করবাচৌথ (একটি প্রচলিত গল্প)
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৬৮৪৬ জন পড়েছেন।
করবাচৌথ (একটি প্রচলিত গল্প)
লেখক- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ব্রত পালনের জন্য উপবাস। পুজোপাঠ। দিনের শেষে চালুনির মধ্য দিয়ে স্ত্রীর চাঁদ দেখা। আর তার পরে স্বামীর মুখ দেখে জল খেয়ে ব্রত ভাঙা! সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে স্বামী যেতেন দূর দেশে, যুদ্ধক্ষেত্রে। পেশায় সৈন্য স্বামীর জন্য উদ্বেগের প্রহর গুনতেন স্ত্রী। তাঁর মঙ্গল কামনায় বিশেষ উপবাস ব্রত করতেন কার্তিক মাসের প্রথম পূর্ণিমার পরে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে। বলিউডের কল্যাণে সেই ব্রত করবা চৌথ (karwa chauth) আজ বহুল প্রচলিত। এখন তো সার্বিকভাবেই বিবাহিত মহিলারা এই ব্রত পালন করেন স্বামীর মঙ্গল কামনায়। এ বছর এই ব্রত পড়েছে ৪ নভেম্বর, বুধবার। কার্তিক মাসের পূর্ণিমার পর চতুর্থ দিন অর্থাৎ চতুর্থীতেই পালিত হয় এই ব্রত। 
স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতের বিবাহিত মহিলাদের মতো এই ব্রত এখন অনেকেই পালন করে থাকেন। ‘

করবা’ অর্থাৎ মাটির পাত্র, ‘চৌথ’ অর্থাৎ চতুর্থী। এই দুয়ে মিলে ব্রতের নামকরণ। এই ব্রতে কড়াইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ব্রত রাখেন, তাঁরা নতুন কড়াই কেনেন। সেখানে রাখেন নতুন কাপড়, কাচের চুড়ি এবং বাড়িতে তৈরি মুখরোচক খাবার ও মিষ্টি। একে অন্যের সঙ্গে সেই কড়াই আদানপ্রদানও করেন তাঁরা। কৃষি সভ্যতার সঙ্গেও এই ব্রত জড়িয়ে। এই সময়েই রবি শস্যের চাষ শুরু হয়। বপন করা হয় গমের দানা। যে বড় পাত্রে গমের দানা রাখা হয়, তাকেও ‘করবা’ বলা হয়। এই ব্রতর রীতি হল, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত ব্রতীরা কিছু খাবেন না। এমনকি, জলপানও নিষিদ্ধ। তাই অনেক প্রদেশেই সূর্যোদয়ের আগে বিবাহিতারা খেয়ে নেন। সাধারণত সেই খাবার তাঁকে বানিয়ে দেন তাঁর শাশুড়ি।

সন্ধ্যায় শুরু হলে হয় আসল উৎসব। গয়না আর নতুন পোশাকে সেজে, মেহেন্দিতে হাত রাঙিয়ে, এক জায়গায় জড়ো হন সবাই, যাঁরা ব্রত রেখেছেন। করবা চৌথ (karwa chauth) -এর পোশাক সাধারণত লাল, হলুদ বা সোনালি রঙের হয়। গান গাওয়া হয় একসঙ্গে। কোনও প্রবীণা বা কোনও পুরোহিত ব্রতকথা পাঠ করেন। আকাশে চতুর্থীর চাঁদ দেখা গেলে তা চালুনির মধ্যে দিয়ে দেখতে হয়। সঙ্গে থাকে প্রদীপ। চন্দ্রদেবতার কাছে স্বামীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন স্ত্রী। তারপর সেই প্রদীপের আলোয় দেখতে হয় স্বামীর মুখ। বরণডালা থেকে জলের পাত্র নিয়ে স্ত্রীর মুখে ধরেন স্বামী। সেই জল পান করেই ভঙ্গ হয় উপবাস।

প্রচলিত রীতি মতো এই ব্রত যখন পালিত হয় কাকতালীয় ভাবে তখন গম বা রবিশষ্য বপণের সময়। বড়মাটির পাত্র যেখানে গম সংরক্ষিত করে রাখা হয় সেগুলিকেও কড়বা বলা হয়। উপবাস এবং ব্রতপালন হত গম উৎপাদন যেন ভাল হয় সেই কামনায়। বিশেষ করে গম উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে। অন্য একটি মত বলছে, আগে ছোট মেয়েদের বিয়ে হয়ে বহুদূরের শ্বশুর বাড়িতে যেতে হত। যোগযোগের অভাবে বাপের বাড়ি থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেন বিবাহিত মেয়েরা। তাঁরা যেন তাঁদের বন্ধু খুঁজে পান সেই কারণেও এই উৎসবের সূচনা হয়ে থাকতে পারে। কেবলমাত্র উৎসব শুরু ধারণা নিয়েই বিভিন্ন মতপার্থক্য নয়, মতপ্রভেদ রয়েছে পৌরানিক উপাখ্যানে বর্ণিত গল্প-কাহিনি নিয়েও। 

একটি কাহিনিতে যেমন রয়েছে রানি বীরবতী-র কথা। কথিত আছে, রাণী বীরবতী তাঁর পিতৃগৃহে এই ব্রত পালন করছিলেন। কিন্তু উপবাসরত বোনের কষ্ট হচ্ছে ভেবে তাঁর সাত দাদা অশ্বত্থ গাছে আয়না রেখে দিলেন। যাতে মনে হয়, আকাশে চাঁদ উঠেছে। আয়নাকে চাঁদ ভেবে ভুল করে উপবাস ভঙ্গ করেন বীরবতী। তার পরেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। শোকে মুহ্যমান হলেও বীরবতী আবার করবা চৌথ পালন করে তাঁর স্বামীর প্রাণভিক্ষা করেন। প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে যমরাজ ফিরিয়ে দেন তাঁর স্বামীর প্রাণ। আবার কোনও লোককথা বলে, ‘করবা’ নামের এক পতিব্রতা নারী ছিলেন। তিনি যমরাজের মুখোমুখি হয়ে কুমিরের গ্রাস থেকে উদ্ধার করেছিলেন স্বামীকে। তাঁর নামেই নাকি এই ব্রতের নামকরণ। আসলে স্বামীর মঙ্গল কামনায় এবং দীর্ঘ আয়ুর জন্য এই ব্রত পালনই মূল উদ্দেশ্য।

রচনাকাল : ৪/১১/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  France : 5  Germany : 1  India : 88  Ireland : 1  Russian Federat : 8  Sweden : 12  Ukraine : 5  United States : 88  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  France : 5  Germany : 1  
India : 88  Ireland : 1  Russian Federat : 8  Sweden : 12  
Ukraine : 5  United States : 88  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
করবাচৌথ (একটি প্রচলিত গল্প) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৫৭৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী