ভাইফোঁটা নয় যমদ্বিতীয়া (পৌরাণিক গল্প)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ব“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই
আমার ভাইকে ফোঁটা।।”
ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা ছড়া কেটে বলছে বটে, কিন্তু ঋগ্বেদে যমুনা ওরফে যমী কি আদৌ যমকে ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন? উত্তরটা হল ‘না’। আসুন, ঋগবেদে বর্ণিত যম ও যমীর উপাখ্যানে একটু মনোনিবেশ করি।
যম ও যমী যমজ ভাতৃ-ভগিনী। তাদের পিতা বিবস্বান বা সূর্য আর মাতা আপ্যা ঘোষা বা ঊষা। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দশম সূক্তের চোদ্দটি শ্লোক বলছে, বিস্তীর্ণ সমুদ্র মধ্যবর্তী এক দ্বীপের নির্জন প্রদেশে সমাগম হলেন যম ও যমী। সেখানে যমের সঙ্গে সহবাসের জন্য অভিলাষিণী হয়ে উঠলেন যমী। বললেন, ‘গর্ভাবস্থা অবধি তুমি আমার সহচর। বিধাতা মনে মনে চিন্তা করে রেখেছেন তোমার ঔরসে আমার গর্ভে আমাদের পিতার এক নাতি জন্মাবে’।
কথাটা শুনে যম চিত্রার্পিত হয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে এই পাপকার্যে অসম্মতি প্রকাশ করে তিনি যুক্তি দেখালেন– ‘আমি তোমার সঙ্গে অজাচারে (ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে যৌন-সংসর্গকে অজাচার বলে) লিপ্ত হতে পারব না। কেননা, তুমি সহোদরা। তুমি অগম্যা। আর এই স্থান নির্জন নয়, কারণ মহান স্বর্গধারনকারী দেবতারা পৃথিবীর সর্বত্র দেখছেন’।
যমী কিন্তু নাছোড়বান্দা। তিনি প্রতিযুক্তি দেখালেন, ‘কেবলমাত্র মনুষ্যের পক্ষেই এরূপ সংসর্গ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেবতারা এরূপ সংসর্গ ইচ্ছাপূর্বক করে থাকেন। আমার এখন কাম জাগছে, তুমিও জাগাও। পুত্রজন্মদাতা পতির মতো প্রবেশ কর আমার শরীরে’। যমীর এই যৌন আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেন যম। জানালেন, ‘আমি কদাপি এরূপ কার্য করিনি। আমরা একই পিতামাতার যমজ সন্তান। আমাদের মধ্যে অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমি এরূপ সম্পর্ক স্থাপনে অপারগ’।
যমী কিন্তু নিরস্ত হলেন না। প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন নিজের যুক্তি– ‘আমরা যমজ।গর্ভেই আমরা একত্র শয়ন করেছি। সুতরাং গর্ভাবস্থাতেই আমরা বিবাহিত পতিপত্নীবৎ। নির্মাণকর্তা এভাবেই আমাদের সৃষ্টি করেছে। তাঁর অভিপ্রায় অন্যথা হয় না। আমাদের এ সম্পর্ক পৃথিবী ও আকাশ উভয়ই অবগত’। এরপরেই বাহুদ্বয় প্রসারিত করে আহ্বান জানালেন, ‘হে ভ্রাতা, এসো একস্থানে উভয়ে শয়ন করি। তোমার নিকট নিজ দেহ সমর্পণ করি যেভাবে পত্নী তার পতিকে শরীর সমর্পণ করে। তোমার শরীরে আমার শরীর মিলিয়ে দাও।এসো, রথের চক্রদ্বয়ের মতো এক কার্যে প্রবৃত্ত হই।’
রচনাকাল : ২২/১১/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।