ভাইফোঁটা নয় যমদ্বিতীয়া (পৌরাণিক গল্প) পঞ্চম পর্ব
আনুমানিক পঠন সময় : ২ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৬৭৬১ জন পড়েছেন।
Lakshman Bhandary
ভাইফোঁটা নয় যমদ্বিতীয়া (পৌরাণিক গল্প) ষষ্ঠ পর্ব
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কালীপূজা পেরিয়ে গেলেই রাঢ়দেশীয় গ্রামে গ্রামে শুরু হতো যমপুকুর ব্রত। কালীপূজার পরদিনই বাড়ির উঠোনের মাঝখানে এক হাত সমান পুকুর কাটা হয়, যা হল কল্পিত ‘বৈতরণী’। এই হাত খানিক স্কোয়ার পুকুরে থাকে চারটি ঘাট ( উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম) । এরমধ্যে দক্ষিণ দিকের ঘাটে থাকে যমের অবস্থান। কল্পিত এই দক্ষিণ দিকের ঘাট থেকেই যম মানুষকে বৈতরণী পার করেন। 

এই দক্ষিণ দিকেই যমের বামদিকে থাকে যমের স্ত্রী  এবং ডানদিকে থাকে যমের মাসি। উত্তর দিকে অবস্থান করেন জেলে-জেলেনী, যারা মৃত্যুপুকুর থেকে মানুষের আত্মাকে বের করেন জাল ফেলে। পূর্বদিকে থাকে ধোপা-ধোপানী,  স্বর্গের পুকুরে যারা রোজ কাপড় কাচে,  এই ধোপা-ধোপানী বর্ণনা আমরা পাই মনসামঙ্গলে মৃত স্বামীকে নিয়ে বেহুলা স্বর্গে গেলে এমন ধোপানীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। পশ্চিমদিকে আঁকা থাকে কাক,বক ও কচ্ছপের চিত্র।

আদিমতম লোকাচারের মতো এখানেও থাকে ব্রত ও কৃষিজ শস্যের সহবস্থান। তাই হলুদের চারা, কচু লতা ও কলমি শাখ রাখা হয় পুকুরের মধ্যে যমকে নিবেদন করে। এখানে যমকে তুষ্ট করে মানুষ যমের কাছ থেকে আর একটু আয়ুকে বাড়িয়ে নেয়। সাধারণ যম মৃত্যুকে দান করেন তাই লোকজীবনে যমকে তুষ্ট করার জন্যই যমপুকুরে মানুষ যমের পূজা করেন। যার উল্লেখ আছে ভবিষ্যৎ পুরাণেও, সেখানে উল্লেখিত যম নিজেই যমপুকুর ব্রতের প্রচলন করেন। এই ব্রত রেখে ব্রতীরা যমপুকুরে জল ঢালতে ঢালতে বলেন, ” মারণ পক্ষী শুকায় বিল/  সোনার কৌটো রূপোর খিল / খিল খুলতে লাগল ছড়/  আমার বাপ ভাই হোক লক্ষেশ্বর”।

এখানে যমের প্রণতিটা লক্ষণীয়, সন্তান কামনার বার্তাও এখানে বর্তমান। পুরাণের গল্পে যমের এই পূজার দিনই হল যমদ্বিতীয়া। কালক্রমে যা মানুষের লোকাচারে মিশে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার রূপ নেয়, যাতে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা ও যমকে তুষ্ট করতেই ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে বোন বলেন, ‘ ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা ‘। অর্থাৎ মৃত্যুকে ভয়, যমের প্রতি ভয় এবং আদি লোকাচারগুলো আমাদের সমাজে মিলেমিশে একাকার হয়েই নতুন রূপ নিয়েছে উৎসবের। 

তাই লালনের গানে যমের প্রতি এমন সমীহভাব ফুটে ওঠে, ‘ব্রাহ্মণ চণ্ডাল চামার মুচি, এক জলে সবার শুচি, দেখেশুনে হয় না রুচি, যমে তো কাউরে ছাড়বে না ‘। যার বর্ণনা আমরা পাই পুরাণেও। সেখানে উল্লেখিত  মানবজাতি মধ্যে যম  প্রথম ব্যক্তি হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাই দেবতারা তাকে মৃত্যুর দেবতা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যম আর তাঁর ভগিনী যমী, দুজনে জন্ম থেকেই একে অপরের সাথে নিবিড় সম্পর্কে বাস করত।

রচনাকাল : ২২/১১/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 4  France : 1  Germany : 1  India : 77  Ireland : 3  Russian Federat : 11  Ukraine : 4  United States : 70  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 4  France : 1  Germany : 1  
India : 77  Ireland : 3  Russian Federat : 11  Ukraine : 4  
United States : 70  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভাইফোঁটা নয় যমদ্বিতীয়া (পৌরাণিক গল্প) পঞ্চম পর্ব by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৪৭১
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী