মহালয়া-২০২০ স্তোত্রপাঠ ও মায়ের আগমনী গীতিকবিতা
তথ্যসূত্র ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
(শংখধ্বনি)
সঙ্গীতের মূর্ছনা.....
(ভাষ্যপাঠ)
পিতৃপক্ষের অবসানে পর শুরু হয়
দেবীপক্ষের সূচনা। আর তাই এই আগমনে
কোথাও যেন খুশির ঝিলিক মানুষের মনে।
উমা আসলেই দূর হবে সব রকমের দুঃখ, হতাশা।
(স্ত্রোত্রপাঠ)
ইচ্ছং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি।
তদা তদা অবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্॥
(ভাষ্যপাঠ)
পূর্বকল্প অবসানের পর
প্রলয়কালে সমস্ত জগত যখন
কারণ সলিলে পরিণত হল, ভগবান বিষ্ণু
অখিল প্রভাব সংহত করে সেই কারণসমুদ্রে
রচিত যোগ নিদ্রায় হলেন অভিভূত।
যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে
জেগে উঠলেন আদিকল্পের সৃষ্টি বিধাতা ব্রহ্মা।
শ্যামশক্তিমান বিশ্বত্রাতা বিষ্ণুকে জাগরিত
করবার জন্যে কমলযোনি বিধাতাকে মুখপাত্র
করে বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন হরিহর আলাপনে রত।
ব্রহ্মার সম্মুখে নিবেদন করলেন মহিষাসুরের
দুর্বিসহ অত্যাচারের কাহিনী। স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাকুলের
এই বার্তা শুনলেন তারা। শান্ত যোগীবর
মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার
মত রাঙাবরণ ধারণ করল। আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী
নারায়ণের আনন ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল।
তখন মহাশক্তির আহ্বানে গগনে গগনে নিনাদিত হল
মহাশঙ্খ। বিশ্বজ্যোতি রুদ্রের বদন থেকে অপূর্ব
তেজরশ্মি বিচ্ছুরিত করে ধরাধামে নেমে এলেন
আদিশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গা।
(স্ত্রোত্রপাঠ)
ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষটকার স্মরাত্মিকা।
সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যা ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা॥
অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যানুচর্যা বিশেষতঃ
ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবী জননী পরা॥
ত্বয়েধার্যতে বিশ্বং ত্বয়েত্সৃজ্যতে জগত।
ত্বয়েত পাল্যতে দেবী ত্বমস্যন্তে চ সর্বদা॥
...
সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তি প্রদায়িনী।
ত্বং স্তুতি স্তুতয়ে কা বা ভবন্তি পরমোক্তয়॥
সর্বস্য বুদ্ধি রূপেন জনস্য হৃদি সংস্থিতে।
স্বর্গাপবর্গদে দেবী নারায়ণি নমোহস্তুতে॥
যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু চেতন অভ্যিধীয়তে।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।
শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে।
সর্বসার্ত্তি হরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
মায়ের আগমনী (গীতিকবিতা)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
এ শারদ প্রাতে
আজি প্রভাতে
মায়ের বন্দনা গান গাই,
মায়ের আশীষে
আজি প্রত্যুষে
কবিতা লিখিতে চাই।
কবিতার পাতায়
কবিতার খাতায়
লিখেছি কবিতা কত,
কবিতার গাছে
কবিতায় আছে
কবিতা ফুলেরই মত।
কবিতার খাতায়
কবিতার পাতায়
কবিতারা কথা কয়,
কবিতার আসরে
কালোর অক্ষরে
চির বন্দিনী হয়ে রয়।
কবিতার দেশে
কবিতারা এসে
আসরে কবিতা বলে,
আমার কবিতা
তটিনী হইয়ে
আপনবেগেতে চলে।
আমার কবিতা
ব্যথাভরা যত
ব্যথিতের অশ্রুজল,
আমার কবিতা
সরোবরে ফোটা
শত সহস্র শতদল।
আমার কবিতা
বৈশাখ মাসের
নিদাঘ দগ্ধ দুপুর,
আমার কবিতা
শারদ প্রভাতে
মায়ের আগমনী সুর।
আমার কবিতা
শুভ্র মেঘ হয়ে
ভ্রমিয়া ফিরে গগনে,
আমার কবিতা
ফুল হয়ে ফোটা
সাদা কাশফুলের বনে।
কবিতার গাছে
কবিতার পাতা
কবিতারা আশার মুকুল,
চেয়ে দেখো ঐ
কবিতার গাছে
ধরেছে কত শত ফুল।
মায়ের পূজিতে
কিছু নাই দিতে
আমি যে অধম দাস,
মায়ের আশীষে
ভাষা আসে ভেসে
কবিতায় তার প্রকাশ।
এ শারদ প্রাতে
মায়েরে পূজিতে
মায়ের চরণ কমলে,
নিবেদিব আজ
কবি সভামাঝ
কবিতা তরুর মূলে।
বাজুক জয় ঢাক,
শংখ বেজে উঠুক
আজিকে মায়ের আগমনী ।
শারদ প্রভাতে
শুনি দিকে দিকে
দেবীর আগমনে শঙ্খধ্বনি।
রচনাকাল : ১৭/৯/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।