অঘ্রানে ধানের খেতে..... সোনা ধানের হাসি
নবান্ন উত্সব অনুগল্প (পঞ্চম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নবান্নের মূল খাবার নতুন চালের ভাত। কত সুন্দর নামের ও ঘ্রাণের স্থানীয় জাতের আমন ধান যে ছিল বাংলার, তা ভাবলে অবাকই হতে হয় এখন। আকাশমণি, কপিলভোগ, কাজলা, কামিনী, কালিজিরা, কাশফুল, কুসুমকলি, ঘৃত শাল, চন্দনচূড়া, চন্দ্রপুলি, চিনি সাগর, জটাশালী, জনকরাজ, জামাইভোগ, ঝিঙে মাল, ঠাকুরভোগ, তিলসাগরি, তুলসীমালা, দাদখানি, দুধকমল, নীলকমল, পঙ্খিরাজ, পদ্মরাগ, বাকশালি, বেগম পছন্দ, ভাদ্রমুখী, মতিহার, ময়ূরপঙ্খি, মানিক শোভা, মুক্তা ঝুরি, রাঁধুনিপাগল, রানি পাগল, রাজভোগ, সন্ধ্যামণি, সূর্যমুখী, হরিকালি, হীরাশাল ইত্যাদি জাতের ধান একসময় উৎপাদন হতো আমাদের এ ভূখণ্ডে।
নবান্নে আমাদের দেশেও বৈচিত্র্যময় খাবার রান্না করা হয়। বরিশালের বিখ্যাত পানীয় মলিদার নাম জানেন সবাই। পানীয়টি মূলত নবান্নে তৈরি এবং খাওয়া হয়, যদিও বেশ ঘটা করে এটি এখন খাওয়া হয় বিভিন্ন সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে। খাবারটির মূল উপাদান নতুন চালের গুঁড়া। এ ছাড়া নারকেলের পানি, নারকেল কোরা এবং গুড় দিয়ে বানানো হয় খাবারটি। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই আছে নিজস্ব খাবার ও পিঠা। হরেক রকম পিঠা খাওয়া হয় নবান্নে ও শীতে। নতুন চালের গুঁড়া পিঠা তৈরির মূল উপাদান।
নবান্নে এসব ধান উঠে গেলে এর নতুন চালে রান্না করা হয় ভাত। নতুন ধানের সুগন্ধি ভাতের ওপর পাকা রুই মাছ কিংবা মাংসের ঘন জাফরান রঙের ঝোল ঢেলে দিলে যে মৌতাত তৈরি হয়, তার তুলনা আর কিছু হতে পারে কি? সঙ্গে যদি থাকে ঘন দুধে রান্না করা পায়েস, এক ফালি গন্ধরাজ লেবু আর পঞ্চব্যঞ্জন তাহলে বাঙালি পৃথিবীর থোড়াই কেয়ার করে।
নবান্নর মূল উদ্দেশ্য সম্ভবত সবাই মিলে এক পঙ্ক্তিতে বসে খাওয়া। সচ্ছল গৃহস্বামী এদিন রাজাই বটে। পরিবার–পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী সবাই আসবে। এদিন কেউ অনাহূত নয়, রবাহূত। রান্না হবে, খাওয়া হবে। বছরের মতো আনন্দে মেতে উঠবে নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবন। এক বাড়িতে নবান্ন শেষ হলে অন্য বাড়িতে নিমন্ত্রণ। আবার ভরপুর আনন্দ, পেটপুরে খাওয়া। রান্নার ঘটা আর খাওয়ানোর সুখ বাঙালির চিরায়ত নবান্নের, এই হলো শাশ্বত দৃশ্য।
রচনাকাল : ১২/১২/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।