কষ্ট বিলাস
মোঃ তোফায়েল হোসেন
সময়টা ছিল বড় অদ্ভুত; রাতের শেষ প্রহর আর ভোরের প্রথম প্রহরের ছোঁয়াছুয়ি। পাহাড়ী এক বিশাল উপত্যকায় প্রথম তোমার আমার দেখা। আমি ফেরারী আর তুমি আইন প্রয়োগকারী। ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের আলোয় মুখোমুখি দু’জন। ক্ষণিকের জন্য হলেও থেমে গেল সময়। তারপরও আমি পালালাম। হয়তো তোমার ব্যর্থতা ছিল নয়তো বা তুমি-ই আমাকে সুযোগ দিয়েছিলে।
দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল আরও একটা ব্যতিক্রম সময়ে। ঝড় বৃষ্টির রাত তখন সন্ধ্যাকে বিদায় দিচ্ছিল। তুমি হঠাৎ করে আমার সামনে এসে দাড়ালে অশরীর মতো। অতঃপর চোখাচোখি দু’জনায়। তুমি যেমন করে এসেছিলে তেমন করে চলে গেলে আমাকে আমার মতো রেখে। হয়তো তখন প্রেম এসেছিল ঝড়ো হাওয়ায় নয়তোবা তুমি আমাকে নিয়ে খেলতে চেয়েছিলে।
সেই শুরু। তুমি তোমার দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে আমাকে সৃষ্টি করতে চাইলে। তোমার ভাষায়- আমি অসভ্য! তাই সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাকে স্বপ্ন দেখাতে চাইলে। অথচ তুমি জানলে না- শূণ্য আমিত্বের ওপর দিয়ে অবিরত বয়ে যাচ্ছে প্রবল হাওয়া।
তুমি নিজেকে সাজালে অন্যরূপে। হতে চাইলে প্রেমময়ী। রঞ্জক পদার্থ আর পাউডারে নিজেকে সাজিয়ে বারবার দাড়ালে আমার উন্মুক্ত পৃথিবীতে।
কিন্তুু তুমি হয়তো জানো না- তোমাদের সভ্যতাই আমাকে অসভ্য করেছে। তোমাদের এই প্রেম, এই রূপ-ই আমাকে ফেরারী করেছে। তোমাদের সভ্যতার এই অসার দম্ভ- মেঘাচ্ছন্ন শেষ বিকেলের রোদের মতো হঠাৎ করে আসে। তারপর চলে গিয়ে পৃথিবীটা আরও অন্ধকার করে দেয়।
আমি তোমার কাছে আত্নসমর্পন করি। বলি- আমাকে রশি দিয়ে বেধে নিয়ে যাও আদালতে। কিন্তু কেন জানি তুমি আমাকে করুণা করো। সভ্যতার হাত বাড়িয়ে বর্বরতার মাটিতে মহীরুহের মত ভালোবাসা মেলে ধর। অথচ জানো না তোমরাও সেই মিশরীয়, গ্রীক, রোমানদের মতো একদিন বিলিন হয়ে যাবে। একদিন ইতিহাসের পাতা থেকে পতিত হবে।
তোমার মতো রূপসীরা হয়তো হাসপাতালে রোগী প্রেরণের ঠিকাদারী নিয়েছে! নয়তো বা শুধু তোমাদের জন্য আমরা কেন হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর রং দেখি? তুমি তো এসেছ আমাকে পুড়াতে, হাসপাতালে ঢুকাতে। চাচ্ছ জন্ম দিতে আরেকটা বিকৃত অসুস্থ যুবক। চাচ্ছ পাথরের ওপর সাগরের ফেনা ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো আমিও যেন অন্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি তোমার রূপের আগুন কুণ্ডে।
জেনে রেখো হে কুহকিনীরা- আমি গভীর শোকে নিমজ্জিত হৃদয় নিয়ে অরণ্য ঘেরা পাহাড়ের কোলে শুয়ে থাকতে চাই। আকাশ জুড়ে মেঘের ওড়াওড়ি দেখতে চাই। শুনতে চাই বজ্রপাতের শব্দে ভেঙে পড়া ঢেউয়ের গর্জন। চাইনা তোমাদের করুনা। হয়তো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দাও নয়তো আমার পিছু ধাওয়া করা ছেড়ে দাও। তোমাদের সভ্যতা নিয়ে তোমরা থাক। চাই না তোমাদের উষ্ণ শরীরের শিহরণ। চাই না প্রেম। চাই কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজের কষ্টময় তুচ্ছ জীবনটাকে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে দিতে। প্রকৃতির বুকে কান পেতে তার অনন্ত স্পন্দন শুনে ভুলতে চাই নিজের দুর্দশা। তোমরা কি জানো- তোমাদের বুকের স্পন্দনে কিন্তু তা নেই। তাই প্রকৃতির অদৃশ্য চলমান মহাশক্তির মাঝে নিজেকে বিলিন করতে চাই। প্রকৃতি-ই আমাকে তার বুকে জায়গা দেবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর। কিন্তু তুমি অথবা তোমরা শুধু জন্ম দিতে পারবে। পারবে না প্রকৃতির মতো আমার অথবা আমাদের মৃত দেহটা তুমি অথবা তোমাদের বুকে কবর দিতে।
|||♥||||||||♥||||||||♥||||||||♥|||
রচনাকাল : ১২/৯/২০২০
© কিশলয় এবং মোঃ তোফায়েল হোসেন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।