বাদশা
আনুমানিক পঠন সময় : ৯ মিনিট

লেখক : রূপক ঘোষ
দেশ : ভারতবর্ষ , শহর : কলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৫৩ টি লেখনী ৩৪ টি দেশ ব্যাপী ১৩৯০০ জন পড়েছেন।
Rupak Ghosh
~ বাদশা ~
 রূপক ঘোষ 

    কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে অধ্যাপনার সুবাদে আমি আশুতোষ মুখার্জী  কলেজের কাছেই একটা ছোট একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সস্ত্রীক প্রায় ছয় মাস হল বসবাস করছি। আমার কোন সন্তান নেই, থাকার মধ্যে একটা তিন মাসের সাদা ধপধপে স্প্যানিয়েল কুকুর ‘সম্রাট’। আমি ঘর থেকে কলেজে ছাড়া সচারচর খুব একটা বাইরে বের হই না, ফলে পাড়ার আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে পরিচিত হবার সেরূপ সুযোগ ঘটে নি। একমাত্র মুখ চেনা বলতে আমার বাড়ির ঠিক উল্টোদিকের বাড়ির গৃহকর্তা রাধারমণবাবু। বয়স প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই, সাদা-পাকা চুল, লম্বা এবং স্বাস্থ্যবান। উনি প্রতিদিনই নিয়মিত ভাবে প্রাত:ভ্রমণে বের হন দেখতে পাই। সেই সূত্রে ওনার সাথে রাস্তায় একদিন সামান্য আলাপ হবার সুযোগ ঘটেছিল। 

    রবিবার, বাড়িতে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছি, হঠাত্‍ বাইরের দরজায় কলিং বেলের শব্দ। একটু অবাক হলাম! আমার তো এখানে সেরূপ পরিচিতি নেই কারোর সাথে তাহলে এই সময়ে আবার কে আসলো? সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুলতেই দেখি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাধারমণবাবু। 
“আসুন আসুন, ঘরে আসুন। আমি তো অনুমান করতেই পারিনি যে আপনি আসবেন। বসুন চেয়ারে বসুন।” 
“অনেকদিন ধরেই আপনার সাথে ভালভাবে আলাপ করব বলে ঠিক করেছিলাম কিন্তু কিছুতেই আসা হয়ে উঠছিল না। আজ প্রায় একপ্রকার জোর করেই আপনার বাড়িতে চলে এলাম। হঠাত্‍ এইভাবে এসে আপনার কাজের কোনও ব্যাঘাত ঘটালাম কিনা কি জানি? "
“ছি:ছি: এ কি বলছেন, ভালই তো করেছেন। আমারও তো এই মাস ছয়েকের মধ্যে আপনার সাথে আলাপ করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। আজ আমার হাতে সেরকম কাজ নেই আর কলেজে ও ছুটি কাজেই কোনও অসুবিধা হবে না।” 
রাধারমণবাবুকে বসতে বলে আমি আমার গৃহিণীকে দু-কাপ চা আর সামান্য কিছু জলখাবার দিতে বললাম। চা খেতে খেতে নানারকম কথাবার্তা হচ্ছে, আমার স্ত্রী মনিকা ও যোগ দিয়েছে এই আলাপচারিতায়। হঠাত্‍ সম্রাট এসে হাজির আমার বৈঠকখানায়। রাধারমণবাবু আমার কুকুর ছানাটাকে দেখে খুব আদর করতে লাগলেন। 
“আপনি বোধহয় কুকুর খুব ভালবাসেন?”
সাধারণ কথা, তাতেই উনি যেন কেমন অন্যমনষ্ক হয়ে পড়লেন। দৃষ্টি আমার উপরই নিবদ্ধ, কিন্তু মনটা যেন অন্য জগতে। আমি কিছুটা বিস্মিত হলাম, কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে কেমন যেন বাধো-বাধো ঠেকছিল। দু-তিন মিনিট পর রাধারমণবাবু নিজেই নীরবতা ভঙ্গ করলেন।
“জানেন আশুতোষবাবু আপনার সম্রাট অনেকদিন আগের ঘটে যাওয়া একটা দু:খময় স্মৃতি আমায় মনে করিয়ে দিল।”
আবার সামান্য চুপচাপ। দেখলেই বোঝা যায় তিনি আবার অতীতের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন। 
“শুনবেন নাকি সেই বেদনাময় ঘটনা?”
কেন জানি না আমারও ঘটনাটা জানার এক অদম্য কৌতূহল হচ্ছিল, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে প্রকাশ করতে পারছিলাম না। তাই বললাম- 
“আপনার আপত্তি না থাকলে আমার শুনতে কোন বাধা নেই। আমি কিছুটা সখের লেখা-লিখি করি, সেই সুবাদে আপনার এই ঘটনা থেকে আমিও হয়তো কোন লেখার রসদ পেয়ে যেতে পারি।” 
আজ প্রায় দীর্ঘ দশ বছর পর আমি এই ঘটনাটা রাধারমণবাবুর কাছ থেকে যেরূপ শুনেছিলাম ঠিক তেমনই লিপিবদ্ধ করব। জানিনা আজ তিনি কোথায়? কেননা কয়েক বছর আগেই তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি বিক্রি করে কোথায় যেন চলে গেছেন। যাইহোক, আমি এখন অবিকল রাধারমণবাবুর বর্ণিত ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি করব মাত্র। 

    আমার বয়স তখন পঁচিশ। ব্যবসার সূত্রে এই নদীয়ায় কৃষনগরে আসা। ব্যবসা বলতে মেডিসিনের। তখনও বিয়ে-থা করি নি। আমি এখন যে বাড়িতে আছি, সেই বাড়িতেই তখন ভাড়া থাকতাম। পারে আমি বাড়িটা কিনেছি। বাড়িতে থাকার মধ্যে আমি আর কমলা। কমলা আমার বাড়ির সর্বক্ষনের কাজের মেয়ে। বয়স কত আর হবে? বড়জোর বাইশ। শান্ত-শিষ্ট, রোগা-পাতলা গড়ন, মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে আছে। কমলার তিন কূলে কেউ ছিল না, তাই আমার বাড়িতেই তার একটা আশ্রয় জুটেছিল। একদিন দোকান বন্ধ করে হেঁটে বাড়ি ফিরছি, তখন কটা হবে? বড়জোর সন্ধ্যা সাতটা, হঠাত্‍ মনে হল আমার পায়ে কি একটা নরম জিনিস যেন জড়িয়ে যাচ্ছে বারবার। অন্ধকারে ভাল করে ঠাহর করে দেখি একটা ছোট্ট সাদা তুলতুলে কুকুর ছানা আমার পা-টা বারবার জড়িয়ে ধরছে। দেখেই বুঝতে পারলাম সারাদিন কিছু খাওয়া জোটে নি ওর। কেন জানি না খুব মায়া হল, কোলে তুলে নিলাম ছানাটাকে। ওমা! কোলে উঠেই ব্যাটা কুঁই-কুঁই করে ডাকতে লাগল আর ঘন ঘন ল্যাজটা নাড়তে লাগল। আমি পা চালিয়ে বাড়িতে এসেই কমলাকে হাঁক পাড়লাম-
“কমলা তাড়াতাড়ি এদিকে আয়, দেখ কি নিয়ে এসেছি!”
কমলা বোধহয় রান্না করছিল, ওই অবস্থায় বাইরের ঘরে এসে আমার হাতে কুকুর ছানাটা দেখে হেসে লুটোপুটি। 
“এ কি করেছেন দাদাবাবু? আপনি বড় করবেন এই কুকুরছানাকে? তাহলেই হয়েছে। আপনার নিজেরই তালের ঠিক নেই, সময়মত নিজের নাওয়া-খাওয়া করতেই ভুলে যান, আমি মনে করে না দিলে অনেকদিন আপনার সময়মত খাওয়াই জুটতো না। এ আপনার কম্ম নয়, বরং ছানাটা কে আমায় দিন দেখি কি করা যায়! কথাটা ঠিক। কমলা আছে বলেই বাড়িতে একটা লক্ষ্মীশ্রী আছে। চারিদিকে কমলার সজাগ দৃষ্টি, মাঝে-মধ্যে আমাকেও বকা-ঝকা করে তবে এই শাসন আমার মোটেও খারাপ লাগে না, বরং মনে মনে খুব আনন্দ পাই। কিন্তু প্রকাশ করি না, বরং ভাব দেখাই সত্যিই আমার ভুল হয়ে গেছে। একটু পরেই দেখি কমলা কুকুর ছানাটাকে স্নান করিয়ে, চিরুনি দিয়ে লোম আঁচড়িয়ে একটা বাটিতে গরম দুধ দিয়েছে খেতে। আর ও ব্যাটাও কী সুন্দর বাটিতে মুখ দিয়ে চুক-চুক করে দুধ খাচ্ছে। আমি কমলাকে বললাম-“তুইতো সারাক্ষণ বাড়িতে এক থাকিস তাই তোর একটা সর্বক্ষনের সাথী এনে দিলাম।”
কমলা কুকুর ছানাটা পেয়ে বেজায় খুশি। বলে-
“দাদাবাবু দেখবেন আমি ওকে কত যত্নে বড় করে তুলি।”
“কি নামে ডাকবি চিন্তা করেছিস কিছু?”
“আমি ওর নাম ঠিক করে ফেলেছি- ‘বাদশা’।”
 একটু একটু করে বড় হচ্ছে বাদশা। বাদশা আমার বড় ন্যাওটা হয়েছে। সময় নেই অসময় নেই আমার গায়ের কাছে ঘুর-ঘুর করবে, জিভ দিয়ে আমার গা চেটে আদর করবে নতুবা কোলে ঠেলে উঠবে। এদিকে কমলা মাঝে মধ্যেই আমায় হুকুম করবে বাদশার বিস্কুট নেই, বাদশার স্নানের সাবান ফুরিয়ে গেছে, গলার বগলেসটা ছিঁড়ে গেছে এইসব আর কি! বাদশার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমি বিয়ে করলাম। নদীয়া জেলারই মেয়ে, তেহট্টে বাড়ি। আমার স্ত্রীর নাম-লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর বাপের বাড়ির অবস্থা ভাল নয়। সত্‍মায়ের কাছে বড় হয়েছে। পরিবারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পায়নি সেই অর্থে। আমার বাড়িতে আসার পর কয়েক মাসের মধ্যেই সংসারের কতৃত্ত্ব ধীরে ধীরে কমলার হাত থেকে নিজের হাতে নেবার চেষ্টা করতে শুরু করল। মুখে কিছু কমলাকে বলছে না, কিন্তু হাব-ভাবে বুঝিয়ে দিতে কসুর করছে না, যে তুমি বাড়ির কাজের লোক, কাজের লোকের মতই থাকবে। এমনকি কমলা যে বাদশাকে আদর-যত্ন করে সেটাও লক্ষ্মীর পছন্দ নয়। আমি সবই দেখতে পাই, তবু চুপ করে থাকি, পাছে বাড়িতে অশান্তি হয় সেই ভয়ে। একদিন কমলা আমার ঘরে এসে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দু:খের কথা বলছিল- কি ভাবে আমার স্ত্রী ওকে বিনা কারণে অপমান করে, গালমন্দ করে সেই সব কথা! ঠিক সেই সময় আমার স্ত্রী রনংদেহীরূপে ঘরে ঢুকে কমলাকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করল। আমাকেও কমলাকে জড়িয়ে কুত্‍সিত ইঙ্গিত করল। লজ্জায়, অপমানে আমি মরমে মরমে মরে গেলাম। কমলার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি অপমানে কমলার মুখটা কাগজের মত সাদা হয়ে গেছে আর চোখ থেকে অঝোরে নেমে আসছে অশ্রুধারা। আমার বাদশা ও যেন এই ঘটনাগুলো বুঝতে পারল। দিনে-দিনে কেমন যেন মনমরা হয়ে গেল বাদশা। এই ঘটনার তিন-চার দিন পর কমলাকে ডেকে বললাম- 
“ এই কলঙ্ক মাথায় নিয়ে তোকে আমার বাড়ি আর কাজ করতে হবে না। তুই বরং অন্য কোন বাড়িতে কাজ দেখে নে। অবশ্য যত দিন না তুই কাজ যোগাড় করতে পারছিস ততদিন এখানেই থাক।” 
লক্ষ্মীকে না জানিয়ে কমলাকে কুড়ি হাজার টাকা দিলাম। প্রথমে কিছুতেই নেবে না, অনেক বোঝাবার পর তবে টাকাটা নিল। এর দুদিন পর কমলা আমার বাড়ি ছেড়ে পাশেই একটা বাড়িতে কাজ নিল। আমার স্ত্রী বাদশাকে একদম সহ্য করতে পারছিল না। ওর সর্বদা মনে হত বাদশা বোধহয় আমার থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছে। এখন কমলা নেই তাই বাদশাও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল। বাদশা এখন কখন-সখন আমার ঘরে আসে, চোখ দুটো করুন করে কি যেন বলতে চায়, আমি বুঝতে পারি না। হয়ত কমলা কোথায় গেছে জানতে চায়! 

