কালী কালী মহাকালী...... কালরাত্রি দেবী চণ্ডিকা জনপ্রিয় লোককথা (প্রথম পর্ব )
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭১ টি দেশ ব্যাপী ২৩৬৪১৭ জন পড়েছেন।
কালী কালী মহাকালী......  কালরাত্রি দেবী চণ্ডিকা
জনপ্রিয় লোককথা (প্রথম পর্ব )
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সবচেয়ে জনপ্রিয় লোক কথা হল, সাড়ে চারশো বছর আগে সোনামুখী ছিল জঙ্গলাকীর্ণ।। আর তাছাড়া সেই সময়কালে বিনিময় প্রথা চালু ছিল। সোনামুখীর তারিণী সূত্রধর নামে এক বৃদ্ধা প্রতিদিন জঙ্গল পথ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে মাথায় ঝুড়িতে করে বড়জোড়ার নিরশা গ্রামে চিড়ে বিক্রি করতে যেতেন।

সেই চিড়ে বিক্রি করে পাওয়া ধান নিয়ে তিনি আবারো পায়ে হেঁটেই সোনামুখী ফিরে আসতেন। যাওয়া-আসার পথে পড়তো একটি খাল। বৃদ্ধা তারিণী সূত্রধর বাড়ি ফেরার পথে সেই খালের পাশে খানিক বিশ্রাম নিয়ে সঙ্গে থাকা চিড়ে মুড়ি খেতেন। সেখানে প্রায় দিনই লাল পাড় শাড়ি পরা একটি ছোট্ট শ্যামাঙ্গী মেয়ে তার সঙ্গে সোনামুখী আসার জন্য বায়না করত।

বৃদ্ধা প্রতিদিনই কিছু না কিছু বলে ওই ছোট্ট কন্যা শিশুটিকে বিরত থাকতেন। শেষে এক দিন সে জেদ ধরে বসল। বৃদ্ধার সঙ্গে সে সোনামুখী যাবেই যাবে। তখন নিরুপায় তারিণী সূত্রধর তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে সম্মত হলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর ওই ছোট্ট মেয়েটি বলে আমি আর হাঁটতে পারছি না।
আমাকে কোলে নাও। কিন্তু মাথায় আর কোলে ধানের ঝুড়ি আর বস্তা থাকায় বৃদ্ধা তার অসহায়তার কথা বললে, ওই শ্যামাঙ্গী এক রত্তি মেয়ে তার মাথার ঝুড়িতেই চাপার কথা বলে। নিরুপায় তারিণী সূত্রধর তাই করেন। পরে তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন ওই মেয়ে তো নেই। তার বদলে রয়েছে দু’টি পাথর। ভয় পেয়ে তিনি সেই পাথর দু’টিকে তুলসীতলায় রেখে দেন।

সেদিন রাত্রেই বৃদ্ধা তারিণী সূত্রধর স্বপ্নাদেশ পান, সেই শ্যামাঙ্গী ছোট্ট মেয়েটি তাকে বলছে “আমার পুজোর ব্যবস্থা কর। তোর বাড়ির আঁকড় গাছের নিচে আমাকে রেখে আয়। আমি মা কালী, তোর ভার বইতে যাতে কোন কষ্ট না হয় তাই এই পাথর রুপে এসেছি।”

ভয় পেয়ে পর দিন সকালে ওই বৃদ্ধা লালবাজার এলাকার মানুষকে সব কথা জানান। সেই সময় ছোঁয়া-ছুঁয়ি আর জাতপাতের ঘটনা এতটাই তীব্র ছিল পুরোহিত পুজো করতে অস্বীকার করেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পুরোহিত। পরে তিনিও স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো করতে রাজি হন।

স্বপ্নাদেশে স্থানীয় জমিদার গিন্নী কাদম্বরী দেবী মন্দির নির্মাণের জন্য এক খণ্ড জমি ও পুজো পরিচালনার জন্য কিছু জমি দেন। তখন থেকেই এই পুজো এলাকার মানুষ পরিচালনা করছেন। বর্তমানে সুদৃশ্য মন্দির তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন সেই প্রথা মেনে আজও সূত্রধররাই কেবল ঘট আনার অধিকারী। এই ঘট সারা বছর মন্দিরে রেখে পুজো করা হয়।

পরে বছর বাৎসরিক পুজোর সময় সেই ঘট বিসর্জন দিয়ে নতুন ঘট আনা হয়। ‘হট্ নগর কালী’র নামকরণ নিয়ে এলাকায় দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, হট্ নামে এক যোগী পুরুষ এই কালীর পুজার্চণা করতেন। তাই এরুপ নামকরণ। আবার কেউ বলেন, মা কালী হঠাৎ এসেছিলেন। তাই হট্ নগর কালী নামকরণ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মা কালীর নির্দেশে যে আঁকড় গাছের নিচে পাথর দু’টি রাখা হয়েছিল সেই গাছ আজও আছে। আশ্চর্য্যের বিষয় সেই গাছে কোন কাঁটা নেই। এমনকি ওই গাছের আদি মূলের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর পাথর দু’টি আজও সেই আঁকড় গাছের নিচে রেখে পুজার্চণা করা হয়।

তবে আশ্চর্য্যের বিষয় ওই পাথর দু’টি ঋতুভেদে রং পরিবর্তন হয়। এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। পরে বর্ধমানের এক সমাজসেবী অজিত সিংহ নতুন মন্দির তৈরি করে দেন। বর্তমানে সেই মন্দিরেই পুজো হয়। এই মন্দির নির্মাণেও অভিনবত্ত্ব রয়েছে। মূল মন্দিরের সামনে রাখা রয়েছে, তারিণী সূত্রধরের মাথায় ধানের ঝুড়িতে চেপে মা আসছেন তার মূর্তি। অন্য দিকে সিদ্ধপুরুষ হট্ যোগীর মূর্তি। সবার উপরে শিব।

রচনাকাল : ১১/১১/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 15  France : 11  India : 94  Ireland : 7  Russian Federat : 10  Sweden : 12  Ukraine : 5  United States : 83  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 15  France : 11  India : 94  
Ireland : 7  Russian Federat : 10  Sweden : 12  Ukraine : 5  
United States : 83  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
কালী কালী মহাকালী...... কালরাত্রি দেবী চণ্ডিকা জনপ্রিয় লোককথা (প্রথম পর্ব ) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৬২৯৯১
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী