ধারণার এক পাড়
আমরা প্রত্যেক দিন বিরল কাজ করতে ভালবাসিনা তবুও আমাদের গড্ডালিকা প্রবাহের বাইরের কাজ আমাদের মনে এক অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে আসে কিন্তু সেটা সফলতা পাওয়া না পাওয়া পরে ভাবায়। আমরা প্রত্যেক দিন নিজেদের সেসব ছোট খাটো কাজ কিম্বা তার পরিণতি পরিতৃপতির কাছে আমাদের নিয়ে যায়না। শুধু শেষটুকু থেকে আমাদের না পাওয়া গুলো কেই ভাবতে বাধ্য করা মনের একটু কল্পনাকে নিয়েই এই লেখা।
স্বস্তিকের অনাবিল আনন্দের মাঝে পরে থাকা তার সেই একঘেয়েমির জীবন নিয়ে লেখা। সেকি পারবে তার চিন্তন পরিণতি কে জয় করতে !
।।১।।
ছোট বেলায় খেলা যখন জীবন সাথী হয় তখন থেকেই স্বস্তিক শুনেছে জীবন অনেক বড়ো। মানুষ বড়ো হলে সব করতে পারে। জীবনের কাঁটা যখন তার বয়েস ১১ ছুঁয়েছিল তখন তার উপর খেলার দিন চলে গেল। ব্রাহ্মণ সন্তান তাই ১১ তে পৈতে হলো, কিন্তু খেলার দিন গেল কারণ তার বাবা তাকে ডেকে বললো, "বাবু তোমার পৈতে হয়েছে, সংসারের অবস্থা তুমি জানো; আমি কলকাতায় পুজো করি তাও তুমি জানো। এবার থেকে এসব খেলা বাদে পুজোটা শেখো। পড়ার মাঝে বিশেষ পুজোর দিন গুলো তুমি আমার সাথেই কলকাতা যাবে পুজো করতে।"
কলকাতা যাবে সেই ভেবেই আনন্দে মশগুল হলে গেলো স্বস্তিক। জীবনে প্রথমবার সে কলকাতা যাবে, হয়তঃ বা সেই সুযোগে ঘুরতে পেতে পারে। ঘোরার নেশা চোখে লাগতে শুরু করে যখন তার বয়েশ ৭ কিম্বা ৮। বন্ধুদের শুনেছে বাবা মায়েরা ঘোরাতে নিয়ে যায়, প্রত্যেক বছর কেউ কেউ আবার বছরে দুতিন বার ঘুরতে যায়। তাদের মুখে শুনে শুনে দেখতে পায় সব। স্বস্তিক এর মায়ের বড়োই দাবি কম। সংসারে অন্য কারো সাথে তেমন ওনার যোগাযোগ নেই যতটা ওনার বইয়ের সাথে ভালোবাসা। উনি থাকেন নিজের জগতে। মায়ের কেনা দু একটা ভ্রমণ বই আছে; সেটা পড়ে স্বস্তিক জেনেছে অনেক জায়গার কথা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই সব জায়গা। খেলা ধুলা গান বাজনা পড়াশোনা সব উঠতে বসেছে এরকম সময় মায়ের কড়া নজর তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বাধ্য করে। কিন্তু কলকাতা যাওয়ার পর স্বস্তিক এর সব ধারণা বদলে গেল। এখানে এসে ঠাকুর মশাই, ছোট ছেলে তাই লোকে আদর করে, দু একটা মিষ্টি বেশি খাইয়ে দেয় কিন্তু কেউ কিছু বলেনা, ঘোরা ত অনেক দূর; পুজোর সময় বেশি হলে বাহবা দেয় কিন্তু সকাল থেকে উপোস করে বসে থাকলেও পুজো না হাওয়া অবধি জল পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে না। কিছু বলা যাবে না, বাবা মা এর বাধ্য ছেলে সে।
হটাৎ এক দুর্গা পুজো তে হটাৎ তার মনের কথা বুঝে বসলো এক বয়স্ক ভদ্রলোক। নাম গৌরীশংকর, তাকে জেঠু বলে স্বস্তিক। অষ্টমী অঞ্জলীর পর জেঠু বললো স্বস্তিক এর বাবাকে, "দাদা আপনার ছেলেকে আমি বিকেলে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাবো। আপনি না বলবেন না।", বাবা কিন্তু কিন্তু করেও বললেন "বেশ নিয়ে যাবেন। কিন্তু এখানে সন্ধরতি!.... আচ্ছা থাক আমি ম্যানেজ করে নেব।" সেদিনের সেই দুর্গা পুজো দেখতে যাওয়া তার জীবনের অর্থ বদলে দিয়েছিল। জীবনে প্রথমবার, সেই তো শুরু। পড়াশোনা বাড়ির কাজ করা স্কুল যাওয়া আর দুর্গা লক্ষী সরস্বতী পুজো তে পুজো করা বাদে জীবনে নতুন কিছু করার আনন্দ। জেঠু ঠাকুর দেখিয়ে এনে বললো "কি খুশি তো?" চোখে জল আসছিল তবু সেটা তাকে সামলাতে হলো কারণ! পাঠক জানেন আমাদের শেখানো হয় পুরুষের চোখে জল পড়তে নেই। প্রথম রীতি ভেঙে ফেলার আনন্দ তাকে সেই দিকে চেয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল কারণ সে জানতো প্রত্যেক বছর দুর্গাপুজো মানে তার ঘুরতে চাওয়ার একটি বিশেষ পরিণতি।
।।২।।
রচনাকাল : ১৪/৯/২০২০
© কিশলয় এবং অর্ক ব্যানার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।