    এর ঠিক সপ্তাহ খানেক পর বাদশাকে বাড়িতে খুঁজে পাওয়া গেল না। সারা পাড়া তন্ন-তন্ন করে খুঁজে বেড়ালাম, কোথাও বাদশাকে পেলাম না, যেন কর্পুরের মত উবে গেছে। 
এদিকে লক্ষ্মীর মুখে হাসি ফুটেছে বলে-“যাক বাবা এতদিনে দুটো আপদই বিদায় হল।” 
জীবনে এই প্রথম আমি সংযম হারালাম- সজোরে ঠাস-ঠাস করে লক্ষ্মীর গালে চড় বসিয়ে দিলাম। 
“নীচ! বেহায়া! বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।”
ঘটনার আকস্মিকতায় লক্ষ্মী প্রথমে খানিকটা হতভম্ব হয়ে পড়ে তারপর আবার চিত্‍কার করে  অকথ্য গালিগালাজ করতে লাগল। এরপরের ঘটনা খুব সামান্য। আমি লক্ষ্মীকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কমলাকে আবার ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। শুধু বাদশাকেই খুঁজে আনতে ব্যর্থ হয়েছি আমি। এরপর কেটে গেছে আরও এক বছর।

    সেদিন শীতের রাত। দোকান বন্ধ করে প্রায় রাত দশটার সময় হেঁটে বাড়ি ফিরছি। রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। মহাজনকে দেবার জন্য আমার ব্যাগে রয়েছে প্রায় লাখ দুয়েক টাকা। হঠাত্‍ কোথা থেকে জানি না, রাস্তা ফুঁড়ে দুইজন ষণ্ডা-মার্কা চেহারার লোক আমাকে ধাক্কা দিয়ে টাকার ব্যাগটা কেড়ে নেবার চেষ্টা করল। আমি চিত্‍কার করতে লাগলাম, কিন্তু রাস্তা জনমানবশূন্য তাই আমার চিত্‍কারে কেউ এগিয়ে এল না। ধস্তাধস্তি হচ্ছে, আমিও ব্যাগ দেব না, ওরাও ব্যাগ ছিনিয়ে নেবে। এই সময় দেখি দূর থেকে ঘেউ-ঘেউ করতে করতে এগিয়ে আসছে একপাল কুকুর। কি হিংস্র চেহারা তাদের! আমি সভয়ে চোখ বন্ধ করলাম। মনে মনে ভাবছি হয় গুণ্ডাদের হাতে নয় কুকুরগুলোর কাছে প্রাণটা যাবে। হঠাত্‍ শুনতে পেলাম হিংস্র গর্জন আর ঝটাপটির শব্দ। ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখি কুকুরগুলো একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওই গুণ্ডা দুটোর উপর। গুণ্ডা দুটোর হাতে উদ্যত ছুরি। প্রাণপণে চেষ্টা করছে নিজেদের বাঁচাতে আর বারবার আঘাত করতে চাইছে কুকুরগুলোকে। কুকুরগুলো ও ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিচ্ছে গুণ্ডা দুটোকে।

    কিন্তু, একি! এ আমি কি দেখছি চোখের সামনে? সবচেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার বাদশা। আমি নির্বাক! চোখ সরছে না। হঠাত্‍ লক্ষ্য করলাম আমার ব্যাগটা পড়ে আছে সামান্য দূরে। আমি উঠে হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিতে গেলে একটা গুণ্ডা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালো। আর সেই মূহুর্তে ঘটল সেই অলৌকিক ঘটনা। চকিতে আমার সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে গেল বাদশা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বাদশার বুক। বাকি কুকুরগুলো এবার আরও হিংস্র হয়ে উঠল। নিমেষে ঝাঁপিয়ে পড়ল শয়তান দুটোর উপর। তারপর গুণ্ডা দুটোর নিথর দেহের উপর পা তুলে উল্লাসে ডেকে উঠল- ভৌ-ভৌ। দ্রুত হতভম্ব অবস্থা কাটিয়ে আমি কোনরকমে বাদশার মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। বাদশা করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপর আমায় শেষবারের মত বিদায় জানিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল চিরদিনের মত। বাদশার সৈনিকেরা করুণ স্বরে একসাথে ডেকে উঠল-ভৌ....।যেন আমার পাশাপাশি তারাও চির বিদায় জানাল বাদশাকে।

    
    সৈনিকেরা চলে গেছে। রণক্ষেত্রে শুধু আমি একা, বুকে জড়িয়ে আছি আমার বাদশাকে। নিদারুণ যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছে আমার বুক। মনে হচ্ছে হৃত্পিণ্ডটা আমার বেরিয়ে আসবে। ভেসে উঠছে বাদশার ছোটবেলার টুকরো টুকরো স্মৃতি। মনে মনে বললাম-বাদশা তুই কি এইভাবে আমার ভালোবাসার প্রতিদান দিলি? অভিমান করে চলে গিয়েও আমায় ভুলতে পারিস নি? তাই কি আবার ফিরে এসে আমায় শেষবারের মত দেখা দিয়ে চলে গেলি? অবসন্ন মনে আর চিন্তা করতে পারছিলাম না। ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছিল চেতনা। অচৈতন্য হয়ে ঢলে পড়লাম রাস্তার উপর। যখন জ্ঞান এল তখন দেখি আমি বাড়িতে। উদ্বিগ্নভাবে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কমলা। বাড়িতে ডাক্তার এবং পাড়া প্রতিবেশী ভর্তি। অদূরে বৈঠকখানায় নিথর ভাবে পড়ে আছে আমার বাদশা।

    ঘটনার এখানেই পরিসমাপ্তি। কাহিনী শেষ করে রাধরমণবাবু যখন উঠে দাঁড়ালেন তখন আমার ঘরের পরিবেশটা একদম থমথমে হয়ে গেছে। ধীর পদক্ষেপে উদাস ভঙ্গিতে রাধরমণবাবু বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে গেলেন। 
                    ---*---  

                       
           
      
  

      
 


রচনাকাল : ২৩/১২/২০২০
© কিশলয় এবং রূপক ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 8  Europe : 1  France : 5  India : 61  Romania : 1  Russian Federat : 11  Saudi Arabia : 8  Sweden : 87  Ukraine : 4  
United States : 94  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 8  Europe : 1  France : 5  
India : 61  Romania : 1  Russian Federat : 11  Saudi Arabia : 8  
Sweden : 87  Ukraine : 4  United States : 94  
© কিশলয় এবং রূপক ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বাদশা by Rupak Ghosh is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৮৫৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী