পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (চতুর্থ পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭১ টি দেশ ব্যাপী ২৩৬৭৮০ জন পড়েছেন।
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (চতুর্থ পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র এবং ১৮৩৯ সালের মধ্যেই বিবিধ বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের পাণ্ডিত্যের জন্য 'বিদ্যাসাগর' উপাধি লাভ করার পরে তিনি দু-বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তাছাড়া প্রতি বছরই তিনি বৃত্তি এবং গ্রন্থ ও আর্থিক পুরস্কার পান। তাঁর পাঠ্যপুস্তকগুলি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, তিনি কেবল লেখাপড়া শেখানোর কৌশল হিসেবে এগুলি লেখেননি, বরং ছাত্রদের নীতিবোধ উন্নত করা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানও তাঁর লক্ষ্য ছিল। যেমন চরিতমালায় তিনি প্রাচীন ভারতের মুনি-ঋষিদের জীবনী লেখেননি, বরং ইউরোপের ষোলোজন বিখ্যাত ব্যক্তির পরিচিতি দিয়েছেন। তেমনি জীবনচরিতে তিনি কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন এবং হার্শেলের মতো বিজ্ঞানীদের এবং উইলিয়ম জোনসের মতো পন্ডিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি লিখেছেন। নীতিবোধেও একই দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে। এতে তিনি আনুষ্ঠানিক ধর্ম এবং আচার-অনুষ্ঠানের কোনো উল্লেখ করেননি, বরং যেসব নীতিবোধ সকল মানুষের থাকা উচিত, তার কথা লিখেছেন। 

কথামালায় তিনি নীতিমূলক গল্প সংগ্রহ করেছেন। আর তিন খন্ড আখ্যানমঞ্জরীতে সংগ্রহ করেছেন ইউরোপ-অ্যামেরিকার (এবং চারটি আরব দেশ ও পারস্যের) সত্যিকার এবং জনপ্রিয় গল্প। এসব গল্পের শিরোনাম—মাতৃভক্তি, পিতৃভক্তি, ভ্রাতৃস্নেহ, গুরুভক্তি, আতিথেয়তা, পরোপকার এবং সাধুতার পুরস্কার—থেকেই বোঝা যায় যে, তিনি কেবল ছাত্রদের নীতিবোধ উন্নত করতে চাননি, সেই সঙ্গে চেয়েছিলেন তাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে। তাঁর পাঠ্যপুস্তকগুলি দীর্ঘদিন বঙ্গদেশের সর্বত্র পাঠ্য ছিল। এগুলোর মাধ্যমে তিনি একই সঙ্গে প্রামাণ্য ভাষা ও বানান যেমন শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন, তেমনি পেরেছিলেন নীতিবোধ উন্নত করতে।
 
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সমাপ্ত শেষ করার পর, ২৯ ডিসেম্বর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার বা প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন। সে সময় তাঁর বেতন ছিল মাসে ৫০ টাকা। সংস্কৃত কলেজের রামমাণিক্য বিদ্যালঙ্কারের মৃত্যুতে একটি পদ শূন্য হলে, তিনি ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। কিন্তু কলেজ পরিচালনার ব্যাপারে সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় তিনি ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই তারিখে সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর এই বছরের ১ মার্চ পাঁচ হাজার টাকা জামিনে, মাসিক ৮০ টাকা বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডরাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এই বৎসরেই তিনি স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধু ও হিতৈষীদের সহযোগিতায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যে স্থাপনা করেন 'সর্ব্বশুভকরী সভা'। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহযোগিতায় তিনি সর্ব্বশুভকরী নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাজে ইস্তফা দেন এবং ৫ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি তারিখে তিনি সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ ছাড়াও কলেজের অস্থায়ী সেক্রেটারির কার্যভারও গ্রহণ করেন। ২২ জানুয়ারি ১৫০ টাকা বেতনে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এই সময় থেকেই সংস্কৃত কলেজে সেক্রেটারির পদটি বিলুপ্ত হয়। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নিয়ে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। 

৯ জুলাই, পূর্বতন রীতি বদলে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়াও কায়স্থদের সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেন। ২৬ জুলাই প্রবর্তিত হয় রবিবারের সাপ্তাহিক ছুটির প্রথা। উল্লেখ্য এর আগে প্রতি অষ্টমী ও প্রতিপদ তিথিতে ছুটি থাকত। ডিসেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজকে সকল বর্ণের সম্ভ্রান্ত হিন্দু সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ২৬ অনুচ্ছেদ সম্বলিত নোটস অন দ্য সংস্কৃত কলেজ প্রস্তুত হয়। ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নিজের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে তিনশো টাকা হয়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের প্রাচ্য ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভেঙে বোর্ড অফ একজামিনার্স গঠিত হয়। বিদ্যাসাগর এই বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন।

রচনাকাল : ৩০/৯/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 5  France : 6  Germany : 1  India : 61  Romania : 1  Russian Federat : 3  Sweden : 84  Ukraine : 4  United States : 68  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 5  France : 6  Germany : 1  
India : 61  Romania : 1  Russian Federat : 3  Sweden : 84  
Ukraine : 4  United States : 68  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (চতুর্থ পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৬৩৩০৯
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী