কোজাগরী লক্ষ্মী হল দেবীর আরেক নাম, এটি বাঙালি হিন্দুদের জনপ্রিয় একটি উৎসব। লক্ষ্মীর পূজা অধিকাংশ হিন্দুর ঘরেই অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গা পূজার ঠিক চার দিন পরে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা করা হয়। এছাড়া অনেকেই প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করে থাকেন।।
লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
মাটির মূর্তি বানিয়ে লক্ষ্মী পূজা করা হয়। দীপাবলি ও কোজাগরী পূর্ণিমার দিন তাঁর বিশেষ পূজা হয়।এইদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় মা লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। পূজার শেষে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বাড়ির স্ত্রীলোকেরা লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করেন।
বৈদিক লক্ষ্মী কিন্তু শস্য-সম্পদের দেবী ছিলেন না। বরং নদীরূপিনী সরস্বতী শস্যদাত্রী হিসেবে গণ্য হতেন। কেন? কেন আবার, নদী পলি মাটি ভরাট করে উর্বর করত ভূতট। এর পরে তো বৈদিক আর্যরা চাষাবাদ শিখল ‘নিম্নবর্গ’-এর কাছে। সম্পদ এল আর্যদের হাতে। শাসক বা শোষক হলেন তাঁরা।
আবার লক্ষ্মীর স্বামী একটা কাঁচা কাজ করে ফেললেন। কেমন কাঁচা? বেদম কাঁচা।
দুর্বাসা মুনির গোঁসার কথা ত্রিভূবনবাসী জানে। তিনি ভালবেসে ইন্দ্রকে দিলেন পারিজাত ফুলের মালা।
এরপর ইন্দ্র রম্ভা-সম্ভোগে যখন মত্ত, ওই মালা নিজের বাহন ঐরাবতের গলায় ছুঁড়ে দেন। হাতি বুঝবে ফুলের কদর?
সে মালা ছিঁড়ে ফেলল ঐরাবত। দুর্বাসা গেল ক্ষেপে। অভিশাপ দিল। অভিশাপে ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরী হল শ্রীহীন, লক্ষ্মীছাড়া দশা।
স্ত্রী লক্ষ্মী, ইন্দ্রের অনুমতি নিয়ে পাতালে, মানে সমুদ্রে প্রবেশ করলেন। পরে সমুদ্র-কন্যা হয়ে জন্মাচ্ছেন। সেই লক্ষ্মী আরও পরে সমুদ্র মন্থনে উঠে আসছেন অমৃত পূর্ণ কুম্ভ বা কলস নিয়ে। তবে উপপুরাণের অর্বাচীন পৃষ্ঠায় লক্ষ্মী একবার তুলসী, একবার ঘোটকী হয়েও জন্মান।
জ্যোৎস্না প্লাবিত এই পৃথিবীর হেমন্তে আসেন শুধু একটি রাতের অতিথি হয়ে। এসো মা লক্ষ্মী, বসো ঘরে। বাংলার ঘরে ঘরে তার আকুল আহ্বান।
বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার আয়োজন ।
কোজাগরী শব্দটি এসেছে `কো জাগর্তী` থেকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে দেবী লক্ষ্মী ধন-ধান্যে ভরিয়ে দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আসেন। আর ধন-ধান্যের আশায় এই পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়।
শাস্ত্রমতে, দেবী লক্ষ্মী ধন-সম্পদ তথা ঐশ্বর্যের প্রতীক। এ ছাড়া আধ্যাত্মিক ও পার্থিক উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দর্যের দেবীও তিনি। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে এই পূজা করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, লক্ষ্মী দেবী সন্তুষ্ট থাকলে সংসারে অর্থকষ্ট থাকবে না। ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে এদিন লক্ষ্মী মর্ত্যে নেমে আসেন। বাঙালি বিশ্বাসে লক্ষ্মীদেবী দ্বিভূজা ও তার বাহন পেঁচা এবং হাতে থাকে শস্যের ভাণ্ডার। প্রায় প্রতিটি বাঙালি হিন্দুর ঘরে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। এ উপলক্ষে হিন্দু নারীরা উপবাস ব্রত পালন করেন।
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা....... দেবী আবাহন
এসো মাগো বসো ঘরে (ধর্মীয় কবিতা)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শুক্ল পূর্ণিমাতে হয় লক্ষ্মী আরাধনা,
সযত্নে সাজায় ঘট দিয়ে আলপনা।
ধান্যদূর্বা দেয় ঘটে রাখি আম্রশাখা,
দেবীর সম্মুখে ফুল বিল্বপত্র রাখা।
সুগন্ধিত ধূপ দীপ, প্রসাদের থালা,
দেবীর মঙ্গলঘটে শোভে ফুলমালা।
উলুধ্বনি দেয় সবে যতেক রমণী,
জয় মহালক্ষ্মী বলি দেয় জয়ধ্বনি।
ভক্তিভরে পূজি মাগো চরণ তোমার,
জনম জনম থাকো ঘরেতে আমার।
বিধিমতে লক্ষ্মীপূজা হয় সমাপন,
পূজা অন্তে অন্নভোগ করয়ে গ্রহণ।
লক্ষ্মীর পাঁচালি কাব্য শুনে যেইজন,
মা লক্ষ্মী সদয়া হন, কহয়ে লক্ষ্মণ।
মনে রাখবেন:-
* বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে- পূর্ণিমা তিথি আরম্ভ- বাংলা তারিখ: ১৩ কার্তিক শুক্রবার ১৪২৭, ইংরেজি তারিখ: ৩০ অক্টোবর, শুক্রবার, ২০২০। সময়: সন্ধ্যা ০৫টা ৪৬ মিনিট। পূর্ণিমা তিথি শেষ- বাংলা তারিখ: ১৪ কার্তিক, শনিবার ১৪২৭, ইংরেজি তারিখ: ৩১ অক্টোবর, শনিবার ২০২০।সময়: রাত ৮টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত। পূর্ণিমার নিশিপালন ও শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজা ১৩ কার্তিক (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার।
* গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে-পূর্ণিমা তিথি আরাম্ভ- বাংলা তারিখ : ১৩ কার্তিক শুক্রবার ১৪২৭। ইংরেজি তারিখ: ৩০ অক্টোবর, শুক্রবার, ২০২০। সময়: সন্ধ্যা ০৫টা ১৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। পূর্ণিমা তিথি শেষ- বাংলা তারিখ: ১৪ কার্তিক, শনিবার ১৪২৭। ইংরেজি তারিখ: ৩১ অক্টোবর, শনিবার ২০২০। সময়: রাত্রি ৭টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত। পূর্ণিমার নিশিপালন ও শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজা- ১৩ কার্তিক (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার।
রচনাকাল : ৩০/১০/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।