শরতের ঝরে পড়া শিউলির কথা
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শরতের মতো অসামান্য লাবণ্যবতী শিউলি রাজকন্যা হয়েও জনমদুঃখী। রাজকন্যার নাম পারিজাতক। ভালোবাসল সূর্যকে। কিন্তু সূর্যের প্রেমের শঠতা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করে। তার দেহত্যাগের স্থানে জন্ম নিল একটি গাছ। ফুটল ফুল, মাখন-সাদা পাপড়ির সঙ্গে কমলা রঙের অতুলনীয় বোঁটা। কিন্তু সূর্যের প্রতি অভিমানে ভোরে তার ওঠার আগেই শিউলি ঝরে যায়। বহু রমণীতে আসক্ত পুরুষেরা শিউলির আত্মত্যাগের খুব প্রশংসা করে। বলে, শিউলি মহীয়সী, শিউলি আদর্শ নারী। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর সম্মান এ রকমই। শিউলি রাতের হাওয়া মাতিয়ে রাখে। বাঙালির মর্মে শিউলি অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছে। নামটিও স্নিগ্ধতার প্রতীক। শেফালিকা> শেহালিকা> শেফালি> শিউলি।
রবীন্দ্রনাথ শিউলিকে বলেছেন ‘প্রশান্ত শিউলি’। নজরুলও গানে ‘সন্ধ্যায় ফোটা ভোরে ঝরা’ শিউলির দুঃখের কথা গেয়েছেন। কালিদাস শরতের চাঁদের সঙ্গে শিউলির সম্পর্ক দেখিয়েছেন কবিতায়। একালের পাঠিকা ও পাঠক কী চোখে দেখছেন? শিউলির বৈজ্ঞানিক নামেও সেই বিষাদ, দুঃখ। নিকেটন্থাস্ আরব্রস্ট্রেস্টস্। নিকেটন্থাস্ অর্থ রাতের ফুল।
ওপরের উপকথাটি ভারতীয়। একই রকম গ্রিক উপকথাটি হলো : এক রাজকন্যা, অসাধারণ তার রূপলাবণ্য। রাজকন্যা ভালোবাসল দীপ্তিমান সূর্যকে। সূর্যের প্রেমে রাজকন্যা মাতোয়ারা। এমন ঐকান্তিক প্রণয়ীকে সূর্য একসময় ত্যাগ করল। বঞ্চিত রাজকন্যা অপমানে আত্মহত্যা করল। রাজকন্যার চিতার ছাই থেকে জন্ম নিল এক অনুপম বৃক্ষ। সেই গাছের শাখায় শাখায় রাজকন্যার সব দুঃখ ফুটল ফুলে ফুলে। তার আশ্চর্য হৃদয়ের সব সৌন্দর্য ও লাবণ্য উদ্ভাসিত হলো বর্ণে-গন্ধে-সুষমায়। কিন্তু ফুটল রাতের আঁধারে, সবার অগোচরে। কারণ সূর্যের প্রতি তার প্রবল ঘৃণা, প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা। ভোরের আকাশে সূর্য দেখা দিতে না দিতে সে ঝরে পড়ে। ঘৃণা ও লজ্জায় মুখ ঢাকে মা ধরণীর প্রিয় কোলে। পৃথিবীতে তার শেষ আশ্রয় মা তো আছে, মা-মা-মা।
রচনাকাল : ২৫/৯/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।