পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (তৃতীয় পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৬৮৮৭ জন পড়েছেন।
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (তৃতীয় পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবিধ বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের পাণ্ডিত্যের জন্য 'বিদ্যাসাগর' উপাধি লাভ করেছিলেন।পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। স্ত্রীর নাম দীনময়ী দেবী। তাঁর পিতামহের নাম রামজয় তর্কভূষণ। পণ্ডিত হিসাবে রামজয়ের সুনাম থাকলেও, তিনি অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। ভাইদের সাথে মনমালিন্য হওয়ার জন্য রামজয় গৃহত্যাগ করলে, তাঁর স্ত্রী দুর্গাদেবী (বিদ্যাসাগরের পিতামহী) পুত্রকন্যা নিয়ে দুরবস্থায় পড়েন এবং তিনি তাঁর পিতার বাড়ি বীরসিংহ গ্রামে চলে আসেন। এই কারণে বীরসিংহ গ্রাম বিদ্যাসাগরের মামার বাড়ি হলেও পরে সেটাই তাঁর আপন গ্রামে পরিণত হয়। আর্থিক অসুবিধার কারণে দুর্গাদেবী জ্যেষ্ঠ সন্তান ঠাকুরদাস কৈশোরেই উপার্জনের জন্য কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে তিনি অতি সামান্য বেতনে চাকুরি গ্রহণ করেন। পরে তেইশ-চব্বিশ বৎসর বয়সে তিনি গোঘাট নিবাসী রামকান্ত তর্কবাগীশের কন্যা ভগবতী দেবীকে বিবাহ করেন। আর্থিক অনটনের জন্য তাঁর পক্ষে সপরিবার শহরে বাস করা সাধ্যাতীত ছিল। তাই শৈশব ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুরমা দুর্গাদেবীর কাছেই প্রতিপালিত হন।

খুব দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হলেও বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। গ্রামের পাঠশালায় শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। তিনি ছিলেন লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী ও সচেতন। পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় ভর্তি হন। এই পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে সংখ্যাচিহ্ন শিখেছিলেন। এই সময় ঠাকুরদাশ এবং বিদ্যাসাগর কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের বিখ্যাত সিংহ পরিবারে আশ্রয় নেন। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন সোমবার, কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে তিনি ভর্তি হন। ঈশ্বর চন্দ্র সন্ধ্যার পর রাস্তার পাশে জ্বালানো বাতির নিচে দাঁড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন ছাত্রাবস্থায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ ও নদিয়া নিবাসী মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগরের আত্মকথা থেকে জানা যায় মোট সাড়ে তিন বছর তিনি ওই শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতেও ভর্তি হন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি পান এবং 'আউট স্টুডেন্ট' হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা উপহার পান। উল্লেখ্য তৎকালীন সংস্কৃত কলেজে মাসিক বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের 'পে স্টুডেন্ট' ও অন্য ছাত্রদের 'আউট স্টুডেন্ট' বলা হত। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাব্য শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই সময় তিনি শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'পে স্টুডেন্ট' হিসেবে মাসিক ৫ টাকা পেতেন। ১৮৩৪-৩৫ খ্রিষ্টাব্দের বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য তিনি ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক উপহার পান। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অলঙ্কার শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখানে তিনি শিক্ষক হিসাবে পান পণ্ডিত প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশকে। এই শ্রেণিতে তিনি এক বৎসর শিক্ষালাভ করেন। ১৯৩৫-৩৬ বৎসরের বাৎসরিক পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ সংখ্যক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এই কারণে তিনি কলেজ থেকে রঘুবংশম্, সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, মালতী মাধব, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোর্বশী ও মৃচ্ছকটিক গ্রন্থসমূহ উপহার পান। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণিতে। সেই যুগে স্মৃতি পড়তে হলে আগে বেদান্ত ও ন্যায়দর্শন পড়তে হত। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের মেধায় সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরাসরি স্মৃতি শ্রেণীতে ভর্তি করে নেন। এই পরীক্ষাতেও তিনি অসামান্য কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন এবং ত্রিপুরায় জেলা জজ পণ্ডিতের পদ পেয়েও পিতার অনুরোধে, তা প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণীতে। ১৮৩৮ সালে সমাপ্ত করেন বেদান্ত পাঠ। ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল মাসে হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে, ১৬ মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে 'বিদ্যাসাগর' উপাধিটি ব্যবহৃত হয়। এরপর তিনি কৃতিত্বের সাথে 'ন্যায় শ্রেণী' ও 'জ্যোতিষ শ্রেণী'তে শিক্ষালাভ করেন। ১৮৪০-৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'ন্যায় শ্রেণী'তে পাঠ করেন। এই শ্রেণীতে দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে তিনি পারিতোষিক পান। ন্যায় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১০০ টাকা, পদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা, দেবনাগরী হস্তাক্ষরের জন্য ৮ টাকা ও বাংলায় কোম্পানির রেগুলেশন বিষয়ক পরীক্ষায় ২৫ টাকা – সর্বসাকুল্যে ২৩৩ টাকা পারিতোষিক পেয়েছিলেন।




রচনাকাল : ২৯/৯/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 4  France : 4  Germany : 2  India : 54  Ireland : 1  Romania : 1  Russian Federat : 1  Sweden : 83  Ukraine : 5  
United States : 80  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 4  France : 4  Germany : 2  
India : 54  Ireland : 1  Romania : 1  Russian Federat : 1  
Sweden : 83  Ukraine : 5  United States : 80  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (তৃতীয় পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৬৩৬
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী