পুরোনো বন্ধু
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : প্রতীক মিত্র
দেশ : India , শহর : Konnagar

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , অক্টোবর
প্রকাশিত ৮ টি লেখনী ১৫ টি দেশ ব্যাপী ১৮৯৩ জন পড়েছেন।
                                    পুরোনো বন্ধু

ফোনে ওয়াটসঅ্যাপে যে ছবিটা এসেছিল তা দেখে চেনা দায়।গাড়ি নিয়ে সামনে এলে,অসীম ছোটোবেলার বন্ধুকে চিনতে পারে নিমেষেই।ওর নামটাই মনে পড়ছিল না।অসীমরা স্কুলে শিক্ষক হোক কিম্বা সহপাঠী প্রত্যেকের উষ্টুম-ধুষ্টুম সব নাম দিত।পাউডার।এটা ছিল এই বন্ধুটার নাম।কেন তা আর মনে পড়ছে না।চোখাচুখি হতেই বন্ধু নিজেই যেচে কথা শুরু করলো।তমাল হল ওর ভালো নাম।নিজেই হেসে বললো,ওর ভালো নাম অসীমের মনে থাকবে কি করে?ক্যারম খেলার ভাল হাত ছিল আর বোর্ডে পাউডার ঢেলে ঢেলে মতলব ছিল খালি সেঞ্চুরি বোর্ড করার।ফলে পাউডারটাই রয়ে গেল।তারপর কত যে কথা…ঘর-সংসার-রাজনীতি-খেলা কি নেই তাতে।অসীমের কথায় সে সহমত পোষণ করলো যে রাস্তায় অন্যসময় দেখা হলে নির্ঘাৎ একে অন্যকে পাশ কাটিয়ে যেত ওরা। অসীমর অ্যাপ কারে বিশেষ ভরসা নেই।তাই কোথাও যাওয়ার থাকলে জনৈক অমুকদার থেকেই গাড়ি নেয়।এটাও সেই দাদারই গাড়ি। ওর বন্ধু কিন্তু বলে দিল,গাড়িটা ওর।কথা আর একটু এগোতে অসীম বুঝলো ড্রাইভারির পাশাপাশি মিথ্যে বলাতেও সে বেশ দক্ষ।অথচ ছোটোবেলায় এদেরই কি সচ্ছ্বল অবস্থা ছিল।শুধু অসীম নয় অসীমের মত আরো কতজন ওর বাড়িতে পড়ে থাকতো ভালোমন্দ খাওয়ার লোভে।কি যেন ধামের নামে বাড়িটার।বাড়ির প্রাঙ্গনে ময়ুর ঘুরে বেড়াতো। সে বাড়ি আজ আর নেই।সেখানে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ি।বুকিং চলছে।অসীমের বউএর বায়নাতে সেখানে তার বুকিং প্রায় হয়েই আছে ।এয়ারপোর্টে দাঁড়াতে হল আরো খানিকক্ষণ।কুয়াশার কারণে প্লেন লেট।কোম্পানীর বেশ ওজনদার ক্লাইয়েন্ট।বস ওকে এবং ওর ইংরেজী বলার দক্ষতাকে ভরসা করে বলে পাঠিয়েছে।বিল যা ওঠে উঠুক দিয়ে দেবে।সময়টা অড বলেই স্ট্যান্ড থেকে নেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি।বসের অফিসে ক্লাইয়েন্টকে পৌঁছে দিলেই ওর ছুটি। বন্ধু ততক্ষণে মিথ্যে আর বাড়িয়ে বলা ছেড়ে উগড়োতে শুরু করেছে নিজের অতীত। যে অতীতের সেও ছিল কিছুটা অংশীদার। সেসব ও মনে করতে চাইছিল না,কিন্তু তমাল যেন কোমর বেঁধে এসেছে,সে মনে করাবেই।তমালদের কাকা-জ্যেঠাদের নিয়ে থাকা বিরাট পরিবার।তাদেরই কোনো এক আত্মীয়ের মেয়ে।বয়সে অসীম,তমালদের চেয়ে অনেকটা বড়।ক’টা মাস ছিল পড়াশোনার কারণে।সহেলি দিদি।অসীমই তার আলাপ করিয়েছিল অমুকদার সাথে,যার গাড়িতে অসীম এসেছে।অমুকদার তখনও এত পসার হয়নি,নামও(বলা ভাল বদনাম) হয়নি। ওদের ঘনিষ্ঠতাকে তমালদের বাড়ির কেউই ভালো চোখে দেখেনি।ছেলেটা যে ভালো নয় সেটা সহেলি যখন বুঝতে পেরেছিল,অনেক দেরি হয়ে গেছে।তার আর ক’টা দিন পর থেকেই সহেলি দিদিকে আর পাওয়া যায়নি। তারপর থেকেই তমালদের বাড়ির একে একে সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে গেছে,পালিয়ে গেছে অমুকদার ভয়ে।তমালকে যে অমুকদা শুধু প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছে তা নয়,ওকে চাকরিও দিয়েছে।বিনিময়ে সম্পত্তি অবশ্য গাপ করেছে ধীরে ধীরে।যখন ইমারত উঠিয়েছে সেখানে একটা অংশও দেয়নি।অথচ,তমাল জানে,অসীম তক্কে তক্কে আছে এখানে ফ্ল্যাট নেবে বলে।যবে দক্ষিণ ভারত থেকে সে সব গুটিয়ে এখানে চলে এসেছে, অমুকদাকে সে তোষামোদ করে চলে, হাতে রাখে।শুধু সহেলি নয় তমালের পরিচ্ছেদও জীবন থেকে ছিঁড়ে ফেলেছিল।এখন তমাল কি মতলবে…তমাল শুধু হাসে আর বলে অমুক দা সবটা জানেনা।সহেলি দির সাথে আলাপ তুই করালেও ও যে লোকটা ভাল নয়, সেটাও যে তুইই বলেছিলি…এটা আমিই জানি।এমনকি সহেলি যে মরেনি সেটা অমুকদাও জানেনা,কেননা সে পালিয়েছিল ওর চক্র থেকে আর সেটাতে তুইই সহায়তা করেছিলি সেটাও সে জানেনা।ক্লাইয়েন্ট হাজির।তার সামনে এমন কপালে ঘাম নিয়ে যাওয়া যাবে না।রুমাল বাড়িয়ে দেয় তমাল নিজেই।‘কি চাস কি তুই?’ হিস্যা।পারসেন্টেজ।তুই ফ্ল্যাটে থাক।আমার টাকা হলেই চলবে।অমুকদা কিছুই জানবে না।নিশ্চিন্ত থাক!

রচনাকাল : ১৮/১২/২০২০
© কিশলয় এবং প্রতীক মিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 7  France : 3  Germany : 1  India : 79  Ireland : 7  Romania : 1  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 1  Sweden : 80  
Ukraine : 2  United States : 84  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 7  France : 3  Germany : 1  
India : 79  Ireland : 7  Romania : 1  Russian Federat : 2  
Saudi Arabia : 1  Sweden : 80  Ukraine : 2  United States : 84  
© কিশলয় এবং প্রতীক মিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
পুরোনো বন্ধু by Pratik Mitra is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪২৭৩৮০
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী