এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে – মা লক্ষ্মীর আবাহন – সমাপ্তি পর্ব
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা, পাঁচালি রচনা ও পাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর তিথি শুরু হচ্ছে ৩০ শে অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৫ টা বেজে ৪৪ মিনিটে এবং থাকছে ৩১ শে অক্টোবর সন্ধ্যে ৮ টা বেজে ৩১ মিনিটে। এই গোটা সময় ধরেই থাকছে পূর্ণিমা। এই সময়ের মধ্যেই ভক্তি সহকারে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করলে, সারা বছর সংসার সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে।
মায়ের পুজো শেষে অবশ্যই ভক্তি সহকারে পাঁচালি পড়বেন। মা লক্ষ্মী আপনার উপর সন্তুষ্ট হবেন। বিশেষত পাঁচালিতে সিঁথি ভর্তি সিঁদুর, হাতে শাখা পলা পড়ে বিবাহিত মহিলাদের মা লক্ষ্মীর পুজো করার কথা লেখা থাকে। তবে মা লক্ষ্মীর পুজো শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলারাই নন, সকলেই করতে পারেন।
কোজাগরী পূর্ণিমায় স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে পুজোয় বসতে হবে। যদিও শাস্ত্রমতে, প্রদোষ কাল, অর্থাৎ সন্ধেবেলাই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর জন্য প্রশস্ত সময়, কিন্তু আজকাল পূর্ণিমা শুরু হয়ে গেলেই পুজো করা যেতে পারে। তবে পুজো শুরু আগে কতগুলি ব্যাপার মনে রাখবেন। এক, তিল, আবির ও চন্দনের ছিটে দিন ফুলের উপরে। তবেই তা শুদ্ধ হবে। যা-যা দেবীকে নিবেদন করবেন, তার উপরে ছোট পানের খিলি সেজে দিয়ে রাখবেন।
• প্রথমে গঙ্গাজল ছিটিয়ে সব শুদ্ধ করে নিন। এবার লক্ষ্মীর আসনের সামনে বা প্রতিমার সামনে একটু গঙ্গামাটি দিয়ে তার উপর গঙ্গাজলপূর্ণ মঙ্গলঘটটি বসান। ঘটের গায়ে সিঁদুর গোলা দিয়ে স্বস্তিক এঁকে দিতে হবে। ঘটের উপরে দিন বিজোড় সংখ্যার আম্রপল্লব। প্রতিটি আম্রপল্লবের গায়েও সিঁদুরের ফোঁটা দিতে হবে। তার উপরে দিতে হবে একটি কাঁঠালি কলা ও একটি হরিতকী।
• এবার পালা ধ্যানমন্ত্রের। ধ্যানমন্ত্র হল...
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-শৃণিভির্যাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
• মন্ত্রটি পাঠ করে কিছুক্ষণ হাত জোড় করে মা লক্ষ্মীকে স্মরণ করে তাঁকে আবাহন করুন।
আবাহন করার মন্ত্রটি হল...
ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ
ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি
ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান
গৃহাণ।
• মঙ্গলঘটের পাশে মা লক্ষ্মীর পা এঁকে তার পাশে একটু গঙ্গাজল দিন। এটি দেবীর পা ধোওয়ার জল। তিনি গৃহে প্রবেশ করার সময় এই জলে পা ধোবেন।
• এবার দূর্বা, আতপ চাল ও একটি ফুল দিন ঘটে। এবার মা লক্ষ্মীকে চন্দন পরান।
• তারপর করুন আরতি। ধূপ-পঞ্চপ্রদীপ-চামর/পাখা-ছোট বস্ত্র ও ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে আরতি করুন। তবে আস্তে করে ঘণ্টা বাজাবেন। মা লক্ষ্মী জোরে ঘণ্টার আওয়াজে ভয় পেয়ে যান!
• এরপর আসবে পুষ্পাঞ্জলির পালা। পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র খুবই সহজ, এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীঁ লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ। তিনবার কিংবা পাঁচ বার অঞ্জলি দিতে হবে।
• এবার প্রণাম মন্ত্র বলার পালা।
এই মন্ত্রে প্রণাম করবেন...
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং নিত্যং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ।।
• এর পরে সকলে মিলে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ শুনতে হবে।
• তারপর কিছুক্ষণ দেবীকে একা থাকতে দিয়ে সকলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যান।
• প্রসাদ খাওয়ার আগে নারকেলের জল খেয়ে উপোস ভাঙবেন।
শারদ পূর্ণিমা তিথি কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা
পাঁচালি কাব্য রচনা - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শারদ পূর্ণিমা তিথি শাস্ত্র মতে কয়,
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বিধিমতে হয়।
সুগন্ধি চন্দন ধূপ প্রদীপ জ্বালায়,
আমের পল্লব এক ঘটেতে সাজায়।
ঘটে দেয় ধান্য দূর্বা আর ফুলমালা,
ফলমূল মিষ্টি দ্রব্য প্রসাদের থালা।
চারিভিতে আলপনা যতেক প্রকার,
ঘৃত মধু গঙ্গা জল নানা উপাচার।
শুদ্ধ চিত্তে এঁয়োগণ বসিয়া আসনে,
বিধিমতে লক্ষ্মীপূজা করে একমনে।
শুদ্ধ বস্ত্র পরিধানা যতেক রমণী,
দেয় সবে উলুধ্বনি আর শঙ্খধ্বনি।
এসো মাগো মহালক্ষ্মী আমাদের ঘরে,
আমাদের ঘরে থাকো চিরদিন তরে।
* বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে- পূর্ণিমা তিথি আরম্ভ- বাংলা তারিখ: ১৩ কার্তিক শুক্রবার ১৪২৭, ইংরেজি তারিখ: ৩০ অক্টোবর, শুক্রবার, ২০২০। সময়: সন্ধ্যা ০৫টা ৪৬ মিনিট। পূর্ণিমা তিথি শেষ- বাংলা তারিখ: ১৪ কার্তিক, শনিবার ১৪২৭, ইংরেজি তারিখ: ৩১ অক্টোবর, শনিবার ২০২০।সময়: রাত ৮টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত। পূর্ণিমার নিশিপালন ও শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজা ১৩ কার্তিক (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার।
* গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে-পূর্ণিমা তিথি আরাম্ভ- বাংলা তারিখ : ১৩ কার্তিক শুক্রবার ১৪২৭। ইংরেজি তারিখ: ৩০ অক্টোবর, শুক্রবার, ২০২০। সময়: সন্ধ্যা ০৫টা ১৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। পূর্ণিমা তিথি শেষ- বাংলা তারিখ: ১৪ কার্তিক, শনিবার ১৪২৭। ইংরেজি তারিখ: ৩১ অক্টোবর, শনিবার ২০২০। সময়: রাত্রি ৭টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত। পূর্ণিমার নিশিপালন ও শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজা- ১৩ কার্তিক (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার।
রচনাকাল : ৩০/১০/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।