ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (নবম পর্ব) ভাদুর কাহিনী ও আমার গীতিকবিতা
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

কবি : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৯৮৫ জন পড়েছেন।
ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (নবম পর্ব)
ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভাদু উৎসব ভাদ্র মাসের উৎসব। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিনে ভাদু পুজো হয়ে থাকে। ব্রতের ক্ষেত্রে ভাদ্র মাসের প্রারম্ভেই শুরু হয় মেয়েলি ব্রত। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবং লাগোয়া, বিহার, ঝাড়খণ্ডের দু-একটা জেলায় প্রধানত ভাদু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।


আদিবাসী, সাঁওতালদের মধ্যে করম গান ও উৎসবে পালন করার রীতি রয়েছে বর্ষাকালে। তা-ও বিশেষ ভাবে ভাদ্র মাসে। বর্ষা উৎসবের এই করম গানের হিন্দু সংস্করণ হিসেবে ভাদু গানকে ধরেছেন আশুতোষ ভট্টাচার্য। তিনি ভাদু গানকে আর্যেতর সমাজ উদ্ভূত ধরে, হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতার প্রভাবজাত বলেছেন।


পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশ, আসানসোল মহকুমা, ঝাড়খন্ডের রাঁচি, হাজারিবাগে পালিত হচ্ছে এই উৎসব। কথিত আছে, পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজকন্যা ভদ্রাবতীর বিয়ের দিন বিয়েবাড়িতে ডাকাত পড়ে। সেখানেই খুন হন বরযাত্রী সহ ভদ্রাবতীর স্বামী। আর সেই শোকেই আত্মহত্যা করেন ভদ্রাবতী। এই ঘটনা স্মরণ করেই ভাদু পুজো।


ভাদুর লৌকিক গল্পটি এইরকম:


”বর চলেছে বিয়ে করতে । পালকিতে বরের সাথে বরের বাপ ,বড়ো ভাই। সব মিলিয়ে জনাদশেক বরযাত্রী।  সব মিলিয়ে তিনটে পালকি। সঙ্গে দুজন লেঠেল। সকাল রওনা দিয়েছে ওরা । কনে হল পঞ্চকোট রাজার মেয়ে ভদ্রাবতী।”


”সাত সকালে রওনা দিয়ে মানভূমের মালভূমি আর পাহাড় ডিঙিয়ে জঙ্গল মহলের পথ ধরে পালকি চলেছে। পালকি বেয়ারাদের ‘হুহুম না হুহুম না’ ফিরে ফিরে আসছিল পাহাড় থেকে পাহাড়ে ।  তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছে বেহারাগুলো, সন্ধ্যে নামার আগেই পেরোতে হবে জঙ্গল ।


কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবার মুখে জঙ্গলের সামনে এসে দাঁড়ালো বর যাত্রীর দল। ঠিক হল রাত ভোর হলে ওরা আবার রওনা দেবে। সেইমতো দুটো ভাত ফুটিয়ে নেবার আয়োজন হল। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে। পরদিন খুব ভোরে রওনা দিতে হবে যে। সবে মাত্র দু-গাল ভাত মুখে তুলেছে বেহারাগুলো , একটা অদ্ভুত শব্দে সবাই চমকে উঠল।”


সেই শিস শুনে বেহারাগুলোর চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে উঠল।  ভাতের থালা ফেলে ওরা ছুটে পালাল জঙ্গলের মধ্যে।বরযাত্রীর দল কিছু বুঝে উঠবার আগেই ‘হারে রে রে রে রে’! করে ঝাঁপিয়ে পড়ল ডাকাতদল ।”


,” ভদ্রাবতীর গায়ে হলুদ শেষ। ছাঁদনা তলায় আঁকা হচ্ছে বিয়ের আলপনা । রান্না ঘরের পাশের খোলা উঠোনে সামিয়ানা টানিয়ে চলছে আপ্যায়নের তোড়জোড়। দপ্তরীখানায়  বসে গড়গড়া মুখে  নায়েবের সাথে বরকে বরণ করার তোড়জোর করছিলেন রাজা নীলমণি সিংদেও । বজ্রপাতের মতো খবরটা এল সে সময়ই। বর ও বরযাত্রী সকলেই ডাকাতদের হাতে নিহত হয়েছে। নহবত থেমে গেল। ”


”আর একটা কিংবদন্তী আছে। ছাতনা রাজার সাথে পঞ্চকোটের রাজার যুদ্ধ হয়েছিল ভাদ্রমাসে। তাতে পঞ্চকোটের রাজা জয়ী হন। সেই বিজয়কে মনে রেখেই নাকি ভাদু উৎসব।”


ভাদু গানের আসর  আমার গীতিকবিতা (নবম পর্ব)
কথা - আঞ্চলিক সুর - অপ্রচলিত
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভাদু তুমি চলো ভেলে
কানের ঝুমকা হারায় গ্যালো ধান খ্যাতের অ্যালে।


বাড়ির নামু ধানের খ্যাতে ধারে ধারে জল যেছ্যা,
আমার ভাদু বিটি ছ্যালা তাই ভয়ে জলে নেমেছ্যা।


ভাদু তুমি চল ভেলে
কানের ঝুমকা হারায় গ্যালো ধান খ্যাতের অ্যালে।


উপর পাড়া নামু পাড়া মাঝ পাড়াতে হরির মন্দির,
আমার ভাদু ঘরকে এ্যালে খ্যাতে দিব দুধের খীর।


ভাদু তুমি চল ভেলে
কানের ঝুমকা হারায় গ্যালো ধান খ্যাতের অ্যালে।


চল ভাদু চল সিনাতে যাব পদ্ম দিঘির বাঁধাঘাটে,
পথের ধারে পাটের খ্যাতে চাষীরা সব পাট কাটে।


ভাদু তুমি চল ভেলে
কানের ঝুমকা হারায় গ্যালো ধান খ্যাতের অ্যালে।


আমার ভাদু মান করেছে মানে গ্যালো সারা দিন,
মান করো না ভাদু মনি খ্যাতে দিব মুরগির ডিম।


ভাদু তুমি চল ভেলে
কানের ঝুমকা হারায় গ্যালো ধান খ্যাতের অ্যালে।
রচনাকাল : ১০/৯/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 9  France : 1  Germany : 1  India : 56  Japan : 1  Russian Federat : 5  Senegal : 1  Ukraine : 1  United States : 86  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 9  France : 1  Germany : 1  
India : 56  Japan : 1  Russian Federat : 5  Senegal : 1  
Ukraine : 1  United States : 86  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (নবম পর্ব) ভাদুর কাহিনী ও আমার গীতিকবিতা by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৮৪১
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী