার দোলনায় দোল খাচ্ছেন। কি সুন্দর ঝলমলে সোনার জরির কাজ করা পোশাক তাদের গায়ে! নাচঘরে যখন গেলাম তখন দেখলাম কয়েকজন অপ্সরা দেবতাদের সামনে নৃত্য পরিবেশন করছে-কি অপরূপ তাদের দেখতে! এই দুদিন তো আমি স্বর্গেই ছিলাম! আজই দেবরাজ ইন্দ্র আমায় মর্ত্যে পাঠিয়ে দিলেন।“
আমি হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল যুধিষ্ঠিরের উপর। ওর সঙ্গে তর্ক না করে আমি নিজেই রাগ করে বাড়ি ফিরে এলাম। 

    এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা আরম্ভ হল। পরীক্ষায় আমরা যে যার মত উত্তর লেখার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে একে অপরের থেকে টুকটাক সাহায্য নিচ্ছি। হঠাত্‍ যুধিষ্ঠিরের দিকে চোখ পড়তে দেখি ও কলম খুলে বসেই আছে, কিছুই প্রায় লিখছে না খাতায়। আমি যুধিষ্ঠির কে খাতা খুলে কয়েকটা ছোট প্রশ্নের উত্তর দেখিয়ে দিলাম। কি আশ্চর্য! ও বলল আমি পরীক্ষার খাতায় টুকে লিখতে পারব না- এটা অন্যায়। ওদিকে দু-একজন ছাত্র বই খুলে লেখার চেষ্টা করতেই যুধিষ্ঠির চিত্‍কার করে যিনি পরীক্ষার গার্ড দিচ্ছিলেন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। যুধিষ্ঠিরের এই আকস্মিক আচরণে আমি তো অবাক!

    যথারীতি বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে দেখা গেল যে যুধিষ্ঠির পরীক্ষায় ফেল করেছে। কিন্তু অবাক কান্ড এই যে- এর জন্য যুধিষ্ঠির কে অনুতপ্ত হতে দেখলাম না। আমি এখন কলকাতায় পড়তে এসেছি। যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে যোগসূত্রটা ক্রমশ: আলগা হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে মায়ের থেকে যুধিষ্ঠিরের কিছু কিছু খবর পাই। এক সপ্তাহ হল মায়ের কাছ থেকে একটা লম্বা চিঠি পেলাম। 
মা লিখেছেন- আশা করি তোমার পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে। আমরাও বাড়ির সবাই ভাল আছি। একটা কথা তোমায় জানাবার জন্য তোমায় এই চিঠি। তোমার বন্ধু যুধিষ্ঠির স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। এখন ওর কাজ বলতে পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে ঘুরে দেখা যে কেউ কোন অন্যায় বা দুর্নীতি করছে কিনা! কোন অন্যায় দেখলেই সোজা থানায় গিয়ে পুলিশে নালিশ জানাচ্ছে। আবার পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বোঝাচ্ছে মিথ্যে কথা যেন না বলে। কোন চোর-গুণ্ডা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশের হয়ে সাক্ষী দিয়ে আসছে ইত্যাদি ইত্যাদি। পাড়ার লোকে এখন তোমার বন্ধুকে “ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির” নামে ডাকে।তাতে অবশ্য তোমার বন্ধুর কোন হেলদোল নেই।

    
চিঠিটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে রইলাম চুপ করে। তাহলে কি যুধিষ্ঠির ওর ঘরে ডেকে আমায় সেদিন সত্যি কথাই বলেছিল? ওর অবচেতন মন কি সত্যি-সত্যিই সেদিন কল্পনার জগতে ভর করে স্বর্গে গিয়েছিল, না কি অন্য কিছু? না! আমার বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে কোনভাবেই এর ব্যাখা করতে পারলাম না।
                    ---*---  
    
      

     
   
    



 

রচনাকাল : ২৬/১২/২০২০
© কিশলয় এবং রূপক ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 7  Canada : 1  China : 6  France : 3  Germany : 1  Hungary : 6  India : 127  Ireland : 9  Japan : 2  Philippines : 1  
Romania : 1  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 6  Sweden : 87  Ukraine : 4  United States : 169  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 7  Canada : 1  China : 6  France : 3  
Germany : 1  Hungary : 6  India : 127  Ireland : 9  
Japan : 2  Philippines : 1  Romania : 1  Russian Federat : 3  
Saudi Arabia : 6  Sweden : 87  Ukraine : 4  United States : 169  
© কিশলয় এবং রূপক ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির by Rupak Ghosh is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৬৮৭৯
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী