অঘ্রানে ধানের খেতে..... সোনা ধানের হাসি
নবান্ন উত্সব অনুগল্প (তৃতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
উত্তরে হিম এখনও খুব একটা পড়তে শুরু করেনি। বাঁশবনে পাতা ঝরা দিন শুরু হয়নি। সোনালি বিষণ্নতা মেখে আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল। কেটে রাখা ধানের খেতের ওপর সন্ধ্যার মুখে ঝুলে থাকা ফিতের মতো কুয়াশার রেখা। পুরো মাঠ, বিল ভরে থাকে নতুন ধানের গন্ধে। এ গন্ধ নিয়ে আসে নতুন পরব, নবান্ন।
দিনক্ষণ খুব একটা নির্দিষ্ট থাকে না। শুধু পঞ্জিকা দেখে একটা শুভ দিনে সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো। এ উৎসবে কেউ অনাহূত নয়, রবাহূত। অবশ্য নিমন্ত্রণ জানানোর আগে ঘটে যায় আরও কিছু ঘটনা। কৃষিকেন্দ্রিক গ্রামীণ জীবনে সে ঘটনা নেহাত সাদাসিধে নয়।
কার্তিকের পোয়াতি ধান পেকে ওঠে অঘ্রানে। প্রকৃতিতে তখন হরেক রং—সবুজ হলুদ হয়ে সোনালি। পেকে ওঠা ধানের দানায় তখন শুভ্র চাল। কৃষকের উঠোনময় ছড়িয়ে থাকে সে ধানের দানা। ব্যস্ততা বাড়ে কিষানির। গোলাঘরে বছরের মতো ঝাড়পোঁছ হয়। মাড়াই করা ধান ওঠে গোলায়। এরপর ব্যস্ততা কমে গেলে সে ধান সেদ্ধ হয়ে তৈরি হয় চাল। নতুন চাল। তত দিনে বাড়ির ভিটেয় বড় হতে থাকে শীতের সবজি। এক শুভ দিনে ডাক পরে আত্মীয়স্বজনের।
নবান্ন অর্থ নতুন খাবার। নব অন্ন। অন্ন অর্থ খাবার, খাদ্যদ্রব্য, আহার্য দ্রব্য; শুধু ভাত নয়। যেহেতু আমাদের অঞ্চলে ভাত প্রধান খাবার এবং ধান প্রধান শস্য, তাই নবান্ন মানে বোঝানো হয় নতুন ধান থেকে ছেঁটে নেওয়া নতুন চালে রান্না করা নতুন ভাত। এ কারণে চলতি অর্থে অন্ন মানে ভাত। তবে একমাত্র ভাতই অন্ন নয়।
রচনাকাল : ১২/১২/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।