জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি (প্রথম পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। এই উপমহাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যিনি মহাত্মা গান্ধীর নাম শুনেনি। কেউবা তাকে বাপু বলে ডাকতে পছন্দ করেন। ধুতি আর চাদর পরিহিত কালো ছোটখাটো শুকনো মানুষটা ভারতের জাতির পিতা। অহিংস মতবাদ ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রবক্তা গান্ধী। মহাত্মা তার উপাধি। মহান আত্মা যার। উপাধিটি দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আজ আমরা মহাত্মা গান্ধীর জীবনের কিছু অজানা অংশের দিকে আলোকপাত করবো।
গান্ধী কিশোর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। করেছিলেন বললে খানিক ভুল হবে, করানো হয়েছিল। কাস্তবাইয়ের সাথে তার ৭ বছর বয়সেই বিয়ে ঠিক হয়। ১৮৮৩ সালে ১৩ বছর বয়সের গান্ধীকে ১৪ বছর বয়সী কাস্তবাইয়ের সাথে বিয়ের বন্ধনে বেঁধে দেয়া হয়। সেই বন্ধন গান্ধী সারাজীবন অটুট রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, গান্ধীর সকল আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাত্রীও ছিলেন কাস্তবাই। যদিও ৩৭ বছর বয়সে গান্ধী নারী সংসর্গ পরিত্যাগ করেন। বৈবাহিক জীবনে কাস্তবাই এবং গান্ধী ৪ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
ধুতি চাদর পরিহিত নিরামিষভোজী যে গান্ধীকে আমরা জানি তিনি লন্ডনে পড়াশুনাকালীন সময়ে পুরোদস্তর সাহেব ছিলেন। নিয়মিত নাচ এবং বেহালা শিখতেন। কোট টাই পড়ে সাহেবি কায়দার ছড়ি ঘুরাতেন।
গান্ধী সারাজীবনে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন। ইংরেজিতে Experiment যাকে বলে। তার মধ্যে একটি হলো ধুমপান এবং গোমাংস ভক্ষণ। মা পুতলিবাই এবং দেওয়ান পিতার ঘরে গান্ধীর জন্ম। পুতলিবাই ছিলেন কঠিন ধর্মানুরাগী নারী। তিনি প্রতিদিন উপোস করতেন এবং নিরামিষাশী ছিলেন। ধর্মীয় অনুশাসনে গান্ধী বড় হন। যার ফলে গান্ধীর কখনোই কোন বদভ্যাস ছিল না বরং ছোটবেলা থেকেই মা তাকে জীবে দয়া করা, অহিংসা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা শুনাতেন। বিদেশ যাবার কালে মা তাকে পইপই করে শপথ করিয়ে ছিলেন যে তিনি মদ, মাংস এবং নারী হতে বিরত থাকবেন। পরীক্ষা নিরীক্ষাবাদী গান্ধী বড় ভাইয়ের সাথে একবার ধূমপান করলেন কিন্তু ভালো না লাগেনি। এক মুসলিম বন্ধু, শেখ মেহতাব তাকে বুঝিয়েছিলেন যে, ইংরেজরা মাংস খায় বলেই এত বুদ্ধি তাদের, এত দেশ শাসন করতে পারে। আর ভারতীয়রা নিরামিষাশী বলেই এখনো তাদের প্রজা হয়ে আছে। গান্ধী সেই বন্ধুর কথায় প্রভাবিত হয়ে গরুর মাংস খেলেন।
সারাবিশ্বের সকল নেতার অনুপ্রেরণার ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী ছোটবেলায় খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন। তিনি স্কুল শেষ হলে কোন রকমে দৌড়ে বাড়ি চলে আসতেন। কেননা সহপাঠীদের সাথে একেবারেই মিশতে পারতেন না। লজ্জায় মুখে কথাই আসতো না গান্ধীর, আর বন্ধুই বা বানাবেন কিভাবে। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে এসেও গান্ধী সেই মুখচোরাই ছিলেন। ব্যবসায় প্রসার ছিল না। প্রসার হবেই বা কিভাবে? আদালতে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে তার যে পা কাঁপত। বিপক্ষের উকিল কিছু বললে তিনি আমতা আমতা করে কোন উত্তরই দিতে পারতেন না। এমন উকিলকে কে চাইবে? অগত্যা দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দিলেন গান্ধী। ................. ( চলবে)
[আগামী পর্বে শেষ]
রচনাকাল : ২/১০/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।